সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া রাজনীতি করলে দুর্নীতিই তাদের অর্থ আয়ের জায়গা বা ভরসা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এমএ মাজেদ খাঁন। সকালে প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মাজেদ খাঁন বলেন, আপনি সংসারের খরচ মিটাবেন টাকা দিয়ে। আর সেই টাকা আয়ের বৈধ উৎস যদি না থাকে তাহলেই কিন্তু আপনি অন্য কিছু চিন্তা করবেন। সে যেভাবেই হোক আপনার প্রয়োজনে আপনি কিন্তু সেই এবং সহজ পথই বেঁছে নিবেন। এটাই বাস্তবতা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি তুলে ধরেন তার আয়ের উৎস। তিনি জানান, মাজেদ খাঁন ১৮ বছর বয়সে ১৯৮১ সালে সিঙ্গাপুর যান, সেখানে ২ বছর উচ্চ মানের বেতনে চাকুরি করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে যান সৌদি আরবে। সেখানে দীর্ঘ ১০বছরের প্রবাসী জীবনের এক পর্যায় ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েন। সৌদিতে তার নিজস্ব ২টি দোকান ছিল। তার দোকানে অনেক প্রবাসী বাঙালীও কাজ করতেন। প্রবাস জীবনের আয় দিয়ে তিনি গাজীপুর ও উত্তরায় কিছু জমি কিনেন। পাশাপাশি সেখানে অবস্থানের সময় ১৯৯২ সাল থেকে তিনি শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে লোক দিয়ে রেন্টে কার এর ব্যবসা শুরু করেন। ২০০১ সালে সৌদি প্রবাসী চিনা বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় প্রবাসী আয়ের বড় একটি অংশ বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের পার্টস আমদানীর ব্যবসায়। তার মতে তৎকালীন বাংলাদেশে গুটি কয়েক ব্যক্তি এ ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন।
এক সময় দক্ষিণখানের আশকোনায় মাজেদ খান গড়ে তোলেন থ্রি স্টার মানের আবাসিক হোটেল। যা বর্তমান মক্কা আবাসিক হোটেল নামে পরিচিত। তিনি জানান, মক্কা হোটেলের জায়গা ক্রয় ও এর নির্মাণকালীন সময় তিনি বিদেশে অবস্থান করেন।
তাছাড়া, ১৯৮৭সাল থেকে আশকোনায় রয়েছে মাজেদ খাঁনের পৈতৃক পারিবারিক একটি আবাসিক হোটেল। যেটির মালিক ছিলেন মাজেদ খানের বাবা মৃত নাছির উল্লাহ। তবে, আশকোনার নির্মানাধীন তার ৭ তলা একটি ভবন রয়েছে বলে চাউর আছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ভবনটি আমাদের এক নিকটাত্মীয়ের।
মাজেদ খাঁন আরও জানান, তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে শ্রীপুরের এমপি অ্যাডভোকেট রহমত আলীর সাথে ওতপ্রোতভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে যখন ক্রসফায়ারের নামে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করা হতো, তখন দুঃসময়ে যুবলীগে যোগ দেন। পাশে দাড়ান ভীতস্থ থাকা উত্তরার যুব নেতাদের। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি বিরোধী তীব্র আন্দোলনে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অন্যন্যা নেতাদের মতো তিনিও রাজপথে ছিলেন কেন্দ্রীয় সকল কর্মকান্ডে। অংশ নিয়েছেন মিছিল, মিটিং ও সমাবেশে। হাত বাড়িয়েছেন প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহযোগিতার।
মাজেদ খাঁন আরো বলেন, উত্তরায় বিএনপি নেতাদের কোনঠাসা করে রাজপথ দখলের মূখ্য ভূমিকা পালনের কারনে তার নাম সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি জানান, উত্তরার আওয়ামীলীগে তৎকালীন সময়ে তার তেমন কোন দলীয় পদবী না থাকলেও বিএনপি বিরোধী আন্দলনে দীর্ঘ ত্যাগ স্বীকার করায় তাকে দলীয় ত্যাগী নেতার পাশাপাশি উত্তরাবাসীর কাছে হয়েছেন শ্রদ্ধাভাজন। ফলে, উত্তরার স্থানীয় রাজনীতিতে মাজেদ খাঁন এক সর্বত্র পরিচিত মুখ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এমএ মাজেদ খান জানান, তার যে ব্যবসা রয়েছে সেখানে রাজনীতি ঢুকিয়ে কোন লাভ নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া যারা রাজনীতি করে দুর্নীতি ছাড়া তাদের কোন গন্তব্য থাকে না। আর তার এমন কোন ব্যবসা নেই যেখানে মানুষের সাথে প্রতারণা করার সুযোগ রয়েছে।
