সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। যাকে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। প্রায় দেড় যুগ ধরে নারায়ণগঞ্জে থানা পৌর ও ইউনিয়নে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করতে পারেনি সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ও মহানগর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও এই দুটি কমিটির শীর্ষ নেতারাও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আশা পূরন করতে পারেনি। এর আগে জেলা ও মহানগরীতে দুটি আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন ওই কমিটির নেতারা। কিন্তু পরবর্তীতে নেতৃত্বের পরিবর্তন হলেও থানা পর্যায়ের নেতাদের ভাগ্য খুলেনি।
তবে জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতারা এবার পকেট কমিটি গঠনের প্রস্তুত নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নির্দেশনা পেলেই ঘোষণা ছুড়ে দিবেন। এতে আবারো সক্রিয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হতে যাচ্ছেন পদবঞ্চিত। কারন বেশকটি সূত্রে জানাগেছে, জেলা ও মহানগরীর আওতাধীন যেসব কমিটি ঘোষণা করা হবে সেখানে থাকছে জেলা বিএনপির শীর্ষ অনেক নেতাদের বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে তদবির। সেই সেই সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ইউনিটে পদে আসতে প্রত্যাশি অনেক নেতাদের উপটোকন। ইতিমধ্যে অনেক নেতাদের পদে বসানোর স্বপ্ন দেখিয়ে বিশেষ সুবিধা আদায়ের খবরও পাওয়া গেছে।
ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি হলেও সবগুলো কমিটিই হবে পকেট কমিটি। কোন ধরণের থাকবেনা আনুষ্ঠিকতা কিংবা সম্মেলন। শুধুমাত্র কাগজের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছেন জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এখনই শুরু হয়েছে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের তদবির। মুলত যেসব নেতারা আসন ভিত্তিক রাজনীতি করেন তাদের অঙ্গুুলীর ইশারায় তাদের কব্জায় কমিটি ঘোষণা করা হবে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ছাড়াও ছাত্রদলের কমিটিতে আসতে চাচ্ছেন এমন নেতারাও জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন বিশেষ সুবিধা নিয়ে। তবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চান সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হোক। নেতাকর্মীরা বলছেন- সম্মেলন ছাড়া অর্থাৎ পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয় তাহলে বিশেষ সুবিধায় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে ধরে দিবেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
আরেকটি সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে বন্দর থানাধীন আরও ৫টি ইউনিয়ন এলাকা রয়েছে, যেসব এলাকাগুলো জেলা ও মহানগর কমিটির নেতারা নিজেদের দাবি করছেন। এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও ইতিমধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা বন্দরে কর্মী সভা করেছেন।
এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের আওতাধীন সোনারগাঁও, বন্দর, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও ফতুল্লা থানায় ছাত্রদলের কমিটি প্রায় প্রস্তুত। এর আগে এসব থানার বেশকটি কমিটি ঘোষণা করা হবে সেরকম প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীবের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় তা আরও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এরি মাঝে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সারাদেশের সব ধরনের কমিটি গঠনে নিষেধাজ্ঞা দেন। ইতিমধ্যে ছাত্রদল কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যদিও নারায়ণগঞ্জ জেলায় এখনও ঘোষণা করা হয়নি। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি জানিয়েছেন, কমিটি আমাদের হাতে প্রস্তুত। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নির্দেশনা পেলেই ঘোষণা করা হবে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সভাপতি হিসেবে রয়েছেন সাহেদ আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে মমিনুর রহমান বাবু। এখানেও নারায়ণগঞ্জ সদর থানা, বন্দর থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়ে তিনটি ইউনিট কমিটি গঠন করা হবে। তবে সে রকম কোন প্রস্তুতি দেখা দৃশ্যমান হয়নি এখনো।
আরও জানাগেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান রাজনীতি করেন সোনারগাঁয়ের আসন ভিত্তিক। তার ছেলে সজীব জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারি। সজীব চাচ্ছেন সোনারগাঁয়ে তার একক পছন্দে পকেট কমিটি ঘোষণা করা হোক। কিন্তু সভাপতি রনির দূর্বলতা রয়েছে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শান্তর দিকে। যে কারনে এখানে কমিটি হয়েও হয়ে ওঠেনি।
আড়াইহাজার আসন ভিত্তিক রাজনীতি করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুুমন। আজাদ ও সুমন দুজনই চাচ্ছেন তাদের পছন্দমত আড়াইহাজার থানায় ছাত্রদলের কমিটি হোক। এখানে জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ এখন নিষ্ক্রিয়। যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এক সময় সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুরের সঙ্গে রাজনীতি করলেও এখন তিনি ভিড়েছেন আজাদ বলয়ে। তিনিও চাচ্ছেন আজাদের কব্জায় হোক কমিটি।
একইভাবে রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের কমিটি চান জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া। এখান থেকে সোহেল মিয়া রয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে। এখানে খটকা লাগায় কমিটি গঠনে তদবির চলছে। ফতুল্লায় নিজের মুঠোবন্দির মধ্যেই রাখতে চান সভাপতি রনি। দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতি করেও ফতুল্লায় ছাত্রদলের পদের আশা ছেড়ে দিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি হয়েছেন রাসেল আহমেদ। রাজনৈতিক এসব মারপ্যাচের কারনে ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বাড়ছে যেমন তদবির তেমনি বাড়ছে নানান জনের আগ্রহ ও বিশেষ সুবিধার প্রলোভন। যদিও কমিটি গঠনের পরেই জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীব বলেছিলেন, কারো তদবির কিংবা বিশেষ সুবিধায় কোন কমিটি গঠন বা পদ পদবি দেয়া হবে না। রাজপথের সক্রিয় নেতাকর্মীদের দিয়েই হবে কমিটি। একই দাবি করেছিলেন মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ ও সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবু।