ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় কালাম ও এটিএম কামাল!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে দলীয় গঠনতন্ত্র বহির্ভুত গোজামিল মনগড়া কমিটি নিয়ে এসেছেন সাবেক এমপি আবুল কালাম ও এটিএম কামাল। গোজামিলের এই কমিটি টিকিয়ে রাখতে আরেক নেতার উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন তারা। মুলত আবুল কালাম নির্বাচন কেন্দ্রীক রাজনীতি করায় তার আসনভিত্তিক সুবিধার বিষয়টি চিন্তা করে গোজামিলের মহানগর বিএনপির কমিটি নিয়ে আসেন। দলের গঠনতন্ত্রে আসনভিত্তিক কমিটি গঠনের কোন নিয়ম নেই। ফলে এ কমিটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বিএনপির দুই নেতা। সেই দায় এখন মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের উপর চাপানোর চেষ্টায় নেমেছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির একটি বর্ধিত সভায় মুল আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠেন সাখাওয়াত হোসেন খান। যাকে বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাবনা গৃহিত হয়। অথচ সেই মামলার বাদী গোলজার হোসেনের রাজনীতি মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের হাতেখড়ি যার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তারা। যে কারনে মহানগর বিএনপির বেশকজন নেতা বলেছেন, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন কালাম ও কামাল। দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ড থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা যা মহানগরীর মুল এলাকা সেই এলাকা বাদ দিয়ে গঠন করা গোজামিল মনগড়া কমিটি বাঁচাতে এখন সাখাওয়াতের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন কালাম ও কামাল।

১৭ নভেম্বর রবিবার রাতে মহানগর বিএনপির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় মহানগর বিএনপির এক সভায় দলের সাংগঠনিক বিষয় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত এবং বিবিধ বিষয় নিয়েও সিদ্ধান্ত হয়।

অন্যদিকে জানাগেছে, দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ স্থানীয় আরও ৪ নেতার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন বিএনপির দুই নেতা। মামলায় তারা অভিযোগ করেন-নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এলাকা অর্থাৎ মহানগরীর ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কোন নেতাকেই রাখা হয়নি।

এই মামলায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে মোকাবেলা বিবাদী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও সেক্রেটারি এটিএম কামালকে মুল বিবাদী করা হয়।

গত ১৩ নভেম্বর বুধবার রাতে আদালত থেকে এ সংক্রান্ত নোটিশ বিবাদীদের হাতে পৌঁছানো হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলজার খান ও একই ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক (সাবেক পৌর এলাকা) বিএনপি নেতা নূরে আলম শিকদার বাদী হয়ে সিনিয়র সহকারি জজ শিউলী রানী দাসের আদালতে মামলাটি করেন।

এরপর একইদিন শুনানি শেষে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে কেন কমিটি অবৈধ হবে না জানিয়ে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন আদালত। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সীমানা ও গঠনতন্ত্র মানা হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেন বিএনপির ওই দুই নেতা যারা মামলার বাদী।

জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সেক্রেটারি করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর আংশিক কমিটি গঠন করা হয় এবং একইদিন কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সেক্রেটারি করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এরপর চলতি বছরের ২৩ মার্চ ২০৫ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও গত ৩০ অক্টোবর ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহারগর বিএনিপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত রাখা হয়। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা।

কমিটি গঠনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মুল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দশটি ওয়ার্ডকে জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড রয়েছে। জেলা বিএনপির আওতাধীন এলাকা বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন, সদর মডেল থানার আরও দুটি ইউনিয়নকে মহানগর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সময় স্থানীয় নেতারা দাবি করেছেন- জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন ভিত্তিক সুবিধার বিষয়টি হিসেবে করেই দুটি কমিটি গঠন করা হয়। তবে দলের গঠনতন্ত্রের কোথাও আসনভিত্তিক কমিটি গঠনের কোন নিয়ম নেই।

গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কমিটি গঠন করায় বিএনপির অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মধ্যেও বিরোধ সৃষ্টি হয়ে যায়। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর বর্তমান মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মুছা সিদ্ধিরগঞ্জে একটি অনুষ্ঠান করতে গেলে যুবদলের অপর অংশের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হন। তারা দাবি করেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাটি জেলা যুবদলের আওতাধীন। এ নিয়ে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সহ বেশকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মহানগর যুবদলের নেতা মঞ্জুরুল হক মুছা। ২০ নভেম্বর তৎকালীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি যেভাবে হয়েছে একইভাবে অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করতে হবে।

