সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় গত দুইদিন যাবত টাউট উচ্ছেদ অভিযান ও সমিতির নির্ধারিত ওকালতনামা, হাজিরা, সমন, পরোয়ানা, পয়োরানা ফেরত, রিলিজ ও কোর্ট ফাইল সহ যাবতীয় কাগজপত্র বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকিতে নেমেছিলেন আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত পরিষদ। দুদিনে বেশকজন টাউটকে আটক করে আদালতপাড়া থেকে বের করে দেয়া হয়। এই ঘটনার একদিন পর আদালতপাড়ায় অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-১১)। র্যাব অভিযান চালিয়ে জাল সরকারি রাজস্ব স্ট্যাম্প বিক্রির দায়ে ৩জন ও একজন ভূয়া কাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুরে হাজী জালাল ম্যানশন মার্কেটে অভিযান চালানো হয়।
র্যাব-১১ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন চাঁনমারী এলাকায় হাজী জালাল ম্যানশন মার্কেটের ৫টি ফটোকপি দোকানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমান জাল সরকারি রাজস্ব স্ট্যাম্প সহ ৩জন ও ১জন ভুয়া কাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মোঃ ইসমাইল (৩৮), মোঃ শফিকুল ইসলাম (৪৮), মোঃ চঞ্চল হোসেন (২৮) ও মোঃ কবির হোসেন (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান সরকারি জাল রাজস্ব স্ট্যাম্প এবং ৬টি নিকাহ ও তালাক রেজিষ্টার উদ্ধার করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ফটোকপির দোকানে নারায়ণগঞ্জে জর্জ কোর্টের এ্যাডভোকেটদের ব্যবহৃত ওকালতনামায় জাল সরকারি রাজস্ব স্ট্যাম্প ব্যবহার করে বিক্রয় করে আসছে। এছাড়াও এই জাল সরকারি রাজস্ব স্ট্যাম্পগুলো জামিননামা ও পিটিশনেও ব্যবহার হয়ে থাকে। তারা এই জাল সরকারি রাজস্ব স্ট্যাম্প ক্রয়-বিক্রয় করে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকার সরকারি রাজস্ব ফাকি দিয়ে আসছে।
র্যাব-১১, এর অনুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পেয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাঁনমারি এলাকায় হাজী জালাল ম্যানশন মার্কেটের ৫টি ফটোকপি দোকানে অভিযান চালিয়ে জাল সরকারি রাজস্ব স্ট্যাম্প সহ মোঃ ইসমাইল, মোঃ শফিকুল ইসলাম, মোঃ চঞ্চল হোসেন এবং ভুয়া নিকাহ করার দায়ে মোঃ কবির হোসেনকে হাতে-নাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
অন্যদিকে গত দুই দিন যাবত নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি টাউট উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে। টাউট প্রতিরোধে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্ধারিত লাল টাই পড়তে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইনজীবী সমিতির নির্ধারিত ফাইল, হাজিরা, ওকালতনামা, বেলভন্ড, রিলিজ, সমন, পরোয়ানা ফেরত সহ সকল কাগজপত্র বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকিতে নেমেছেন সমিতির নেতারা।
১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার থেকে এই অভিযানে নামে জেলা আইনজীবী সমিতি। দুদিনের অভিযানে বেশকজনকে আটক করে আদালত থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। যেসব শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা লাল টাই পড়েনি তাদের লাল টাই পড়ে কোর্টে প্রবেশ করতে বলা হয় এবং যারা এখনো ইন্টিমেশন জমা না দিয়ে কোর্টে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করছেন তাদের আদালত ত্যাগ করতে বলা হয়।
এ ছাড়াও যারা আইনজীবী সহকারী হিসেবে কাজ করছেন তাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে কিনা সেগুলো যাচাই বাছাই করা হয়। যারা কোন বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া কোর্টে কাজ করছেন তাদের টাউট হিসেবে চিহ্নিত করে আদালতপাড়া থেকে বের করে দেয়া হয়।
এদিকে জানাগেছে, গত ২৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২০-২১ কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত ও সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনিত সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৭ জনের পূর্ণ প্যানেল বিজয়ী হয়।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২০-২১ সালের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৭জন আইনজীবীদের নির্বাচিত পরিষদ।
এই পরিষদে নবনির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট বিদ্যুৎ কুমার সাহা, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বরুণ চন্দ্র দে, কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান কাজল, আপ্যায়ণ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল বাশার রুবেল, লাইব্রেরী বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মমিন, ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রাশেদ ভূঁইয়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহমিদা আক্তার সিমি, সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকট হাসিব উল হাসান রনি, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুসরাত জাহান তানিয়া এবং কার্যকরী পরিষদ সদস্য পদে অ্যাডভোকেট অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ সাগর, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আজিম ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সুজন প্রধান ও অ্যাডভোকেট কামরুন নেছা সুবর্ণা।