আ’লীগ নেতার পক্ষে ভোট প্রার্থনাকারী মোশারফ চায় সোনারগাঁ বিএনপির নেতৃত্ব!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পৌর বিএনপির কমিটি গঠনের পর সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের বিষয়ে নতুন গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে ভোট প্রার্থনাকারী শাহজাহান মেম্বারকে পুরষ্কৃত করেছেন জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ।

এবার মামুন মাহামুদের সুদৃষ্টি পড়েছে উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেনের দিকে। মোশারফ হোসেন উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসতে ইতিমধ্যে মামুন মাহামুদকে ম্যানেজ করে নিয়েছেন বলেও গোমর ফাঁস হয়ে গেছে। আওয়ামীলীগ নেতার পক্ষে শাহজাহান মেম্বারের সঙ্গে মোশারফ হোসেনও ভোট প্রার্থনা করেছিলেন।

এসব কারনে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন- যারা প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ নেতাদের পক্ষে কাজ করেছেন তারাই এখন জেলা বিএনপির সেক্রেটারি মামুন মাহামুদের সুদৃষ্টিতে। নিয়মিত এখন মোশারফ হোসেনকে মামুন মাহামুদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে।

পৌর বিএনপির কমিটি গঠনের পর গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপি ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে গোপন আতাতের কথাও ফাঁস করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন- ওই নির্বাচনে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থন ছিল আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের দিকে। স্থানীয় এমপির কাছ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের শর্তে বিএনপির নেতারা কালামের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন। মুলত এরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফরের পরোক্ষ নির্দেশেই কারামের পক্ষে কাজ করেছিলেন। ওই নির্বাচনে কালামের পক্ষে কাজ করা বিএনপির বেশকজন নেতা ইতিমধ্যে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেছেন।

ওই নির্বাচনে শাহজাহান মেম্বার ও মোশারফ হোসেন প্রকাশ্যে কালামের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় ছিলেন। ওই সময় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের কঠোর সমালোচনা শুরু হয়। এবার সেই শাহজাহান মেম্বারকে যখন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক করেছেন মামুন মাহামুদ তখন সোনারগাঁয়ের মাঠ পর্যায়ের রাজপথের সক্রিয় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছেন এবং কঠোর সমালোচনা চলছে। এমন সমালোচনার মাঝে যোগ হয়েছেন মোশারফ হোসেন যিনি ইতিমধ্যে মামুন মাহামুদকে ম্যানেজ করতে সক্ষম হয়েছেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- সোনারগাঁও পৌর নির্বাচনে মোশারফ হোসেনকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনে তিনি ঘাছাড়াভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাদেকুর রহমানের সঙ্গে তিনিও তাল মিলিয়ে অনেকটা ড্যামী প্রার্থীর মত অবস্থান নেন। ফলে নির্বাচনে তার ভরাডুবি হয়।

বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে মোশারফ হোসেনের নাম সোনারগাঁয়ে এক আতংকের নাম। সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিমের গড়া ওরা ১১ জনের একজন হলেন মোশারফ হোসেন। সোনারগাঁয়ের সকল আর্থিক, লাভজনক, প্রশাসনিক সহ সকল কিছুর নিয়ন্ত্রনে ছিলেন ওরা ১১জন। মোশারফকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। সেই মোশারফের হাতে সোনারগাঁ বিএনপির নেতৃত্ব তুলে দিতে চাচ্ছেন মামুন মাহামুদ। ওরা ১১ জনের মধ্যে ছিলেন শাহজাহান মেম্বারও।

ছবি- কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা রিজভীকে দেখতে গেলেন মামুন মাহামুদ, সঙ্গে মোশারফ হোসেনও।

