সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বরযাত্রীর সঙ্গে মিশে গিয়ে কনের বাড়িতে চুরি করতো চোর চক্রের এই সাত সদস্য। সেই সঙ্গে গণপরিবহনে যাত্রী বেশে চুরি করতো। অবশেষে র্যাব-১১ এর অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে সেই চোর চক্রের সাতজন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চোরাইকৃত ৫টি অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোন, একটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া কানের দুল এবং একটি হাই কনফিগারেশন ল্যাপটপ। ২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে র্যাব-১১ এর অপস অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, গোপনসূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া ও সিদ্ধিরগঞ্জের বাঘমারা এবং ঢাকার ডেমরা থানাধীন পূর্ব বক্সনগর এলাকায় র্যাব-১১ এর বিশেষ অভিযানে সংঘবদ্ধ চোর চক্রের ৭জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মোঃ শাহাজালাল ওরফে শাংখা, আব্দুল কাদির জিলানী, মোঃ সাদ্দাম, আরিফুল ইসলাম ওরফে মিঠু, মোঃ নুর উদ্দিন ওরফে বাবু, মোঃ সুজন ও মোঃ শাহিন মিয়া।
এ সময় তাদের দখল হতে চোরাইকৃত ৫টি অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোন, ১টি স্বর্ণের চেইন, ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ১টি হাই কনফিগারেশন ল্যাপটপ ও নগদ ৫ হাজার ৯’শ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এই চোর চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কখনো বিয়ে বাড়িতে বরযাত্রীর ছদদ্দবেশে আবার কখনো গণপরিবহনে সাধারণ যাত্রীর ছদ্দবেশে অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে স্বর্ণালংকার, মূল্যবান ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী তথা স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি ও নগদ টাকা চুরি করে আসছে।
র্যাব আরও জানায়, এটি একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র এবং মোঃ শাহজালাল ওরফে শাংখা এই চক্রের মূলহোতা। শাংখা মোঃ শাহজালালের খেতাবী নাম। এই চোর চক্র প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের চুরির কৌশল সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে।
চুরি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা বিয়ে বাড়িকে প্রধান টার্গেট হিসেবে নিয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে টার্গেট করার পর বিয়ে বাড়ি চিনে আসা এবং ঔ বিয়ে বাড়ি ও বিয়ের দিন-তারিখ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা জন্য তাদের দলের সদস্যদের মধ্য হতে একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অতঃপর তারা বিয়ের নির্ধারিত তারিখে বরযাত্রীর ছদ্দবেশে বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে।
যথারীথি বিয়ে বাড়ির বিভিন্ন ঘরে প্রবেশ করে সুবিধাজনক সময়ে মূল্যবান জিনিসপত্র যেমনঃ স্বর্ণালংকার, স্মার্টফোন, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ইত্যাদি চুরি করে। এভাবে চুরির একটি মূল্যবান বস্তু তাদের হস্তগত হওয়া মাত্রই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিয়ে বাড়ির বাইরে অবস্থানরত তাদের দলের অন্যান্য সদস্যের কাছে হস্তান্তর করে যেন মূল চোর ধরা না পরে।
এছাড়াও বিয়ে বাড়িতে তাদের অন্যতম টার্গেট হচ্ছে শিশু ও কিশোরী মেয়ে। বিয়ে বাড়িতে অতিথিদের ভীড়ের মুখে এই সমস্ত টার্গেট করা শিশু ও কিশোরীদের গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ছোঁ মেরে ছিড়ে নিয়ে থাকে। শিশু ও কিশোরীরা বিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন আনন্দে মেতে থাকায় অসাবধানতা বশতঃ এই চক্রের অন্যতম টার্গেট হয়ে থাকে। এভাবে সারাদিন ব্যাপী বিয়ে বাড়িতে চুরি সম্পন্ন করে সেখান থেকে সু-কৌশলে চোরাইকৃত মালামালসহ বের হয়ে আসে।
র্যাব জানায়, এই সংঘবদ্ধ চোর চক্রের অন্যতম আরেকটি টার্গেট হচ্ছে বিভিন্ন গণপরিবহন যেমনঃ বাস, ট্রেন ও লঞ্চ ইত্যাদি। এই সমস্ত গণপরিবহনে তাদের প্রধান টার্গেট পাঞ্জাবী ও ঢোলা কাপড় পরিহিত বিভিন্ন সাধারণ যাত্রী। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে টার্গেটকৃত ব্যক্তির চারপাশে তারা অবস্থান নেয়। অতঃপর উক্ত ব্যক্তির পাঞ্জাবী বা ঢোলা কাপড়ের পকেট হতে ঔ ব্যক্তির অজ্ঞাতসারে মোবাইল, মানিব্যাগ ও নগদ টাকা ইত্যাদি চুরি করে। চুরির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া মাত্রই পূর্বের ন্যায় চোরাইকৃত মালামাল দলের অন্যান্য সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে যেন মূল চোর ধরা পড়লেও তার কাছে চোরাই মালামাল পাওয়া না যায়।
মোঃ শাহজালাল ওরফে শাংখার নেতৃত্বে এই চোর চক্র ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় উল্লেখিত অভিনব কৌশল প্রয়োগ করে ছদ¥বেশে তাদের চুরি কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছে।
পরবর্তীতে তারা চোরাইকৃত মালামাল মোঃ শাহজালাল ওরফে শাংখার নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে সারুলিয়া, ডেমরায় অবস্থিত জুয়েলারি দোকান সহ বিভিন্ন বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।
র্যাব জানায়, বিগত প্রায় ১০ বছর যাবৎ এই সংঘবদ্ধ চোর চক্রটি উক্ত পেশায় জড়িত এবং তাদের চাতুর্য্যরে কারণে বিগত দিনে তারা কখনোই ধরা পড়েনি। চুরিই তাদের একমাত্র পেশা। সম্প্রতি চোর চক্রের প্রধান শাহজালাল ওরফে শাংখা তার শ্যালক আব্দুল কাদের জিলানীকে চুরি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে এই পেশায় নিয়োজিত করেছে। এভাবে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন নতুন সদস্য তাদের দলের সাথে যুক্ত করে থাকে।
র্যাব-১১ এর অনুসন্ধানে চুরি সংক্রান্ত ঘটনার সত্যতা পেয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া ও সিদ্ধিরগঞ্জের বাঘমারা এবং ডিএমপি, ঢাকার ডেমরা থানাধীন পূর্ব বক্সনগর এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ চোর চক্রের মূলহোতাসহ উপরোক্ত ৭ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। সংঘবদ্ধ চোর চক্র গ্রেপ্তারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।