সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
ব্যক্তিগত সম্মানহানী এবং রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন।
২৭ নভেম্বর বুধবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন স্বয়ং এমপি নজরুল ইসলাম নিজেই। এর আগের দিন ২৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামীলীগ ও উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধিরা এক সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু ও যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল পারভেজকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কার দাবি করা হয়।
পরদিন সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম একটি গোষ্ঠী কিছু অপকর্মের সাথে আমাকে সম্পৃক্ত করে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে আমার সম্মানহানী এবং রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করছে, যা মোটেও কাম্য নয়। একই সঙ্গে এ ধরণের অসত্য, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ প্রচার না করতে সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বাবু এমপি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে আমার জন্ম। স্কুল পর্যায় থেকে আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন শেষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে কারাগারে থাকা অবস্থায় নেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহাশীষ ভালবাসায় কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। সেই সময় ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশের আমাকে অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়। দীর্ঘ নয় মাস কারাবরণ শেষে সকল মামলায় জামিন লাভ করে আল্লাহর অশেষ রহমতে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বাংলাদেশে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করি। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নেত্রীর সমাবেশে ইতিহাসে নিকৃষ্টতম গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হই। অসংখ্য স্প্রিন্টার শরীরে বহন করে আজও যন্ত্রনা কাতর জীবনযাপন করছি।
তিনি বলেন, ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জাতির দুঃখসময়ে কারাবন্দি নেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা পালন করি। মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে নেত্রীর মুক্তির মধ্যে দিয়ে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। তার ধারাবাহিকতায় ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এই এমপি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযান সময় উপযোগী সাহসী পদক্ষেপ। যা দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রসংশা কুড়িয়েছে। এই শুদ্ধি অভিযানে চলাকালে হঠাৎ করে কিছু ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, যার সাথে আমার বিন্দু পরিমাণ সংশ্লিষ্টতা নেই। সে সকল কর্মকান্ডের সাথে আমার চরিত্রের কোন মিল নেই, আমি পরিচিত নয়, সম্পৃক্ত নয় এবং এ সকল কর্মকান্ডকে ঘৃণা করি। যেমন- টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, ক্যাসিনো, দুর্নীতি- যা আমার জন্য কল্পনাতীত। এ রকম কিছু অপকর্মের সাথে আমাকে সম্পৃক্ত করে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে একটি গোষ্ঠী ব্যক্তিগতভাবে আমার সম্মানহানী এবং রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করছে, যা মোটেও কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে বিস্ময়। ইতমধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে অবহেলিত আড়াইহাজার উপজেলাকে আধুনিক উপজেলায় পরিণত করেছি। আমার নিরলস পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আড়াইহাজার উপজেলার সর্বত্র কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের জীবনমান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
”শুধু তাই নয় গত ১১ বছর যাবত শান্তির জনপদ হিসেবে আড়াইহাজার উপজেলার সুনাম রয়েছে। রাজনৈতিক কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি। দলীয় শৃঙ্খলা পুরেপুরি বজায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে কোন মতভেদ সৃষ্টি হয়নি। এ কারণে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের পাশে থেকে কাজ করে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড মেম্বর পদে আওয়ামী লীগের সকল প্রার্থীকে বিজয়ী করার সফলতা অর্জন করি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী হিসেবে আমি আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুকলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, মহিলালীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, তাঁতী লীগসহ সকল অঙ্গসংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাংগঠনিক ঐক্য বজায় রাখার মাধ্যমে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। ‘
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এমপি নজরুর ইসলাম বলেন, আপনারা ভাল করেই জানেন যখনই কোন জাতীয় নির্বাচন ও দলীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হয় তখন কতিপয় জনবিচ্ছিন্ন, দুর্নীতিবাজ, অনুপ্রবেশকারী, ষড়যন্ত্রকারীরা রাজনীতির ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। এ আশায় আমার উন্নয়ন ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে ঈর্ষাণ্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় অসত্য সংবাদ পরিবেশন করছে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নামে-বেনামে অসত্য অভিযোগ দায়ের করে দেশ ও জাতির কাছে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। উদারহণস্বরূপ ২০১৬ সালে জনৈক বারেক নামে এক ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেন। দুদক তা আমলে নিয়ে দুই বছর অনুসন্ধান করে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২০১৮ সালের ৫ মার্চ কমিশন কর্তৃক তা পরিসমাপ্ত করে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান শুদ্ধি অভিযানকে আমি স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, পরপর তিনবার নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমি দেশ, জনগণ, দলের কাছে অবশ্যই দায়বদ্ধ। ইতিপূর্বে আমার বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকায় প্রচারিত অসত্য অভিযোগের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। ন্যায়-নীতি ও সাহসিকতার সাথে নেত্রীর পাশে থেকে যেন দেশ ও জাতির সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি সেজন্য আগামী প্রজন্ম ও জাতির কাজে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সাংবাদিকদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা কামনা করছি।