প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহিম। “কলম” সৃষ্টি কর্তার এক অপার রহমত। এ রহমতের কারণেই পৃথিবী এতো বড় বিস্তার লাভ করেছে। সভ্যতা এ কলমেরই সৃষ্টি। সৃষ্টি কর্তা নিজেও “কলমের” শপথের উদ্ধৃতি দিয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সত্য ন্যায়, ইনসাফের পক্ষে এবং অত্যাচার, অবিচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রধান হাতিয়ার কলম। মানবরূপী দানবদের মূখোমুখি দাড়াবো বলে প্রায় ৪০/৪৫ বৎসর পূর্বেই শক্ত হাতে কলম ধরার চেষ্টা করেছিলাম, সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। স্কুল কলেজের দেয়াল পত্রিকা থেকে শুরু করে “গণডাক” নামক সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনার পূর্বেও আমার লেখা আর্টিকেল জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
পরবর্তীতে রাজনীতিতে ব্যাপক সম্পৃক্ততা, জেল হাজত, ২০০১ সন থেকে ২০০৭ ইং পর্যন্ত বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান সহ সরকারী বিভিন্ন দায়িত্ব পালন, ২০০৭-২০০৯ ইং সনে ১/১১ সরকার কর্তৃক ২৬ মাস কারাবরণ, পরবর্তীতে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে প্রায় বৎসর কাল যাবৎ মাঠ পর্যায়ে কাজে কলম চালানোর বিষয়টি ভাটা পড়ে পদ¥া নদীর চড়ের মতো লেখার জগৎ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ২০১১ সনের পর বিবেকের তাড়নায় আবার কলম ধরেছি যা শক্ত হাতে চোখ বন্ধ করে সত্যে প্রকাশের দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার বাসনার সৃষ্টি কর্তার সাহায্য কামনা করেছি। ইতিমধ্যে ৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে, আরো বই প্রকাশনার অপেক্ষায়। কিন্তু আমার কলম এখন আর চলতে চায় না, বার বার থমকে দাড়ায়।
যখন পত্রিকায় দেখি প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য পিতা ও আপন চাচা নিষ্পাপ শিশু তুমিনকে পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে লাস ঝুলিয়ে রাখে তখন কলম আর আমার চলতে চায় না। যখন পত্রিকায় দেখি ভিন্নমত প্রকাশের দায়ে পেইন কিলার খাওয়ায়ে নির্যাতনের পর নির্যাতন করে সহপাঠীদের দ্বারা আবরার খুন হয় এবং একটু পানি চেয়েও সহপাঠীদের থেকে পানি পায় নাই। যখন চিন্তা করি হত্যাকারী সহপাঠীরাও এ দেশের উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী সন্তান যাদের বুয়েটের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াতে পিতা মাতার মাথার ঘাম পায়ে পড়ে, সেই সন্তানদের কার্যবিধির ১৬৪ ধারার ম্যাজিষ্ট্রেডকৃত জবানবন্দী পাঠ করার পর দেশ, জাতি, রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ে লিখতে আমার কলম থমকে দাড়ায়। কারণ যতই লিখি এর সমাধানতো আর দেখছি না, তবে সময় ব্যায় ও পরিশ্রম করে কলম চালিয়ে লাভ কি? ডি.এম.পি উপ-কমিশনারের বক্তব্যে আরো বিষ্মিত হয়েছি। তিনি বলেছেন “আবরারকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিটানোর হয়েছে, নাকি পিটানোর জন্য পিটানো হয়েছে? এটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে” এটা শুধু হতাশার কথা নয়, বরং বিশ্বজিৎ হত্যার আসামীদের (যারা সরকারী ঘরনার নেতা) মত খালাশের কোন বীজ বপন করা হচ্ছে কিনা এ ধারণা থেকেও আমার কলম থমকে দাড়ায়। তোষামোদীতে আমলারা অদ্বীতিয়, কোন অপরাধকে আড়াল করার জন্য আমলাদের কারসাজীতে যে কোন নাটক, এমনকি তাদের সাজানো জজ মিয়া নাটকও নিন্দনীয়। এ ধরনের নাটকের যবনিক টানতে পারি না বলেই কলম ধরতে আর মন চায় না। এ ধরণের নাটক পূর্বেও সমর্থন করি নাই, এখনো করি না। শপথ নিয়ে সাংবিধানিক চেয়ারে বসে জনগণের রক্ত নিংরানো উপার্জিত টাকার বেতন খেয়ে গদি রক্ষার জন্য শপথ গ্রহণকারী আমলারা যখন মিথ্যার পর মিথ্যার বলে যায়, তখন তাদের কুৎষিত চেহারা সৃতিপটে ভেসে আসে বলে এখন আর লিখতে মন চায় না।
রাশেদ খাঁন মেনন নিজে বলেছেন, “আমাকে কেহ ভোট দেয় নাই” এবং এও বলেছেন যে, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি গত নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে নি” এ সত্য প্রকাশের জন্য তাকে সালাম জানিয়ে বলছি, তবে অনির্বাচিত সংসদের সদস্য পদে কেন তিনি শপথ নিলেন? এখন সূর পাল্টিয়ে বলছেন ভিন্ন কথা। সূর পাল্টানো কি তার মত প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদদের মূখে শোভা পায়? তিনিই তো বীরদর্পে বলেছিলেন যে, এ দেশ থেকে ৯ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, এ জন্য তাকে সালাম, এখন তার ভিন্ন সূর তাকে আবার পূর্ব অবস্থায় নিয়ে গেছে। তবে কোন না কোন দিন জনমনে ভোটার বিহীন নির্বাচনের প্রশ্ন প্রকট আকার ধারণ করবে এবং জবাব দিহিতার কাঠগড়া থেকে শেখ হাসিনাসহ অনেকেই বাচতে পারবে না। সরকার, র্যাব, পুলিশ, দুদক দ্বারা দূর্নীতি দমন করছে বলে গলা ফাটাচ্ছে। অথচ তারাইতো দূর্নীতিতে গলা পর্যন্ত ডুবে আছে। ২৯ই অক্টোবর ভোটাধিকারের প্রশ্নে জাতির সাথে যে দূর্নীতি হয়েছে, এর চেয়ে বড় দূর্নীতি আর কি হতে পারে?
