সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ তীর্থস্থান বন্দরের লাঙ্গলবন্দ পূণ্য¯œান এলাকায় সরকার কর্তৃক গৃহিত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও হিন্দু নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান।
২৭ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে উক্ত মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, লাঙ্গলবন্দ পূণ্য¯œান এলাকায় অনুমোদিক উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫টি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উক্ত উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সকলের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
উক্ত আলোচনায় উপস্থিত সকলের বক্তব্যে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সরকারের অনুমোদন, তা বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অর্থ বরাদ্দ এবং কাজ সম্পন্ন করতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেও কাজে কোন প্রকার অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এর পেছনে প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫টি দপ্তরের পারস্পারিক অসহযোগীতার বিষয়টি স্পষ্ট ফুটে উঠে।
সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, ২০১৪ সালে পূণ্য¯œানের সময় একটি গুজবকে কেন্দ্র করে এখানে বড় ধরণের একটি দুর্ঘটনা ঘটে যেখানে ১০জন পূণার্থীর প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষনিকভাবে আমরা সকলের সহযোগীতায় সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। যেটি দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছিল। এরকিছু দিন পর এখানে তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী উপস্থিত হয়েছিলেন। হিন্দু নেতৃবৃন্দদের সাথে আলোচনা করে তখন আমি প্রধানমন্ত্রী বরাবর আমার একটি চাহিদাপত্র ধর্মমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছিলাম। যেখানে লাঙ্গলবন্দ পূণ্য¯œান এলাকার উন্নয়ন সহ আন্তর্জাতিক মানের একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাবনা দেওয়া হয় এবং এর কিছুদিন পরই প্রধানমন্ত্রী সেই প্রকল্পের অনুমোদন দেন। তিনটি দপ্তর থেকে প্রায় ১২’শ কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে দেওয়া প্রকল্পের জন্য প্রায় ১২১ টাকার প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমান সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। জনগণের জন্যই লাঙ্গলবন্দে এই উন্নয়নের প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে নানান রকম জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কাজ করার জন্য জায়গা ছাড়ছেন না, ফলে সরকারের যথেষ্ট স্বদিচ্ছা থাকার পরও উন্নয়ন থমকে আছে। আমি বলতে চাই আমি এই নারায়ণগঞ্জের সন্তান। এই এলাকার জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন জনগণের কাজ করার জন্য। রাষ্ট্রের সকল কিছুর মালিক জনগণ। কোন দপ্তর মালিকানা দাবী করে জনগণের উন্নয়ন আটকে রাখতে পারেন না। আপনাদের যদি কোন আপত্তি থাকে আপনারা লিখিত আকারে আপনার দপ্তরের মন্ত্রীকে জানান। আমি মন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করবো প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো কিন্তু কোন অবস্থায় জনগণের কল্যাণে গৃহিত সরকারের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ করতে পারবেনা। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমস্যা সমাধান করতে আমি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন লাঙ্গলবন্দ উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫টি দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিজেদের সাথে আলোচনার আয়োজন করে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন এবং দ্রুত প্রকল্পের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সম্পন্ন করতে সকলকে সার্বিক সহযোগীতা করতে অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, লাঙ্গলবন্দ পূণ্য¯œান এলাকায় উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে প্রায় ১২’শ কোটি টাকার পৃথক তিনটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্য থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের দেওয়া প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ১২১ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৩২ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২৭৭ ডেসিমেল জমি অধিগ্রহণ, ৫কোটি টাকা ব্যয়ে উক্ত ভূমির উন্নয়ন, ৬কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্থকরণ, ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭৫ মিটার কালভার্ট নির্মাণ, ১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৭৯০ মিটার ফুটপাত নির্মাণ, ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫টি ঘাটলায় ১৮০ মিটার প্রশস্থকরণ, ১০ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬৭২৮ বর্গমিটার গাড়ী পার্কিং ব্যবস্থা, ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পূণ্যার্থীদের জন্য ৬টি অপেক্ষমান সেড, ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫টি গণশৌচাগার, ১ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে।
মতবিনিমিয় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বন্দর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ রশিদ মিয়া, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের, এফবিসিসিআই এর পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্টির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার, বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকুসদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, লাঙ্গলবন্দ ¯œান উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, সাধারাণ সম্পাদক সম্পাদক সুজিত সাহা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি দিপক কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার প্রমূখ।