নূর হোসেনের আপন ভাইকে থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক করেছিলেন তৈমূর!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে ঘটে সাত খুনের ঘটনা। ওই ঘটনায় মৃতুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত নূর হোসেন। সাত খুনের পুর্বে সিদ্ধিরগঞ্জে প্রকাশ্যে কাউন্টার বসিয়ে ফেন্সিডিল ইয়াবা মাদক বিক্রি, নারী দিয়ে অশ্লীল নৃত্য, জুয়ার বোর্ড, বাস স্টান্ড, বেবি স্টান্ড সহ বৈধ অবৈধ সিদ্ধিরগঞ্জের সকল সেক্টর নিয়ন্ত্রন করতো এই নূর হোসেন। কিন্তু প্রকাশ্যে এসব করে আসলেও নূর হোসেনের বিরুদ্ধে তৎকালীন জেলা বিএনপির দায়িত্বে থাকা নেতারা কোন বক্তব্যও দেননি। নূর হোসেন ছিলেন থানা বিএনপির সহ-সভাপতি। বিরোধী দলের কাজ হলো সরকারি দলের অপকর্ম তুলে ধরা সমালোচনা করা। অথচ সেই সময় জেলা বিএনপির নেতারা নূর হোসেনের বিরুদ্ধে কোন ধরণের বক্তব্য দেননি।

উল্টো নূর হোসেনের গানম্যান, নূর হোসেনের সহযোগীদের অনেককেই বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদায়ন করা হয়। যার মধ্যে নূর হোসেনের আপন ভাই মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দীনকে করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। মুলত নূর উদ্দীনের মাধ্যমে নূর হোসেনের সঙ্গে বিএনপির অনেকেই যোগসূত্র তৈরি করে বিশেষ সুবিধা আদায় করেছিলেন। বিএনপির রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়ও হয়েছিলেন মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দীন।

জানাগেছে, ২০১২ সালের দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনির। কমিটিতে সফর আলী ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক, মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দীনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সদস্য সচিব করা হয়। এই মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দীন হলেন নূর হোসেনের আপন ভাই। তবে এই কমিটিতে থাকা বেশকজন যুগ্ম আহ্বায়কের সঙ্গেও নূর হোসেনের সখ্যতা ছিল।

স্থানীয়দের সূত্রমতে, এমনকি সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় থানা বিএনপির আলিশান একটি কার্যালয় বিএনপিকে উপহার হিসেবে দেন নূর হোসেন। যার পুরো ভাড়াটি বহন করেছিল নূর হোসেন। সাত খুনের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ভারতে পালিয়ে গেলে বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় সেই কার্যালয় বিলুপ্ত ঘোষণা করেন মামুন মাহামুদ। মুলত মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দীনে মাধ্যমে এই যোগসূত্র তৈরি করে নূর হোসেন।

এর কারন হিসেবে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- সিদ্ধিরগঞ্জে দীর্ঘদিন যাবত বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের সঙ্গে নূর হোসেনের ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল। ২০১৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে এমন আশংকা থেকে নূর হোসেন বিএনপির নেতাদের পেছনে ডোনেট করেছিলেন। যে কারনে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা ও সোনারগাঁও এলাকা নিয়ে যখন নারায়ণগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসন ছিল তখন সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিমের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করেন নূর হোসেন। যার প্রমান পাওয়া যায় নূর হোসেনের ছেলের কুলখানিতে দুপুর বারোটা বাজেই নূর হোসেনের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে যান রেজাউল করিম। পরবর্তীতে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা যখন ফতুল্লার সঙ্গে যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসন করা হয় তখন এ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলমের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করেন নূর হোসেন। মুল টার্গেট ছিল সিদ্ধিরগঞ্জের গিয়াসউদ্দীন যেনো আবারো এমপি না হতে পারে।

যে কারনে সিদ্ধিরগঞ্জের থানা বিএনপির কমিটিই নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ লোকদের কমিটিতে রেখে গঠন করা হয়। সেখানে গিয়াসউদ্দীনের ঘনিষ্ঠজন থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই রাজু, সেক্রেটারি এমএ হালিম জুয়েল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাজেদুল হকের মত নেতাদের কমিটিতে রাখা হয়নি। তারা গিয়াসের অনুগামী ছিলেন বলেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটিতে তাদের না রেখে নূর হোসেনের আপন ভাইকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করেছিলেন তৈমূর আলম।

নূর হোসেনের গানম্যান ছিলেন আনোয়ার হোসেন আশিক। এই আশিককে নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিকদলের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে তৈমূর আলমের মাসদাইরের বাসায় অনুষ্ঠিত তৈমূর আলমের সমর্থনে শ্রমিকদলের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে সমর্থন দিয়ে আশিককে সেক্রেটারি বানায়। এই আশিক সাত খুনের ঘটনার পর সাত খুনের মামলায় আসামি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পান এবং আওয়ামীলীগের শ্রমিকলীগে যোগদান করেন। এই আশিককে তৈমূর আলমের গাড়িতে ওই সময় নিয়মিত দেখা যেতো। নূর হোসেনের গানম্যান হওয়ায় তৈমূর আলম তার গাড়িতে অন্য কোন কর্মী থাকলে তাকে নামিয়ে দিয়ে আশিককে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করার পর নতুন কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা চলছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের মাঝেও চলছে কার হাতে দেয়া যেতে পারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্ব। যার মধ্যে তৈমূর আলম খন্দকারের নামও আলোচনায় আসে। কিন্তু তার নাম ওঠে আসার পর নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। কারন তৈমূর আলম খন্দকারের অতীত এমন কর্মকান্ড নেতাকর্মীদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।