সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনে দ্বিতীয় বারের মতে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি জাতীয়পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদ থেকে ইতিমধ্যে অব্যাহতি নিয়েছেন। এর আগে কেন্দ্রীয় যুব পার্টির আহ্বায়ক ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এতেই হাপিয়ে ওঠেছেন জাতীয় পার্টির এই নেতা। যদিও তার কাছে জাতীয় পার্টির চেয়ে আওয়ামী প্রীতিই দেখা যায় বেশি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জীবদ্দশায়ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির নেতার নাম মুখে না দিলেও আওয়ামীলীগের নেতাদের নাম সব সময় নিতেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা ভোটেই হয়েছেন এমপি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও অনেকটা নাটকীয়তায় তিনি এখনও এমপি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বেশকটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, একটি ওয়ার্ডের মেম্বার হওয়ারও যোগ্যতা এমপি খোকার নাই। এবার এমপি সব ধরণের রাজনীতিকে বিদায় জানানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
জানাগেছে, রাজনীতি ছেড়ে অবসরে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। ৯ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় সোনারগাঁও পৌরসভার রয়েল রিসোর্টে সন্ত্রাস মাদক ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ ও দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর সুখী সোনারগাঁ গড়ার লক্ষ্যে সোনারগাঁ উপজেলার সকল সরকারী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি নিয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
এমপি বলেন, আমি সোনারগাঁয়ে এমপি নির্বাচিত হওযার পর আপনাদের নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা বের করে সে সব সমস্যা সমাধানে আপনাদের নিয়ে কাজ করেছি। সেই লক্ষ্যে আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত সোনারগাঁয়ে কিভাবে উন্নয়নের রোল মডেল তৈরী করা যায় সেজন্য সকলের মতামত নেয়ার জন্য আপনাদের আমন্ত্রন জানিয়েছি। আজকের আলোচনা সভাটি একটি গুরুত্বপুর্ন সভা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কথা দিয়েছেন দেশের প্রত্যেকটি গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করা হবে। সে লক্ষ্যে আমি আপনাদের নিয়ে গত ৬টি বছর সোনারগাঁয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। কালভাট ব্রীজ রাস্তাঘাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছি। সোনারগাঁয়ে ৭০/৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন হয়েছে। মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ৩১ ভবন হয়েছে। এ সব হয়েছে আপনাদের জন্য। সেজন্য আমরা আগামী ৫০ বছরের জন্য একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা জন্য আপনাদের মতামত আমরা নিচ্ছি। আপনারা আপনাদের এলাকায় কি কি সমস্যা আছে, কি ভাবে করলে তার সুফল জনগণ পাবে সে ব্যাপারে মৌখিক ও লিখিত আকারে আমার কাছে দিবেন। সেই সমস্যাগুলি লিপিবদ্ধ করে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করবো।আশা করি আমরা সকলে যদি একত্রে কজি করি তাহলে আমোদের স্বপ্ন বাস্তবায়ক করতে সময় লাগবে না।আমার ইচ্ছা আগামী ৪ বছর পর সোনারগাঁকে স্বপ্নের মতো সাজিয়ে সকল প্রকার রাজনীতি থেকে অবসর নিবো। তাই অবসর নেয়ার আগে আপনাদের এলাকার উন্নয়নগুলো শেষ করতে চাই। এমন ভাবে উন্নয়ন করতে চাই যাতে আগামী ৫০ বছর এর সুফল সোনারগাঁবাসী ভোগ করতে পারে।
এসময় তিনি মাদকের কথা উল্লেখ করে জনপ্রতিনিধিদের বলেন, আপনারা নির্বাচনে জয় লাভ করেছিন জনগনের ভোটের মাধ্যমে। সেজন্য জনগনের কাছে আপনাদের অনেক দায়বদ্ধতা আছে। আপনার এলাকায় কে কে মাদক ব্যবসা করে তাদের ব্যাপারে আপনারা অবগত।কিন্তু আপনারা কখনো একজন মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিতে পারেনি। কারন আপনারা মনে করেন নির্বাচনের সময় মাদক ব্যবসায়ী আপনাদের ভোট দিবেন না। কিন্তু আপনারা একটা জিনিস ভুলে যান। সমাজে ভাল মানুষের সংখ্যা ৯৫% আর খারাপ মানুষের সংখ্যা ৫%। তাহলে এখন ভাবেন ৫% খারাপর লোক আপনাদের ভোট না দিলেও ৯৫% ভাল মানুষ আপনাদের ভোট দিবে তাহলে কোনটা ভাল। এভাবে সমাজে কাজ করলে সাধারণ জনগন আপনাদের এমনিতেই ভোট দিবে। আর উন্নয়ন তো আমি করবো আপনাদের হয়ে করব।
তাছাড়া বাল্য বিবাহের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে অনেক জনপ্রতিনিধি বাল্য বিবাহ দেয়ার সাথে জড়িত। তারা তাদের আত্মীয় স্বজনদের ব্যাপারে বাল্য বিবাহকে বৈধ মনে করেন। কিন্তু অন্যের ব্যাপারে অবৈধ। এমনটি কখনও করবেন না। এতে জনগনের মনে নৈতিক প্রভাব পড়ে। তারা ভাবে আমি গরীব বলে আমার মেয়ের বাল্য বিবাহ হয় না তারা বড়লোক বলে তাদের বাল্য বিবাহ হয়। এতে আপনারা ও প্রশাসন প্রশ্ন বিদ্ধ হয় এমন কাজ করা যাবে না।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকারের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী (ভুমি) মোহাম্মদ নাজমুল হোসাইন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডাঃ হালিমা সুলতানা হক, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর, মাহমুদা আক্তার ফেন্সী, সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির, কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলার জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ডালিয়া লিয়াকত, বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল হক, সনমান্দি ইউনিয়নর পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ, পিরোজপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডাঃ রউফ, নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউসুফ দেওয়ান, শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার, উপজেলা প্রকৌশলী হায়দার আলী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর ইসলাম, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ইয়াসিনুল হাবিব, জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন, উপজেলা ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলিটেটর অফিসার শাহনাজ আক্তার আচল প্রমূখ।