সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা যিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন, সেই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারনায় ছিলেন শাহজাহান মেম্বার। অথচ সেই শাহজাহান মেম্বারকেই করা হয়েছে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক! যে কারনে নেতাকর্মীরা অনেকটা আক্ষেপ আর হাস্যরসিকতায় বলেছেন, আওয়ামীলীগে ভুমিকা রাখায় বিএনপিতে মুল্যায়ণ পেলেন শাহজাহান। তবে পাশাপাশি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ সোনারগাঁও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন। যে কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন শাহজাহান মেম্বার ও সদস্য সচিব মোতালেব মিয়া। এ ছাড়াও বেশকজনকে রাখা হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে। যাদের বেশির ভাগ নেতারাই বিগত আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন না সক্রিয়। প্রকাশ্যে জাতীয়পার্টি ও আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করেছিলেন। আহ্বায়ক শাহজাহান মেম্বার গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অথচ তার হাতেই দেয়া হলো পৌর বিএনপির নেতৃত্ব।
এই কমিটি ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা এডিএম বাকির জুয়েল তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতার নির্বাচনী ক্যাম্পে বসে আছেন শাহজাহান সহ বিএনপির বেশকজন নেতা। যাদের মধ্যে বেশকজন ইতিমধ্যে জাতীয়পার্টিতে যোগদানও করেছেন।
ছাত্রদলের এই নেতা তার পোস্টে লিখেছেন, অভিনন্দন! যারা সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করার পরও সোনারগাঁও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হয়!
তার এমন পোস্টে ওই আওয়ামীলীগ নেতার নির্বাচনী ক্যাম্পে বসা ও নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামীলীগ নেতার পক্ষে ভোট প্রার্থনার ছবিও পোস্ট করেছেন। যেখানে ছাত্রদল নেতা কাউসার মন্তব্য করেছেন, সুবিধাবাদীরা অতিমাত্রায় মুল্যায়িত অন্যদিকে ত্যাগীরা বিতাড়িত বলেই আজ আমরা বিচ্ছিন্ন ও দূর্বল। ছাত্রদল নেতা ইকবাল প্রধান লিখেছেন, একজনের সাইনে কমিটি হয়? ফারুক হিমেল লিখেছেন, এটাই বিএনপির চরিত্র। মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু লিখেছেন, এটাই রাজনীতিরে ভাই।
অন্যদিকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নানের অনুগামী নেতাদের অগ্রাধিকার দিয়ে সোনারগাঁও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি মামুন মাহামুদ। মান্নানের লোকজনকে দিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পায়তারার অংশ হিসেবে এভাবে পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। কারন এই আহ্বায়ক কমিটির নেতারাই ৯টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। ফলে এরাই থাকবেন সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে। এই কমিটির বেশকজন নেতা রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে নিস্ক্রিয় ভুমিকা রেখেছিলেন।
৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এই কমিটির আগে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার পৌর বিএনপির কমিটি গঠন করেছিলেন। ওই সময় এমএ জামানকে সভাপতি ও বশির উদ্দীন মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর বশির উদ্দীন মোল্লার মৃত্যুবরণের পর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হুমায়ুন কবির রফিক। কয়েক মাস পূর্বে অসুস্থ্যতার কারন দেখিয়ে এমএ জামান পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শাহজাহান মেম্বার। তবে সম্প্রতি এমএ জামান পৌর জাতীয়পার্টির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
জেলা বিএনপির সেক্রেটারি জানান, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে মোঃ শাহজাহান মেম্বারকে আহবায়ক ও মোঃ মোতালেব মিয়াকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য রয়েছেন। কমিটিতে সফিকুল ইসলাম নয়ন, মোঃ শাহীন আহাম্মদ, নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফারুক আহাম্মদ তপন (কাউন্সিলর), মোঃ আলমগীর হোসেন, আবু ছাইদ, মোঃ ফরিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট সাদ্দাম হোসেন, মাসুম মোল্লা, মোঃ আব্দুর রহিম, নাসির উদ্দীন (সাবেক কাউন্সিলর), শামসুল ইসলামকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।