সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ চলে যাওয়ার পর আওয়ামীলীগের কিছু অংশের নেতাকর্মীদের মাঝে অনেকটা উৎসব ভয়ে যায়। অনেক সন্ত্রাসী দুুষ্কৃতকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এসপি হারুনের সময় যা কল্পনা করাও দুরহ ছিল সেই কাজটি করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী। থানার ভেতরে এক অভিযোগকারীকে মারধর করেছেন তিনি। এ ঘটনায় এবার তাকে আসামি করেই মামলা ঠুকে দিয়েছেন ওই মারধরের শিকার আরেক অভিযোগের বাদী।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা মডেল থানায় কুতুবপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী মীর হোসেন মীরুর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে আসলে ওই বাদীকে মারধর করে থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) অফিসারের সামনে ধরে নিয়ে যান মীর সোহেল আলী। ওই সময় সরকারি দলের নেতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যায় তদন্ত পরিদর্শক হাসানুজ্জামান। তবে তারও শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে পুুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে।
১৭ নভেম্বর রবিবার দুপুরে মারধরের শিকার ব্যবসায়ী চাঁদ সিকদার সেলিম বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আওয়ামীলীগ নেতার পক্ষ নিয়ে ভুক্তভোগীকে চাপ সৃষ্টি করায় রবিবার সকালে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসানুজ্জামানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন।
মামলা সূত্রে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর উপজেলার ফতুল্লার কুতুবপুরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মীর হোসেন মীরুর সন্ত্রাসী বাহিনী কুতুবপুর ইউনিয়নের বউবাজার এলাকায় মুরাদ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই মুরাদ বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শক করেন এবং পরদিন শুক্রবার রাতে তাদেরকে থানায় যেতে বলেন।
পুলিশের কথা অনুযায়ী অভিযোগকারী স্থানীয় ব্যবসায়ী মুরাদ হোসেন ও তার ছোট ভাই ব্যবসায়ী সেলিম থানা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করার সময় মীর সোহেল আলী ও শাহীন সহ আরও বেশ কয়েকজনের দেখা হয়। মীর সোহেল আলী ও তার লোকজন সেলিমকে থানার ভেতরে দেখেই উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং শার্টের কলার চেপে ধরে হামলা চালায়।
এক পর্যায়ে মারতে মারতে থানা থেকে রাস্তায় নিয়ে আসে। আবার সেখান থেকে টেনে হেঁচড়ে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসানুজ্জামান রুমে নিয়ে যায়, থানার লকাবে ঢুকিয়ে দেয়ার কথা বলেন মীর সোহেল আলী। এ সময় ওসি তদন্ত হাসানের রুমে নেওয়ার পর তিনি আমাকে উল্টো ধমকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন থানায় আপনার কাজ কি? কেন এসেছেন? এভাবে পরিদর্শক তদন্ত মীর সোহেল আলীর পক্ষ নিয়ে সেলিমকে শাসায়।
এ বিষয়ে চাঁদ সিকদার সেলিম বলেন, এর আগে মীর হোসেন মীরুর বিরুদ্ধে আমার বড় ভাই মুরাদ হোসেন চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছিল। এ বিষয়ে কথা বলতেই শুক্রবার থানায় গেলে আমাকে পেয়ে মীর সোহেল আলী ও তার লোকজন আমাকে থানার ভেতরে এলোপাথাড়ি মারধর ও হামলা চালায়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এভাবে থানার ভেতরই যদি আমাদের ওপর হামলা করে তাহলে বাইরে আমাদের নিরাপত্তা কতটুকু এবার বুঝে নেন। এদিকে এই ঘটনা গণমাধ্যমে আসলে প্রশাসনের তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কুতুবুপুরে এলাকাবাসী অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
এই ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ব্যবসায়ী সেলিম বাদী হয়ে রবিবার দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানায় মীর সোহেল আলী ও তার সহযোগী শাহীন মিয়ার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০/১৫ জনকে আসামী করে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মীর সোহেল আলীর সাথে করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, মারধর নয়, বাগবিতন্ডার ঘটনা ঘটেছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চরছে। পুলিশের পরিদর্শক হাসানুজ্জামানের প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এতটুকু বলতে পারি হাসানুজ্জামানকে প্রশাসনিক কারণে থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু বলার আমাদের অনুমতি নেই।