কিন্তু রিজভীর এই নির্দেশনা মানেনি নারায়ণগঞ্জ যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিকদল। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার নেতাদের রেখেই মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন করা হয়। একইভাবে মহানগর ছাত্রদল ও শ্রমিকদলের কমিটিও গঠন করা হয়। যেখানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা থেকে মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু, মহানগর ছাত্রদলের সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবু ও মহানগর শ্রমিকদলের আহŸায়ক এসএম আসলামকে রাখা হয়। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দশটি ওয়ার্ড জেলা বিএনপিতে রাখা হয় যেখানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহামুদ জেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পান। তবে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রিজভীর নির্দেশনা মানা হয়। ছাত্রদল যুবদল শ্রমিকদলের কমিটি গঠনতন্ত্র মেনেই গঠন করা হয়। যে কারনে মহানগরীর সংগঠনগুলো মাদার সংগঠনকে অনুসরণ করছে না।

এমন বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত মহানগর বিএনপির জরুরী সভায় সম্প্রতি আমেরিকা থেকে ফিরে আসা এটিএম কামাল বলেন, আমরা একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সদস্য, আমরা নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছি। দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সবাইক ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ১ম সহ-সভাপতির পদ পয়েছেন, যা অত্যান্ত গৌরবের ও মর্যাদার। কিন্তু তা উপলব্দি করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আমি বিভিন্ন সময় তাকে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করেও তার কোন সাড়া পাইনি। বিভিন্ন সময় এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস ছালাম আযাদের সামনে অ্যাডভোকেট শাখাওয়াতকে হোসেন খানকে ফোন করে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের অনুরোধও করেছি। কিন্তু তারপরেও তিনি আসেন নাই।

সভার সিদ্ধান্ত মতে জানানো হয়, ৪৫ দিনের মধ্যে ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর কমিটি গঠনকল্পে আগামী সাতদিনের মধ্যে ৫/৭ জনের ওয়ার্ড সম্মেলন সমন্বয় কমিটি দঠন করার প্রস্তাব পেশ করেন। কমিটির ১ম সহ-সভাপতি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের মধ্যে কোন্দল এবং উপদল সৃষ্টি করেছে। সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে দলীয় শৃংখলা ভংগের যে অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ উপস্থাপন করেছেন, তা শতভাগ সত্য হওয়ায় তার প্রতি সর্বসম্মিতিক্রমে অনাস্থা জ্ঞাপন করা হয় এবং ১ম সহ-সভাপতি পদ থেকে দলীয় শৃংখলা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে তাকে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি নিকট সুপারিশের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। নারায়ণগঞ্জ মহানগর এলাকার অন্তর্ভক্ত যে সকল অঙ্গ সংগঠন মূলদলের সাথে সমন্বয় করেছেনা সেই সকল অঙ্গ সংগঠনের ব্যাপারে কেন্দ্রকে অবহিত করার প্রস্তাব উপস্থান করা হয়।

সভায় সভাপতি আবুল কালাম বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি, থানা কমিটি এবং মহানগর কমিটি করা আমাদের জন্য অগ্নি পরীক্ষা। আমাদের উপরে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব বের করে নিয়ে আসা জন্য। তৃণমূল তার নেতৃত্ব বেছে নিতে পারবে। এই বেছে নেয়ার সুযোগটা আমরা করে দিব। আমরা নিরপেক্ষভাবে সুন্দর সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি, থানা কমিটি এবং মহানগর কমিটি গঠন করবো। এটাই হচ্ছে আমাদের শপথ-ইনশাল্লাহ।

এতপর মহানগর বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক পেশকৃত উপরোক্ত প্রস্তাবগুলো অনুমোদনের জন্য উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মতামত আহবান করলে, সভায় উপস্থিত নারায়ণগজ্ঞ মহানগর বিএনপির সভাপতি মন্দলী, সম্পাদকমন্ডলী ও সদস্যবৃন্দ তা সর্বসম্মিতিক্রমে অনুমোদন করেন বলেও জানানো হয়।