মাজেদ খাঁনের অর্থের উৎস অনুসন্ধানে উত্তরা আজমপুরের রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেটের ৫ম তলার মোবাইল মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ২০০৭ সালের দিকে যখন রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেটটি আংশিক চালু হয় তখন তিনি তাদের সাথেই রাজউকের নির্ধারিত মূল্যে মার্কেটে একটি দোকান লিজ নেন। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মোবাইল মার্কেটের পূর্ব পাশের অংশ রাজউকের নির্ধারিত মূল্যে লিজ নেন। মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ জানান, ২০০৭-৮ সালে গ্রাহক তেমন না থাকায় এই মার্কেটে তেমন কেউ দোকান লিজ নিতনা। তবে মাজেদ খান ভবিষৎ পরিকল্পনায় হয়ত এখানে একটি রেষ্টুরেন্ট নিয়েছেন। পরপর তিনি আরো ২টি দোকানও লিজ নেন। আর তিনি যে রাজনীতি করেন আমরা কখনও দেখিনি রাজনৈতিক কোন প্রভাব কিছুতে দেখাতে। তিনি রাজনীতিকে রাজনীতির জায়গায় আর ব্যবসাকে ব্যবসার জায়গায় সব সময়ই রাখেন।
এলাকায় চাউর আছে, তুরাগ থানার দলিপাড়া এলাকায় আপনার ৫ তলার একটি বাড়ি আছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার শশুর সরকারি চাকুরি করতেন। তার শশুড়ের ১ ছেলে ও ২ মেয়ে। তার স্ত্রী মায়ের ওয়ারিশ হিসেবে তার গ্রামের বাড়ী কুমিল্লার সম্পত্তি বিক্রি করে এবং তিনি (মাজেদ খাঁন) প্রবাসে থাকাকালীন তার বাবা গাজীপুরে কিছু সম্পত্তি রাখেন তা বিক্রি এবং আশকোনার বাড়ীকে আবাসিক হোটেল করে ভাড়া দিলে জামানত হিসেবে পাওয়া ৩০ লাখ টাকা এবং তার জমানো মাসিক ভাড়া দিয়ে ২০১৩ সালের দিকে বাড়ীটি করেন। ২০১৬ সালে বাড়ীটি বিক্রি করে আমরা ৫নং সেক্টরের আবাসিক এলাকায় বাড়ী করি। ২০১৮ সালে প্রাইম ব্যাংকে আমাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির কাগজপত্র জমা রেখে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যাংক লোন নেন। ব্যাংক লোন এবং আমাদের মাসিক জমানো টাকা দিয়ে উত্তরা ১০নং সেক্টরে ৮তলার একটি বাড়ী নির্মাণাধীন।
তিনি বলেন, ব্যবসা হালাল। এখানে রাজনীতি টেনে আনার কোন প্রশ্নই আসেনা। তার বা তার পরিবারের উপার্জিত সম্পদ শ্রম ও মেধায় তৈরি। তার বা তাদের কোন ডেভোলোপার ব্যবসা নেই। শুধু তাই নয়, রাজনীতি সাথে থাকলে ফায়দা নেয়া যায় এমন কোন ব্যবসার সাথে তার পরিবার জড়িত নয় বলে দাবি করেন।
তিনি আরও জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে রাজনীতি করে আসছে। কোন সু-সময়ে রাজনীতিতে যোগদান করেননি যে তিনি দুর্নীতির ঘটনা ঘটবেন। তাছাড়া তিনি কোন অনুপ্রবেশকারীও নয়। তিনি ঢাকা ১৮ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের একনিষ্ঠ তৃনমূল কর্মী হিসেবেই কাজ করে আসছেন। তারই (সাহার খাতুন) অনুপ্রেরনায় ২০১৬ সালে শ্রমিকলীগে যোগ দেন। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন থানায় এমনকি স্থানীয়ভাবে কোন কারণে কোন দিন দেন-দরবারেরও কোন অভিযোগ নেই।
২০০৪ সালে যুবদলের এক নেতা হত্যা মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাজেদ খাঁন বলেন, বিএনপি-যুবদলের নেতা তাদের কোন্দলে খুন হয় মহিউদ্দিন বাদল। ওই মামলার এক আসামী ১বছর পর গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ওই মামলায় মাজেদ খান জড়িত আছে বলে অপচেষ্টা করে স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক স্বার্থলোভী ব্যক্তি। এমনটাই দাবি করেন মাজেদ খাঁন।