বেসিক ব্যাংক লুট হয়ে গেল, দুদক টাকার হদিস খুজে পেলো না, প্রায় দু’ডজন মামলা হলো কিন্তু ব্যাংকের চেয়ারম্যান আসামী হয় নাই। এ টাইকি দুদকের দুর্নীতি দমনের নমুনা? প্রেক্ষাপটে ধারনটি আমার এমনি জন্মেছে যে, দেশটি শুধুমাত্র সরকারী দলের। এ দেশের সকল সম্পদ ও সুযোগ সুবিধা সরকারী দলই ভোগ করবে বাকী সব নাগরিক অপাথ্থেয়। সরকারী দুর্নীতি শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন পত্র ফাসের স্তর অতিক্রম করে এখন পরীক্ষার খাতা বদল নয় পরীক্ষার্থী বদল পর্যন্ত চলে গেছে। সরকারী দলের একজন সংরক্ষিত আসনের মহিলা এম.পি অন্যজনকে দিয়ে বি.এ পরীক্ষা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মহিলা এম.পি’র চেয়ে বেশী দায়ী ঐ সকল দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক, অধ্যক্ষ, কেন্দ্র নিয়ন্ত্রক যারা এ অপরাধকে প্রশয় দিয়েছে এবং এ নি:লজ্জ অপরাধটি সংগঠিত করার জন্য মহিলা এম.পি’কে সহযোগীতা করেছেন তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার। সকল কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা বিভাগের চরম দূর্নীতি শুরু হয়েছে দলীয় অযোগ্য লোকদের নিয়োগের মাধ্যমে।
পত্রিকান্তরে দেখা যায় যে, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্জেলর এখন যুবলীগের সভাপতির প্রার্থী। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রতিদিন রংপুর থেকে চলে আসেন ঢাকাতে টকশোতে অংশ গ্রহণ করে সরকারী দলের সাফাই গাওয়ার জন্য। নিরপেক্ষতার ভান করে সরকারী দলের যখন তারা সাফাই গাইতে থাকেন, দৃশ্যত মনে হয় যে, তাদের মতে বাংলাদেশের জনগণ অত্যান্ত বোকা। নতুবা জনগণের বেতন খেয়ে সরকারের সাফাই গাইতে এমন নিরপেক্ষতার ভান করেন কি ভাবে? পূর্বেও এ ধরনের ভনিতা হয়েছে কিন্তু সরকার যখন বিপদগ্রস্থ হয় তখন আর ভনিতাদের খুজে পাওয়া যায় না।
প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর অসৎ উদ্দেশ্যে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় পিতা ও চাচা কর্তৃক নির্মমভাবে ঘুমন্ত শিশু তুহিনকে হত্যা করে তার কান এবং লিঙ্গ কেটে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখার নৃশংস ঘটনা আরো ঘটনা নিয়ে গভীর চিন্তা করার শক্তি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এমন আরো ঘটনা, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মর্ম মতে “লক্ষীপুরে ১০ টাকা চাওয়ায় ৮ বছরের শিশুকে তার মা গলাটিপে হত্যা করেছে। গত ৯ মাসে হত্যা করা হয়েছে ৩২০টি শিশুকে। সাদারীপুর কালকিনিতে ১৪ দিন বয়সের নবজাতককে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে তার মা।”
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, গত ৯ মাসে আপন মায়ের হাতে নিহত হয়েছে ২৮টি শিশু। এছাড়াও ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে ২৯টি শশুকে এবং ২৩টি শশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। গত ৫ বছরে সারাদেশে ১,৬৩৪টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।
বাগের হাট শহরের বাসাবাটি এলাকায় মোবাইল কিনে না দেওয়ায় “এক নারী (মা)-কে ২০/১০/২০১৯ ইং তারিখে গলাকেটে হত্যা করেছে নিজের মাদকাসক্ত ছেলে।” এ সব ঘটনা কেন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সমাধান জাতি পাবে কোথায়?
লেখক: তৈমূর আলম খন্দকার
কলামিষ্ট ও আইনজীবি (এ্যাপিলেট ডিভিশন)