সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় আসামি হওয়া আওয়ামীলীগের ৮ নেতাকর্মী উচ্চ আদালত থেকে নেয়া তাদের জামিননামা দাখিল করেছেন। তারা প্রত্যেকেই নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের অনুগামী হিসেবে রাজনীতি করে আসছেন।
৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমানের আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিননামা দাখিল করেন আওয়ামীলীগের ৮ নেতাকর্মী। আসামি হওয়া আওয়ামীলীগ নেতাদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাস্মদ মোহসীন মিয়া সহ বেশকজন আইনজীবী।
আদালতের একটি সূত্রে জানা যায়, এর আগে যে ৮জন আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে মঙ্গলবার জামিননামা নারায়ণগঞ্জ আদালতে দাখিল করেছেন।
উচ্চ আদালত থেকে এ মামলায় জামিন পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন ও চঞ্চল মাহমুদ। এ মামলার প্রধান আসামি নিয়াজুল ইসলাম দেশের বাহিরে থাকায় জামিন নিতে পারেনি।
অন্যদিকে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশে ফুটপাত উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত ও এমপি শামীম ওসমানের অনুগামী নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনার ২২ মাস পর মেয়র আইভীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় এমপি শামীম ওসমানকে ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশে ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও তার সমর্থকদের ওপর হামলার ২২ মাস ১৮ দিন পর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফাহমিদা খাতুনের আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য নির্দেশ দেন।
মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে গত ৪ ডিসেম্বর বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় ঘটনার দিন অস্ত্র প্রদর্শনকারী নিয়াজুল ইসলাম খান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ নেতা নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাসির, যুবলীগ নেতা চঞ্চল মাহমুদ সহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা প্রায় ৯০০ থেকে ১০০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আবেদনে এদের প্রত্যেকের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার দাবি করা হয়েছিল।
মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকার বসা কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি চাষাড়ায় বঙ্গবন্ধু সড়কে মেয়র আইভীর উপর মামলার আসামি ৯জন সহ অস্ত্রশস্ত্রসহ হামলা চালায় এবং আরো প্রায় এক হাজার ব্যক্তি বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ছোড়ে।
বাদী অভিযোগ করেন, এমপি শামীম ওসমানের ইন্ধনে ও প্রচারণাতেই এই হামলার ঘটনা ঘটে। ওইদিন এ ঘটনায় মেয়র আইভী ও তার সমর্থকদের হামলায় ৪৩ জন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। ওখানে মেয়রের সামনে উপস্থিত ব্যক্তিরা মানবঢাল তৈরি করে মেয়রকে উদ্ধার করে।
এই ঘটনার ৫দিন পর ২২ জানুয়ারী আমি বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এজাহার দেয়া হলেও তা পুলিশ মামলা হিসেবে না নিয়ে জিডি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে। পরে চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল জেলা পুলিশ সুপারের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত আবেদন করা হয়।
তাতেও কোন ফল না হওয়ায় উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দায়ের করেন। উচ্চ আদালতের আদালতের বিচারক এম এনায়েতুর রহিম ও মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এর গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ ১ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
উচ্চ আদালতের নিদের্শ মতে বুধবার নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত শুনানী শেষে বিকেলে এই আদেশ দেন।
মামলার বিষয়ে জানতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় সংঘর্ষে মেয়র আইভী, সাংবাদিক সহ অর্ধশতাধিক আহতের ঘটনা ঘটে। ওইদিন ঘটনার পর বিকেলেই নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব থেকে বের হন শামীম ওসমান। বের হয়ে তিনি নেতাকর্মীদের শান্ত করেন। আগের দিন বিকেলে চাষাড়ায় সমাবেশ করে হকারদের বসতে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন শামীম ওসমান। ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিলেন, মেয়র, ডিসি ও এসপি বসে বিষয়টির সমাধান করুন। নতুবা ২৪ ঘন্টা পর আমি নিজে হকার বসাবো। একই দিন রাতে মেয়র মিডিয়াতে বলেছিলেন, আমিও হকার উচ্ছেদে মাঠে নামতো।
এ ঘটনায় ২৫ জানুয়ারি রাতে পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি (অপারেশন) জয়নাল আবেদীন বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন।
তবে এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সেই তদন্ত কমিটি কোন প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।