সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় বিএনপির দুই নেতার মামলার প্রেক্ষিতে কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আদালত। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দশটি ওয়ার্ড এলাকা মহানগর থেকে বাদ দিয়ে জেলা বিএনপির কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করায় মহানগর কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিতের সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে জেলা বিএনপির কমিটিও। সীমানা জটিলতায় কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হলে দুটি কমিটিই ভাঙ্গতে হবে। কারন দুটি কমিটির কেন্দ্র বিন্দু সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দশটি ওয়ার্ড। আর এই জটিলতার মাঝে এবার মাঠে ফিরতে যাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার অনুগামী নেতাকর্মীরা। যারা জেলা ও মহানগর কমিটিতে স্থান পায়নি। যারা তৈমূর আলমের সঙ্গে রাজনীতি করতেন সেই সব নেতা সহ তৈমূরকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে জেলা ও মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। দুটি কমিটিই ইতিমধ্যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির সহ জেলা বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষ নেতাদের কাউকেই দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছেনা। একই সঙ্গে মহানগর কমিটির সভাপতি আবুল কালামও রাজপথে তেমনটা নাই। এরি মাঝে তাদের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত। ফলে ঘুরে ফিরে আবারো নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃত্ব তৈমূরের দিকে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। মহানগর কমিটি হওয়ার আগে পুরো জেলার নেতৃত্বে ছিলেন তৈমূর। কিন্তু তৈমূরকে মাইনাস করে দুটি কমিটি হলেও রাজপথের ভুমিকায় তৈমূর আলমের দ্বারে কাছে যেতে পারেনি তারা।
জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সেক্রেটারি করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর আংশিক কমিটি গঠন করা হয় এবং একইদিন কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সেক্রেটারি করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে চলতি বছরের ২৩ মার্চ ২০৫ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও গত ৩০ অক্টোবর ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহারগর বিএনিপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত রাখা হয়। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা।
এসব কমিটিতে তৈমূর আলম খন্দকারের অনুগামী নেতাদের রাখা হয়নি। ২০০৯ সালে জেলা বিএনপির সভাপতি হন তৈমূর আলম খন্দকার ও সেক্রেটারি হন কাজী মনিরুজ্জামান মনির। কাজী মনির কমিটি গঠনের পর থেকেই রাজপথের আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। তখন থেকে তৈমূর আলম তার নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন। কিন্তু ২০১৭ সালে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হলে সেখান থেকে তৈমূর আলম খন্দকারকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে যে সব নেতারা রাজপথে তৈমূর আলমের সঙ্গে ভুমিকা রাখতে গিয়ে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হন তাদেরকেও দুটি কমিটিতে রাখা হয়নি। দু একজনকে নামকাওয়াস্তে রাখা হলেও তারা সেইসব পদে দায়িত্ব পালন করছেন না।
মহানগরীর রাজনীতিতে যখন নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পড়েছে এবং বিরোধ বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে তখন আবারো মাঠে নামতে যাচ্ছেন তৈমূর আলম খন্দকারের নেতাকর্মীরা। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে তৈমূর আলম বলয়ের নেতাকর্মীরা। দলের কঠিন পরিস্থিতিতে আবারো তৈমূর আলমের শূণ্যতা দেখা দিয়েছে। তৈমূর আলম খন্দকারের আমলেও নানা ধরণের সমালোচিত কর্মকান্ড থাকলেও সেই সময় রাজপথের আন্দোলন ছিল সক্রিয় ভুমিকায়। রাজপথ থেকে তৈমূর আলম সরে দাড়াননি এক হাতও। পুলিশের লাঠির সামনেই ঠায় দাড়িয়ে আন্দোলন করতেন তৈমূর। তবে এবার তিনি নেতৃত্ব না নিলেও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তারই ভাই মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের। মহানগরীর নেতৃত্ব তার হাতেই কোন একদিন আসবে এমনটা আগে থেকেই দাবি করতেন নেতাকর্মীরা। তবে এবার কঠিন সময়ে সেই সম্ভাবনা উকিয়ে দিয়েছে।
একই সঙ্গে মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ও সেক্রেটারি এটিএম কামালের নেতৃত্বে গঠনতন্ত্র বহির্ভূত গোজামিলের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ায় নতুন কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেখানে নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনায় রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি ওই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে পদে থেকে কালাম ও কামালের চেয়ে বেশি রাজপথে সক্রিয়তা দেখিয়েছেন। এমনকি বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রমগুলো সচল রেখেছেন। কালাম ও কামালের কমিটির কার্যক্রমের চেয়ে সাখাওয়াত নির্ভর মহানগরীর কার্যক্রম ছিল। সাখাওয়াত হোসেন খান কেন্দ্রীয় নেতাদের সুদৃষ্টিতে রয়েছেন।