সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। আইনজীবী সমিতিতে তার বিপুল পরিমান আইনজীবী সমর্থক রয়েছেন সেটা দীর্ঘকাল ধরে। একই সঙ্গে তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করছেন। শীর্ষ এই রাজনীতিক নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার রাজনীতিতে এক ভিন্ন চরিত্র। আদালতপাড়ার রাজনীতিতে যেসব নেতারা রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি করছেন সেখানে খোকন সাহা ভিন্ন চরিত্রের মানুষ হিসেবে আভির্ভূত হয়েছেন।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসা খোকন সাহা আপাদমস্তক একজন আইনজীবী। আইন পেশায়ই যার একমাত্র আয়ের উৎস। দীর্ঘদিন রাজনীতিক জীবনে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি ভূমিদস্যূতা সন্ত্রাসী লালনের মত অভিযোগ ওঠেনি। যে কারনে নেতাকর্মীরা তাকে কর্মীবান্ধব খোকন সাহা হিসেবেই দাবি করেন। আইন পেশায় আয়ের সিংহভাগ খরচ করেছেন দল ও নেতাকর্মীদের পেছনে।
এদিকে আইনজীবীরা বলছেন- নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আওয়ামীলীগ বিএনপি কিংবা অন্যান্য দলের যেসব আইনজীবী নেতারা রাজনীতি করছেন তাদের চেয়ে ভিন্ন মানুষ খোকন সাহা। যিনি কখনই অহেতুক গল্পগুজবের আড্ডাবাজিতে নেই। এ চেম্বার টু ও চেম্বারে বসে কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিংবা কুৎসা রটানোর মত কর্মকান্ডে নেই তিনি। কারো বিরুদ্ধে গীবত করা থেকে তিনি হাজার মাইল দূরে। কারো বিরুদ্ধে অহেতুক মিথ্যাচার কিংবা ঘটনা রটনা সাঁঝিয়ে মজা নেওয়া কিংবা রসদ নেয়ার মত মানুষ খোকন সাহা নন। এই চরিত্র অন্যান্য রাজনীতিকদের মধ্যে পুরোপুরি অনুপুস্থিত। আইনজীবী সমিতির পুুরাতন ভবনের নিচ তলায় টেবিলে যেখানে বসে অনেক আদালতপাড়ার রাজনীতিকদের চলতো চায়ের আড্ডাবাজি সেখানে তাকে ছিটেফুটেও দেখা যায়নি। প্রয়োজনের চেয়ে তিনি কথাও বলেন কম। এই প্রতিবেদকের পর্যবেক্ষণেও তার এমন চরিত্র ফুটে ওঠেছে।
তিনি মামলায় আদালতের এজলাসে আসেন আবার মামলা শেষে তার নিজস্ব চেম্বারে চলে যান। আদালতপাড়ায় আইন পেশায় তিনি এজলাসে আসলে সকল আইনজীবীদের সঙ্গে তার হাস্যোজ্জল ব্যবহারও দেখা যায়। পেশাগত আচরণ ছাড়া ভিন্ন আচরণ নেই তার মাঝে। সেই তার চেম্বারে মহানগর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আসেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। সেগুলো সমাধানে কর্মীদের পাশে দাড়ান তিনি। আইনজীবীরাও সমস্যা কিংবা কোন প্রয়োজনে তার কাছে গেলে তিনি স্বচিত্তে সমাধানে কাজ করেন।
আবার নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে তিনি থাকেন সবার আগে। দলের পক্ষে তার সব সময় শক্ত অবস্থান। দলের প্রশ্নে তিনি ছাড় দিতেও নারাজ। আদালপাড়ায় রাজনীতিক কর্মকান্ডেও তিনি সক্রিয় নিয়মিত। এর বাহিরে তার মাঝে কোন রাজনীতির অপসংস্কৃতি পরিলক্ষিত হয়নি। আইনজীবীরা তার নাম মুখে আনেন কম। কারন সবাই এক বাক্যে তাকে দাদা বলেই সম্বোধন করেন। তিনি অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।
অন্যদিকে কর্মী সমর্থকরা আরও জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পরে রাজনীতিতে আসেন খোকন সাহা। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু খোকন সাহার রাজনীতি। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরি মধ্যে ১৯৮০ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ বানিজ্য শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। পরবর্তীতে শহর ছাত্রলীগের সদস্য হন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
১৯৮২ সালে এরশাদ সরকার যখন মার্শাল ‘ল’ জারি করে তখন ওইদিন সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে এরশাদ বিরোধী সর্বপ্রথম যে ১২ জন মিলে মিছিল বের করেছিল সেই মিছিলে খোকন সাহাও ছিলেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারনে তৎকালীন এরশাদ সরকার খোকন সাহার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে। যার মধ্যে একটি হত্যা মামলা ও একটি বিস্ফোরক মামলা হয়। এসব রাজনৈতিক মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
এছাড়াও আরও জানা গেছে, খোকন সাহা এরশাদের আমলে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৯২ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে ১৭ বছর তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গণভবনে সারাদেশের আওয়ামীলীগের নেতাদের নিয়ে সভা হয়। ওই সভাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও খোকন সাহাকে সেক্রেটারি করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঘোষণা দেন।