সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
সম্প্রতি গঠিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কিন্তু এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যেসব নেতারা রাজপথে সক্রিয় ভুমিকা রাখেন তাদের মধ্যে দু’চারজনের ঠাঁই মিললেও বাকিদের ঠাঁই মিলেনি। সক্রিয়দের অবমূল্যায়ন করে যারা নারায়ণগঞ্জে প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ জাতীয়পার্টির পক্ষে নির্বাচন করেছেন এবং রাজনীতি করছেন তাদেরকে রাখা হয়েছে শীর্ষ পদে। যারা প্রকাশ্যে ধানের শীষ প্রতীকের বিরোধীতা করেছেন তারাও রয়েছেন বিএনপির কমিটির বড় পোস্টে। বিএনপির পূর্ণাঙ্গ এই কমিটির সভাপতি আবুল কালাম হলেন এক এগারোর সময় ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে অন্যতম সংস্কারবাদী। সেক্রেটারি এটিএম কামাল ছিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব। তখন তিনি তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করাই ছিল তার প্রধান কাজ।
সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নাম এসেছিলেন নাজমুল হুদার গঠিত বিএনএফ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে। যে কারনে কর্মীরা বলছেন- যখন এরাই বিএনপির কমিটির নেতৃত্বে আসছেন তাহলে রাজপথে সক্রিয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পাবেন না এটাই স্বাভাবিক। এসবের সঙ্গে এবার নতুন করে যোগ হয়েছে জাতীয়পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সহধর্মিনী বিদিশা এরশাদের বিদিশা ফাউন্ডেশনে যখন বিএনপির বেশকজনের ছবি সহ নাম প্রকাশিত হয়েছে সস্পৃক্ততার বিষয়ে।
বিদিশা ফাউন্ডেশনে সম্পৃক্ত থাকার নাম এসেছে টিপু ছাড়াও মহানগর বিএনপির কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রুবায়েত হোসেন সায়েমের। সায়েম স্বীকার করেছেন তিনি বিদিশা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব। এই দুজনের নামও বিএনএফ কমিটিতে এসেছিল। তারা সবাই আবুল কালাম অনুগামী। ফলে মহানগর বিএনপির শীর্ষ তিনটি পদেই রয়েছেন তিন বিতর্কিত ব্যক্তি যারা সংস্কারবাদী, বিকল্পধারা ও বিএনএফে জড়িত ছিলেন। এসবের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে কমিটি গঠন করে মহানগর বিএনপির কমিটি দাবি করায় বিএনপির দুই নেতা আবার আদালতে মামলাও ঠুকে দিয়েছেন।
এ ছাড়াও আতাউর রহমান মুকুল ও শওকত হাশেম শকু মহানগর বিএনপির শীর্ষ পদে রয়েছেন। মুকুল সহ-সভাপতি ও শকু যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। অথচ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুকুল ও শকু প্রকাশ্যে নিজ দল বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের বিরোধীতা করে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছিলেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষ নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন শওকত হাশেম শকু। এমন অভিযোগ করেছিলেন মনির হোসাইন। শকু প্রকাশ্যেই নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছিলেন। অথচ তিনি শীর্ষ পদে। আতাউর রহমান মুকুল বন্দরের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছিলেন। নির্বাচনে তিনি প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করেছিলেন।
একইভাবে হান্নান সরকারও মহানগর বিএনপির পদে রয়েছেন। তিনিও ধানের শীষ প্রতীকের বিরোধীতা করে লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছিলেন ্এবং ঘোষণা দিয়েছিলেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীকে জয়ী করতে যত টাকা লাগে তিনি খরচ করবেন। অথচ তিনি বিএনপির কমিটিতে। একইভাবে বন্দরে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমাবেশে বাধা দিয়েছিলেন সুলতান মাহমুদ। বন্দরের সিরাজদৌল্লা মাঠে মঞ্চ তৈরি করতে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীদের হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তারা। বন্দরের তিন নেতা মুকুল, হান্নান সরকার ও সুলতান মাহামুদের নির্দেশে মির্জা ফখরুলের সমাবেশে আগমনের সময় রাস্থা অবরোধ করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এসব নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে মিছিল করে এমপি সেলিম ওসমানকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। অথচ তারা বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন। মুলত কালাম ও কামাল বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে তাদেরকে পদে রাখেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে নতুন করে তথ্য ফাঁস হয়েছে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশার সঙ্গে সখ্যতা গড়েছেন মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রুবায়েত হোসেন সায়েম। স্থানীয় দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকায় তার সখ্যতার বিষয়টি তুলে ধরেছে। তারা দুজনই কালাম অনুগামী।
তবে বিদিশা ফাউন্ডেশনে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন অ্যাডভোকেট রুবায়েত হোসেন সায়েম। তিনি সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমি বিদিশা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব পদে রয়েছি। এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বিদিশা এরশাদ। এটা কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। বিদিশা এরশাদ এখনও রাজনীতিতে আসেননি। বিদিশা ফাউন্ডেশনে নারায়ণগঞ্জের আর কেউ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি আওয়ামীলীগ জাতীয়পার্টিতে রাজনীতি করেন এমন অনেক ব্যক্তিরাই বিদিশা ফাউন্ডেশনে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে বিদিশা ফাউন্ডেশনের কোন কমিটি রয়েছে কিনা এবং বিএনপির আরও কেউ আছে কিনা জানতে চাইলে সায়েম বলেন, নারায়ণগঞ্জে এখনও কমিটি গঠন করা হয়নি। অচিরেই কমিটি গঠন করা হবে এবং নারায়ণগঞ্জের কমিটিতেও বিএনপি জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেন এমন অনেকেই থাকবেন।’ তবে কে কে রয়েছেন বিদিশা ফাউন্ডেশনে তাদের নাম তিনি বলেননি।