সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
ঢাকার কামরাঙ্গীচর, কেরানীগঞ্জ ও মুগদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১)। ওই সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান পাসপোর্ট ও বিমান টিকেট সহ দুই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। ২৭ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে র্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার আলেপ উদ্দীন এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১ এর অভিযানে গত বছরের ২৩ নভে¤¦র নারায়ণগঞ্জের তারাবো এলাকা হতে ৪ জন ভিকটিম তরুণী উদ্ধার সহ আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এ সময় গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের দখল হতে ৭০টি পাসপোর্ট, নগদ ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ২০০টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমান টিকেট, ৫০টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর ও ১টি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।
ওই সময় গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং তারা ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী সুন্দরী তরুণীদের বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে ড্যা›সবারে ড্যা›স ও অসামাজিক কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে পাচার করে। উক্ত সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাচারকৃত নারীদের হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখতো। বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে এই সকল তরুণীদেরকে কোন অবস্থাতেই নিজের ইচ্ছায় হোটেল তথা ড্যা›স বারের বাইরে যেতে দেওয়া হতো না। প্রাথমিক অবস্থায় তরুণীরা এ সকল আসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে রাজি না হলে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করা হতো।
তিনি আরও জানান, এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এর এক বিশেষ অভিযানে ২৬ জানুয়ারি রবিবার ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, কেরানীগঞ্জ ও মুগদা এলাকা হতে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য মোঃ শাহাবুদ্দিন (ধানসিড়ি ট্রাভেল এজে›িসর মালিক), মোঃ হৃদয় আহম্মেদ ওরফে কুদ্দুস (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), মোঃ মামুন (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), মোঃ স্বপন হোসেন (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), মোঃ শিপন (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), রিজভী হোসেন ওরফে অপু (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), মোঃ মুসা ওরফে জীবন (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট) ও শিল্পী আক্তারকে (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট) গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের দখল হতে ৩৯টি পাসপোর্ট, ৬৬টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ১৮টি বিমান টিকেটের ফটোকপি, ৩৬টি ভিসার ফটোকপি, ১টি সিপিইউ, ১৯টি মোবাইল জব্দ করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত হতে ২জন ভিকটিম তরুণী’কে উদ্ধার করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামী শাহাবুদ্দিন ধানসিড়ি ট্রাভেল এজে›িসর মালিক। শাহাবুদ্দিন তার নিয়োগকৃত বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ১৫ হতে ২৫ বছর বয়সী সুন্দরী নারীদের সংগ্রহ করতো। এরপর এই সকল নারীদের বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপাচ্যে অবস্থিত বিভিন্ন ড্যা›সবারে পাচার করতো। ধানসিড়ি এজে›িসর মালিক শাহাবুদ্দিনের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ড্যা›স বারের মালিকদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত অন্যান্য আসামীরা শাহাবুদ্দিনের নারী সংগ্রহকারী এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় এই চক্রের মাধ্যমে বিগত ২ বছরে সহস্রাধিক তরুণী মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়েছে।
র্যাব জানায়, গত বছরের ২৩ নভে¤¦র র্যাব-১১ এর অভিযানে উক্ত নারী পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার ফলে পাচারকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যরা সর্তক হয়ে যায় এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতে তারা পাচারের কৌশল ও রূট পরিবর্তন করে। বর্তমানে তারা সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যে না পাঠিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের এয়ারপোর্ট ব্যবহার করে নারী পাচার অব্যাহত রেখেছে। পূর্বে তারা শুধুমাত্র ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ব্যবহার করতো কিন্তু বর্তমানে দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ব্যবহার করছে। এই মানব পাচারকারী চক্রের উপর দীর্ঘদিন যাবৎ র্যাব-১১ বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী চালিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি রবিবার অভিযান চালিয়ে উক্ত মানব পাচারকারী চক্রের ৮জনকে গ্রেপ্তার করে। এই সমস্ত মানব পাচারকারী চক্রের মূলোৎপাটন করার লক্ষ্যে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।