এদিকে নতুন করে নেতাকর্মীদের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সোনারগাঁয়ে আবারো কি রেজাউল করিমকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন কিনা মামুন মাহামুদ। কারন রেজাউল করিমের হাত ধরেই মামুন মাহামুদের রাজনীতি। জেলা যুবদলের নেতৃত্বে এসেছিলেন রেজাউল করিমের বৌদলতেই। এমনকি সোনারগাঁও উইমেন্স কলেজের অধ্যাপক হিসেবে মামুন মাহামুদ ও তার সহধর্মিনীর চাকুরী হওয়ার পিছনেও রেজাউল করিমের সুপারিশ রয়েছে। আর মোশারফ হোসেন, শাহজাহান মেম্বার ও মোতালেব মিয়া তিনজনই রেজাউল করিমের লোক হিসেবে পরিচিত। যদিও রেজাউল করিম সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে নেই। তিনি শারীরিকভাবেও আনফিট। তবে এসবের পিছনে আজহারুল ইসলাম মান্নান বিরোধী হিসেবে পরিচিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফরের হাত থাকতেও পারে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মাহফুজুর রহমান কালাম চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন, সেই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারনায় ছিলেন শাহজাহান মেম্বার। অথচ সেই শাহজাহান মেম্বারকেই করা হয়েছে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক! যে কারনে নেতাকর্মীরা অনেকটা আক্ষেপ আর হাস্যরসিকতায় বলেছেন, আওয়ামীলীগে ভুমিকা রাখায় বিএনপিতে মুল্যায়ণ পেলেন শাহজাহান। তবে পাশাপাশি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

ছবি- পৌর বিএনপির কমিটির কাগজ তুলে দেয়ার সময়ও মামুন মাহামুদের সঙ্গে মোশারফ হোসেন।

৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ সোনারগাঁও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন। যে কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন শাহজাহান মেম্বার ও সদস্য সচিব মোতালেব মিয়া। এ ছাড়াও বেশকজনকে রাখা হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে। যাদের বেশির ভাগ নেতারাই বিগত আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন না সক্রিয়। প্রকাশ্যে জাতীয়পার্টি ও আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করেছিলেন। আহ্বাক শাহজাহান মেম্বার গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অথচ তার হাতেই দেয়া হলো পৌর বিএনপির নেতৃত্ব।

এই কমিটি ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা এডিএম বাকির জুয়েল তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতার নির্বাচনী ক্যাম্পে বসে আছেন শাহজাহান সহ বিএনপির বেশকজন নেতা। যাদের মধ্যে বেশকজন ইতিমধ্যে জাতীয়পার্টিতে যোগদানও করেছেন।

ছাত্রদলের এই নেতা তার পোস্টে লিখেছেন, অভিনন্দন! যারা সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করার পরও সোনারগাঁও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হয়!

তার এমন পোস্টে ওই আওয়ামীলীগ নেতার নির্বাচনী ক্যাম্পে বসা ও নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামীলীগ নেতার পক্ষে ভোট প্রার্থনার ছবিও পোস্ট করেছেন। যেখানে ছাত্রদল নেতা কাউসার মন্তব্য করেছেন, সুবিধাবাদীরা অতিমাত্রায় মুল্যায়িত অন্যদিকে ত্যাগীরা বিতাড়িত বলেই আজ আমরা বিচ্ছিন্ন ও দূর্বল। ছাত্রদল নেতা ইকবাল প্রধান লিখেছেন, একজনের সাইনে কমিটি হয়? ফারুক হিমেল লিখেছেন, এটাই বিএনপির চরিত্র। মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু লিখেছেন, এটাই রাজনীতিরে ভাই।

৪ ফেব্রæয়ারি মঙ্গলবার সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এই কমিটির আগে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার পৌর বিএনপির কমিটি গঠন করেছিলেন। ওই সময় এমএ জামানকে সভাপতি ও বশির উদ্দীন মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর বশির উদ্দীন মোল্লার মৃত্যুবরণের পর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হুমায়ুন কবির রফিক। কয়েক মাস পূর্বে অসুস্থ্যতার কারন দেখিয়ে এমএ জামান পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শাহজাহান মেম্বার। তবে সম্প্রতি এমএ জামান পৌর জাতীয়পার্টির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন।

জেলা বিএনপির সেক্রেটারি জানান, পৌর বিএনপির আহŸায়ক কমিটিতে মোঃ শাহজাহান মেম্বারকে আহবায়ক ও মোঃ মোতালেব মিয়াকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য রয়েছেন। কমিটিতে সফিকুল ইসলাম নয়ন, মোঃ শাহীন আহাম্মদ, নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফারুক আহাম্মদ তপন (কাউন্সিলর), মোঃ আলমগীর হোসেন, আবু ছাইদ, মোঃ ফরিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট সাদ্দাম হোসেন, মাসুম মোল্লা, মোঃ আব্দুর রহিম, নাসির উদ্দীন (সাবেক কাউন্সিলর), শামসুল ইসলামকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।