সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১) অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই সময় তাদের দখল ৪ তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। ২৪ নভেম্বর রবিবার বিকেলে র্যাবের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দীন এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, র্যাব ১১ এর এক বিশেষ অভিযানে গত ২৩ নভেম্বর শনিবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন তারাবো মোড়ের শাহ চন্দপুরী রেস্টুরেন্টে ৪জন তরুণীকে পাচারের উদ্দেশ্যে একত্রিত করা অবস্থায় পাচারকারী চক্রের সদস্য মোঃ অনিক হোসেন, মোঃ আক্তার হোসেন, মোঃ আফতাউল ইসলাম ওরফে পারভেজ, মোঃ মনির হোসেন ওরফে সোহাগ, আবদুল হান্নান ও মোঃ আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, আসামিদের দখল হতে ৭০টি পাসপোর্ট, নগদ ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ২’শ টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমান টিকেট, ৫০টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর ও ১টি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। এসময় তাদের হেফাজত হতে ৪ জন ভিকটিম তরুণী’কে উদ্ধার করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী সুন্দরী তরুণীদের উচ্চ বেতনে বিদেশে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে থাকে। এই পাচারকারী সিন্ডিকেটের সহিত বিপুল সংখ্যক এজেন্ট, পাসপোর্টের দালাল, ড্যা›স বারের মালিক, ট্র্যাভেল এজে›সী ও অসাধু ব্যক্তি যুক্ত রয়েছে। এই নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের এজেন্টরা নিন্মবিত্ত পরিবারের, পোষাক শিল্পের, ব্রোকেন ফ্যামিলির সুন্দরী তরুণীদের প্রাথমিকভাবে টার্গেট করে থাকে।
টার্গেট করার পর প্রথমে তরুণীদের ছবি বিদেশে অবস্থিত ড্যা›স বারের মালিককে পাঠানো হয়। ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ড্যা›স বারের মালিক অথবা তার প্রেরিত প্রতিনিধি সরাসরি উক্ত তরুণীদেরকে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ঢাকা অথবা আশে পাশের কোন রেস্টুরেন্ট, হোটেল অথবা লং ড্রাইভের নামে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাসে সাক্ষাৎ করে থাকে। চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত তরুণীদের পাসপোর্ট উক্ত নারী পাচারকারী সিন্ডিকেট তাদের নিজস্ব পাসপোর্ট দালালের মাধ্যমে প্রস্তুত করে থাকে। ট্রাভেল এজে›সীর মালিকের মাধ্যমে নথিপত্র ম্যানেজ করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এই সকল তরুণীকে মধ্যপাচ্য সহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে থাকে।
এই সকল তরুণীরা বিদেশে পৌঁছা মাত্র এয়ারপোর্ট থেকে উক্ত সিন্ডিকেটের সদস্যরা রিসিভ করে হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখত। বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে এই সকল তরুণীকে কোন অবস্থাতেই নিজের ইচ্ছায় হোটেল তথা ড্যা›স বারের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। প্রাথমিক অবস্থায় তরুণীরা এসকল আসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে রাজি না হলে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করা হয়ে থাকত। এভাবে দিনের পর দিন উক্ত তরুণীদের উপর পৈশ্বাচিক নির্যাতন চলতে থাকে। কোন খদ্দরের কোন নির্দিষ্ট তরুণীকে পছন্দ হলে উক্ত ড্যা›স বারের মালিকের নিকট হতে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে থাকে।
এই মানবপাচার চক্রের উপর দীর্ঘদিন যাবৎ র্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারী চালিয়ে আসছিল। যার প্রেক্ষিতে গত ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে র্যাব-১১ অভিযান চালিয়ে উক্ত মানব পাচার চক্রের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এই সমস্ত মানব পাচারকারী চক্রের মূলোৎপাটন করার লক্ষ্যে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।