সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামের রাজনীতিতে না থাকায় নেতাকর্মীদরে কাছে একজন টেবিল রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট কালাম। তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার একটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জামানত হারিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনে ৮জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে তিনি হয়েছিলেন ৮ম। সেই আবুল কালাম ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে হয়েছিলেন তিন বারের এমপি। কিন্তু দলের কঠিন সময় যখন ১/১১ এর সময় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে মাইনাস করার চেষ্টাকারী সংস্কারবাদীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন এই আবুল কালাম। মুলত তিনি রাজনীতি করেন নির্বাচন কেন্দ্রীক।
ফলে তার প্রত্যাশিত নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসন এলাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে নিয়ে আসেন মহানগর বিএনপির কমিটি। গঠনতন্ত্র বহির্ভূত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে মহানগর বিএনপির কথিত এই কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আদালত। মুলত আবুল কালামের নির্বাচনের সুবিধার্থে এমন কমিটি গঠন করিয়ে আনা হয়। এতে মাতা নত করে সমর্থন চালিয়ে ওই কথিত কমিটির সেক্রেটারি এটিএম কামাল। রাজপথের সক্রিয় সংগ্রামী এই নেতা কালামের স্বার্থে নিজের রাজনীতি এখন রসাতলে। এই কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হলে তাদের দুজনের কেউই স্বপদে থাকতে পারছেন না। কারন বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বিএনপি সহ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার কেউ আবার নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। ফলে এই কমিটি ভেঙ্গে গেলেই কালাম ও এটিএম কামালের রাজনীতি বিদায়। এমনটাই বলছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিএনপির গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কমিটি গঠন করায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কথিত কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত। মামলার বাদী গোলজার খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাদী ও বিবাদী পক্ষের শুনানি শেষে বিরোধীয় কমিটির বিষয়ে হওয়া মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই কমিটির সকল কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানাগেছে, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৪ এর (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা/থানা, পৌরসভা, মহানগর, জেলা- এই শব্দগুলো বাংলাদেশ সরকার/ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দেওয়া অর্থই বুঝাবে।’ অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত এসব এলাকা নিয়েই বিএনপির কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে মহানগরীর মুল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড পর্যন্ত এলাকা জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেখানে মহানগর কমিটিতে রাখা হয়নি। আর সিটি কর্পোরেশন গঠন করে সরকার এবং এখানে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করেন। ফলে মহানগর বিএনপির কমিটি সুস্পষ্টভাবে দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভুত কমিটি গঠন করা হয়েছে মর্মে বাদী পক্ষের আইনজীবী আদালতে উপস্থাপন করেন।
২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র সহকারি জজ শিউলী রানী দাসের আদালতে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত। শুনানিতে বিবাদী পক্ষ স্থগিতের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। এর আগে আদালতে মামলার বাদী গোলজার খান শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করেন।
জানাগেছে, ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জে সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। যেখানে সিদ্ধিরগঞ্জ, কদমরসূল ও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে সম্পৃক্ত করা হয়। সিটি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দ্রুত মহানগরে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয়। কিন্তু বিএনপি এক্ষেত্রে এগুতে পারেনি। কিন্তু বিএনপির কমিটি না হওয়ার কারনে তারা পৌর বিএনপির কমিটিকে নগর বিএনপির কমিটি হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যান। এর আগে তারা পৌর কমিটিকেই শহর বিএনপির কমিটি হিসেবে চালিয়ে আসেন। কিন্তু বিএনপির গঠনতন্ত্রের কোথাও নগর বিএনপি ও শহর বিএনপির কমিটি নামে কোন নিয়ম রাখা হয়নি। ফলে দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কার্যক্রম নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাদের নতুন কিছু নয়।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামের রাজনীতি কখনই আবুল কালাম করেননি। তিনি একাধিকবার বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। যার পুরোটাই দলের কৃতিত্ব। যেখানে নারায়ণগঞ্জ পৌর নির্বাচনে প্রয়াত বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে জামানত হারিয়েছিলেন আবুল কালাম। ৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৮ম হয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু পরবর্তীতে ধানের শীষ প্রতীকে তিনি হয়ে যান এমপি। তবে ইতিমধ্যে তারই পদাঙ্কনুসরণে রয়েছেন আবুল কালামের ছেলে আবুল কাউসার আশাও। আশা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেও পরাজিত হয়েছেন। আর এই আশাকেই করা হয়েছে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। এতেও প্রমানিত আশার যোগ্যতা একমাত্র তার পিতা আবুল কালাম একাধিকবার এমপি! আবুল কালামও দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তার প্রয়াত পিতা জালাল উদ্দীনের বৌদলতেই। যাকে সবাই জালাল হাজী হিসেবেই চিনেন জানেন। এতেই প্রমানিত হয় আবুল কালাম নির্বাচন কেন্দ্রীক রাজনীতি করেন। যে কারনে তিনি তার প্রত্যাশিত পুরো আসন এলাকা নিয়ে মহানগর বিএনপির কথিত কমিটি নিয়ে আসেন। যার নাম দেয়া হয়েছে মহানগর বিএনপির কমিটি! তার নির্বাচনের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে গোজামিলের কমিটি গঠন করানো হয়।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে রয়েছে বন্দরে সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড এবং বন্দরে সিটি কর্পোরেশনের বাহিরের ৫টি ইউনিয়ন (ধামগড়, মুসাপুুর, কলাগাছিয়া,মদনপুর ও বন্দর) এলাকা এবং সদর থানাধীন আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়ন। একই সঙ্গে ১১নং ওয়ার্ড থেকে ১৮নং ওয়ার্ড এলাকা পর্যন্ত। আর এই আসন এলাকার যুক্ত কমিটি গঠনকে তারা নাম দিয়েছেন মহানগর বিএনপির কমিটি। কিন্তু যেখান থেকে সিটি কর্পোরেশনের অর্থাৎ মহানগরীর মুল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ডকে বাদ দিয়ে তা জেলা বিএনপির কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর এই বিষয়টিই মেনে নিতে পারেনি ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতা। ফলে তারা গঠনতন্ত্র বহির্র্ভূত কমিটির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছেন এবং কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করলে আদালতে সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দেন।