সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দীন আহমেদকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। এ বিষয়ে বন্দর ইউনিয়নবাসীকে ধৈর্য্য ধারণের অনুরোধ জানিয়েছেন চেয়ারম্যান এহসান উদ্দীন আহমেদ।
এর দুদিনের মাথায় নারায়ণগঞ্জের একটি মিডিয়াতে এহসান উদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন সাবেক ওই সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। তবে ইউসুফের নানা অভিযোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন বন্দর ইউনিয়নবাসী।
নারায়ণগঞ্জের একটি জনপ্রিয় অনলাইনে মোহাম্মদ ইউসুফের সাক্ষাৎকারের ভিডিও প্রকাশিত হলে সেখানে বন্দর ইউনিয়নের লোকজন নানা প্রশ্ন তুলেন। মোহাম্মদ ইউসুফের অভিযোগগুলোতে সরাসরি বন্দর ইউনিয়নবাসী মিথ্যা বানোয়াট দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে নিজেকে বাঁচাতেই মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়া চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা বানোয়াট অভিযোগ তুলছেন বলেও দাবি করছেন।
সেখানে ইউসুফ দাবি করেছেন- চেয়ারম্যান এহসান পরিষদের সচিব ইউসুফকে পৃষ্ঠপোষকতা করেননি। ঠিকমত পরিচালিত করেনি। এ বিষয়ে ইউনিয়নবাসীর প্রশ্ন চেয়ারম্যান তাকে পৃষ্টপোষকতা কেন করবে? সরকার তাকে নিয়োগ দিয়েছে, বেতন দিয়েছে কি চেয়ারম্যানের পৃষ্টপোষকতা নেওয়ার জন্য?
চেয়ারম্যানের দুর্নীতির বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কিনা এমন বিষয়ে ইউসুফ দাবি করেছেন তিনি একজন মেম্বারের কাছে চেয়ারম্যানের নামে নালিশ দিয়েছেন এবং হেলেনা নামের একজন চৌকিদারের কাছেও নালিশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন ওঠেছে চেয়ারম্যানের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কি তাহলে চৌকিদার?
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমানের টাকাও নাকি চেয়ারম্যান খেয়ে ফেলেছেন এমন দাবি করেছেন ইউসুফ। এ বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কিভাবে জানতে পারলো তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।
মোহাম্মদ ইউসুফের দাবি- চেয়ারম্যানের দায়েরকৃত মামলায় পিবিআই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে এবং চেয়ারম্যান এহসানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ইউসুফের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলেও তিনি দাবি করেন।
কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে এখনও আদালতে ওই প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়নি। পরবর্তী ধার্য্য তারিখে প্রতিবেদন উত্থাপন করা হবে। তাহলে ইউসুফ জানলেন কিভাবে তার বিরুদ্ধেই প্রতিবেদন দাখিল করেছে পিবিআই?
এহসান উদ্দীন আহমেদের পিতা রাজাকার ছিলেন এমন তথ্যের বিষয়ে ফেসবুকে মন্তব্য ওঠেছে এটা মোহাম্মদ ইউসুফের নিছক বানোয়াট তথ্য। যার কোন ভিত্তি নেই।
সাবেক সচিব দাবি করেছেন তাকে গোপন ভিডিও ধারণ করা হতো। স্থানীয়দের প্রশ্ন সে দূর্নীতি না করলে তাকে গোপন ভিডিও ধারণ করার কারন কি? আর সে সৎ হলে ভিডিও ধারণ করলে সমস্যা কি ছিল?
সাবেক সচিব দাবি করেছেন- তিনি নিবন্ধন ফি ও ট্রেড লাইসেন্স ফি এর টাকা সরাসরি চেয়ারম্যানের হাতে দিতেন। এলাকাবাসীর প্রশ্ন সরকারি টাকা চেয়ারম্যানের কাছে কেন দেয়া হবে? ইউনিয়ন পরিষদের কি নিজস্ব একাউন্ট নাই? সরকার নিয়োগ দিছে কেন? এই অর্থ তো সরকারি ব্যাংক হিসাবে জমা রাখবেন সচিব। আর পরিষদের দাপ্তরিক কাজ ও হিসাবপত্র কে রাখবে?
রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কেন সাসপেন্ড হয়েছিলেন এই সচিব সেটাও জানতে চেয়েছে বন্দরের লোকজন।
অন্যদিকে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দরের বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দীন আহমেদকে জন্মনিবন্ধন সনদ ও ট্রেড লাইসেন্স খাতের ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। এর আগে এই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইউসুফ মিয়াকেও বরখাস্ত করা হয়েছিল।
২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
এর আগে একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয় বন্দর ইউনিয়ন পরিষদ সচিব ইউসুফ মিয়াকে।
এ ব্যাপারে এহসান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অর্থ আত্মসাতের চারটি রিপোর্ট তদন্তাধীন রয়েছে। এ ছাড়া পিবিআই অভিযোগের তদন্ত করছে। এগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বরখাস্ত করা দুঃখজনক। টাকা আত্মসাতের সঙ্গে ইউপি সচিব জড়িত থাকলে চেয়ারম্যান হিসেবে আমিও দায় এড়াতে পারিনা।’
অন্যদিকে বরখাস্তের পর বন্দর ইউনিয়নবাসীকে উদ্দেশ্য করে চেয়ারম্যান এহসান উদ্দীন আহমেদ তার ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস পোস্ট করার পর তা রীতিমত ভাইরাল হয়ে যায়। যেখানে হাজার হাজার মানুষ তার পক্ষে সমর্থন যোগান। সেই সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। এহসান উদ্দীন আহমেদ সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। টানা দুইবার তিনি নির্বাচন করে এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন।
চেয়ারম্যান তার ফেসবুকে লিখেন, ‘বন্দর ইউনিয়নবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। হাজারো প্রমাণ হাতে থাকার পরও আজ সত্য প্রতিষ্ঠায় মনে হয় ব্যর্থ হয়ে গেলাম।’
‘আমি হাল ছেড়ে দেয়ার মতো মানুষ না। আমি অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করার মানুষ না। আমি দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করার মতো মানুষ না। আমি মিথ্যা কথা বলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মানুষ না। আমি কারও হক নষ্ট করে অর্থ উপার্জন করার মতো মানুষ না। আমি জীবনে কাউকে এক টাকা ঠকিয়েছি এমন কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন না ইনশাআল্লাহ।’
‘আস্থা আর বিশ্বাস ছাড়া পৃথিবীতে কোনো প্রতিষ্ঠানই চলতে পারে না। পিতার ওপর পুত্রের আর পুত্রের ওপর পিতার এবং স্বামীর ওপর স্ত্রী আর স্ত্রীর ওপর তার স্বামীর যদি আস্থা-বিশ্বাস না থাকতে তাহলে পৃথিবীতে থেকে সংসার নামক শব্দটি এতদিনে মুছে যেত।’
‘একজন কাজের ছেলের হাতে আমার বাচ্চাকে রেখে যাওয়ার পর সে যদি আমার সেই বাচ্চাকে গলা টিপে হত্যা করে তার দায় আমি বাবা নিতে পারিনা।’
‘৩৩ লাখ টাকা আমার পারিবারিক ঐতিহ্য আর সম্মানের প্রেক্ষাপটে খুবই সামান্য, আমার কথা না হয় বাদই দিলাম।’
‘বাবার কাছ থেকে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সামান্য জমি বিক্রি করে দিলেই ব্যবস্থা হয়ে যেত। এতে করে প্রকৃত অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতক সচিব পার পেয়ে যেত।’
‘পিবিআই এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে এই বিষয়ে ওপর তদন্ত চলছে। আমি আমার ইউনিয়নবাসীকে অল্প কিছুদিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
‘আমি প্রার্থনা করছি যাতে আল্লাহ সুবহানাআল্লাহ আমাকে সব ধরণের অন্যায়, দুর্নীতি, বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতারণার বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।