সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন প্রায় ২ বছর যাবত। তার মুক্তির দাবিতে প্রায় সকল আন্দোলন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে রয়েছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন।
অপরদিকে নেত্রীকে কারাগারে রেখে রাজপথের চেয়ে চিত্তবিনোদনে সমুদ্র বিলাসে সময় কাটাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ অনুগামী নেতাকর্মীরা। মাহমুদুর রহমান সুমন শুধু রাজপথেই নয় তিনি নিয়মিত আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। মানুষের দুঃখ দুর্দশা ও নির্যাতনের কথা শুনছেন।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান আব্দু আড়াইহাজারের বিএনপির কিছু নেতাকর্মীদের নিয়ে সুমদ্র বিলাসে গিয়েছেন। যারা মুলত নজরুল ইসলাম আজাদ অনুগামী হিসেবে পরিচিত। সুমদ্র বিলাসে যাওয়ার সময় যাত্রা বিরতিতে বিলাসি খাবারের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। সেই ছবিতে জেলা বিএনপির নেতা সালাউদ্দীন মোল্লাও বিরুপ মন্তব্য করেছেন। সালাউদ্দীন মোল্লা ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ‘ভোজনতো ভালোই হচ্ছে! মা জেলে।’ এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মন্তব্যে সমালোচনা শুরু হয়।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার চেয়ে আজাদ অনুগামী নেতাকর্মীদের কাছে আজাদই গুরুত্বপূণ। যার প্রমান পাওয়া গেছে গত ২০১৮ সালের ১৪ মে। ওইদিন বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ছিল। ওই দিন সকালে নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে একটি মামলায় হাজির দিতে এসেছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ। কিন্তু বিকেলেই চাষাড়া বালুর মাঠে জেলা বিএনপি ও মহানগর বিএনপি পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন। ওইদিন আদালতপাড়ায় আজাদের পাশে শত শত নেতাকর্মীদের দেখা যায়। রীতিমত আদালতপাড়ায় শোডাউন দেখা যায়। কিন্তু বিকেলেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির কর্মসূচিতে ছিলেন না আজাদ সহ তার অনুগামী নেতাকর্মী।
অন্যদিকে আড়াইহাজার বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি- বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন যাবত জেলে মানবতর জীবনযাপন করছেন। বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবার থেকে দাবি করা হচ্ছে তাদের নেত্রী দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বর অসুস্থ আছেন। যার কারনে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে কিছুদিন পরপর কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া কে বিএনপির নজরুল ইসলাম আজাদ পন্থী নেতাকর্মীরা কক্সবাজারে সমুদ্র বিলাসে আছেন চিত্তবিনোদনে। যেখানে আজাদের চাচা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান আব্দু নেতাকর্মীদের নিয়ে রয়েছেন খোশ মেজাজে। যে কারনে আড়াইহাজারের নেতাকর্মীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন- নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনের অধিকাংশ কর্মসূচিতে না থাকলেও তারা রয়েছেন বিনোদনে। তাদের নেতা আজাদ পেয়েছিলেন মনোনয়ন, তাদের রাজপথে ভুমিকা থাকবে সবার আগে। কিন্তু তারা নেত্রীকে মা বলে সম্বোধন করেন, অথচ সেই মাকে কারাগারে রেখে তার সন্তানেরা চিত্তবিনোদনে সমুদ্র বিলাসে। কোন সন্তান তার মাকে কারাগারে রেখে বিনোদন নিতে পারেনা।
এদিকে নেতাকর্মীদের দাবি- কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির কর্মসূচিতে ঢাকায় নিয়মিত যোগদান করছেন মাহমুদুর রহমান সুমন। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন তিনি।
গত ২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী মাহমুদুর রহমান সুমন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে কথা বলেন এবং মানুষের খোঁজ খবর নেন। বিকেলে বিশনন্দী ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চৈতন্যকান্দা, ৫নং ওয়ার্ডের গাজীপুরা এলাকায় তিনি ঘুরে ঘুরে নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেন এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। সন্ধায় উপজেলার দুটি ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে নারান্দী বাইতুন নূর বড় জামে মসজিদে ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত হয়ে উপস্থিত মুুসুল্লীদের কাছে তার খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।
এর আগে উপজেলার মুন্সীপুরা দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানার উদ্যোগে ওয়াজ মাহফিলেও তিনি উপস্থিত হয়ে খালেদা জিয়ার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। এছাড়াও তিনি এলাকার সামাজিক অনুষ্ঠান ও কারো মৃত্যুর সংবাদ পেলেই ছুটে আসেন নিজ জন্মস্থান আড়াইহাজারে।
এ ছাড়াও আড়াইহাজার থানা ছাত্রদল নেতা মো: টুটুলের অসুস্থ বাবাকে দেখতে ছুটে যান টুটুলের বাসায়। ব্রাক্ষন্দী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মরহুম ডা: হামিদ মেম্বারের জানাযায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। সোনারগাও থানা মহিলাদলের নেত্রী সালমা আক্তার কাজলের স্বামী মৃত্যুর সংবাদেও ছুটে আসেন তিনি। হাইজাদী ইউনিয়ন বিএনপি নেতা তারা মেম্বারের মৃত্যুতে ছুটে আসেন তার পরিবারকে শান্তনা দিতে।
এছাড়া সামাজিক অনুষ্ঠানেও থাকছেন তিনি সমান তালে। সাতগ্রাম ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা সমিরের ভাতিজির বিয়ে, যুবদল নেতা আলামিনের ছোট বোনের বিয়ে, ছাত্রদল নেতা ইয়ামিন হাসানের বড় ভাইয়ের বিয়ে, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক হোসেন মোল্লার মেয়ের বিয়েতে অংশগ্রহণ সহ এরকম অসংখ্য সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন মাহমুদুর রহমান সুমন। মোটকথা আড়াইহাজারের মাটি আকড়ে রয়েছেন তিনি। রয়েছেন নেত্রীর মুক্তির দাবিতে রাজপথেও। কিন্তু আজাদ অনুগামীরা শুধু রয়েছেন আজাদের পাশে এবং চিত্তবিনোদনে সমুদ্র বিলাসে।