সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনায় ফতুল্লা থানা এলাকার বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সফল কার্যকরী পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান। এ ছাড়াও তিনি এমপি একেএম শামীম ওসমানের জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাদ জুমআ ফতুল্লার রামারবাগ এলাকা ও আশপাশের তিনটি এলাকার মসজিদগুলোতে এমপি শামীম ওসমানের দীর্ঘায়ু কামনা করে এবং তার সুস্বাস্থ্য কামনা করে দোয়া পালন করা হয়।
একই সঙ্গে ওসমান পরিবারের সকল সদস্যদের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করা হয়। ওসমান পরিবারের প্রয়াত সদস্যদেরও আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
সেই সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফেরাত কামনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির প্রয়াত সকল আইনজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং সমিতির সকল আইনজীবী ও তাদের পরিবারের সকল সদস্যদের জন্যও দোয়া পালন করা হয়।
২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জুমআ ফতুল্লার রামারবাগ কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদ, লালখা বায়তুল ওসমান শাহী জামে মসজিদ, পূর্ব শেয়ারচর হাজী রেকমত উল্লাহ জামে মসজিদ, জাকির আলী বায়তুল নূর জামে মসজিদ, লালখা ভিটা সৈয়দ রেজাউল করিম মাহামুদ হোসেন জামে মসজিদ, দক্ষিণ শিয়ারচর বাইতুল মুকাদ্দেস জামে মসজিদ ও দক্ষিণ শেয়ারচর বায়তুল নূর জামে মসজিদে শামীম ওসমানের দীর্ঘায়ু ও সুস্থ্যতা কামনা করে দোয়া পালন করা হয়। ওই সময় দোয়া মাহফিলে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, মুরুব্বীগণ ও সকল শ্রেণির মুসল্লীগণ উপস্থিত ছিলেন।
এখানে আরও উল্লেখ্যযে, গত বছর এমপি শামীম ওসমান অসুস্থ্য হলে তার সুস্থ্যতা কামনা করে ৩১ মে পবিত্র মাহে রমজানের আখিরী জুমআ নামাজের পর নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার উপরোক্ত ৭টি জামে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন আইনজীবী আব্দুল মান্নান।
এছাড়াও অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান জাতীয় দিবস, আওয়ামীলীগের দলীয় কর্মসূচি এবং এমপি শামীম ওসমানের সকল সভা সমাবেশে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে যোগদান করেন। একই সঙ্গে আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত সকল কর্মসূচিতেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও আওয়ামীলীগ প্যানেলের পক্ষে জোড়ালো নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন এই আইনজীবী নেতা।
জানাগেছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের সন্তান সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ৫৯তম জন্মদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনের গন্ডি পেরিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করা শামীম ওসমান। ছাত্র সংগঠন দিয়ে রাজনীতির হাতেখড়ি তাঁর। রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে রক্তে রাজনীতির নেশা ছিল শৈশবকাল থেকেই। বর্ণাঢ্য ৫৮টি বসন্ত পেরিয়ে ৫৯‘তে পা রাখলেন তিনি।
ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনক, বাংলাদেশের প্রথম সংসদের সদস্য একেএম সামসুজ্জোহা ও ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা দম্পতির কোল আলো করে ১৯৬১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শামীম ওসমান। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শামীম ওসমান জাতীয় সংসদে তৃতীয় বারের মতো প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ)-৪ আসন। ব্যক্তিগত জীবনে শামীম ওসমান এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। একমাত্র ছেলে অয়ন ওসমান গেলো বছর বাবা হওয়ার মধ্য দিয়ে দাদাও হয়েছেন শামীম ওসমান।
ওসমান পরিবারের কর্ণধার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খান সাহেব ওসমান আলীর ছোট নাতি শামীম ওসমান। দাদা থেকে শুরু করে তিন ভাই একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। শামীম ওসমানে বড় ভাই একেএম নাসিম ওসমান চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, মেঝ ভাই বিকেএমইএ’র বর্তমান সহ বেশ কয়েকবার নির্বাচিত সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অবস্থায় শামীম ওসমান ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে পোস্টার লাগাতে গিয়ে পুলিশের বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়েছিলেন। ৮০’র দশকের প্রথমভাগে সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে তার রাজনৈতিক পথচলা শুরু। ৮১ সালে তিনি তোলারাম কলেজে ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও কাঁপিয়েছেন প্রভাবশালী এই নেতা। সে সময় স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম করতে গিয়ে একাধিকবার কারাবরণ করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন শামীম ওসমান। ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে, গোলাম আযম সহ স্বাধীনতা বিরোধীদের নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধ ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে, নারায়ণগঞ্জের কয়েকশ’ বছরের কলঙ্ক টানবাজার পতিতাপল্লী উচ্ছেদ ও পুণর্বাসন করে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি।
পাশাপাশি ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর বেগম খালেদা জিয়ার লং মার্চ আটকে দিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত হন শামীম ওসমান। ১৯৭৮ সালে সরকারি তোলারাম কলেজের ভিপি থাকাকালীন সময়ে একইভাবে চাষাড়ায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গাড়িবহর আটকে দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর থেকেই জাতীয় রাজনীতির মাঠে বলিষ্ঠ নেতা হয়ে উঠেন শামীম ওসমান।
নিজ সংসদীয় আসনে উন্নয়নের ক্ষেত্রেও রয়েছে তার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়ে নারায়ণগঞ্জের ডিজিটাল টেলিফোন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড নির্মাণ, ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সিদ্ধিরগঞ্জে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও গ্যাস সমস্যার সমাধান, বক্তাবলীতে বিদ্যুৎ সংযোগ, তোলারাম কলেজে অনার্স মাস্টার্স কোর্স চালু, রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন, নতুন আদালত ভবন, জেলা কারাগার নির্মাণ, শামীম ওসমান এমপি থাকার সময়ে বড় কাজগুলোর অন্যতম। সে সময় তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন নিজ সংসদীয় আসনে।
দ্বিতীয় দফায় ২০১৪ সালে এমপি র্নিবাচিত হওয়ার পর উন্নয়নের মাত্রা দ্বিগুন ছাড়িয়ে যায়। টানা দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। শামীম ওসমানের নিজ ভাষ্য মতে, দ্বিতীয়বার এমপি হয়ে তিনি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন। যার মধ্যে ৫৫৮ কোটি টাকার (চলমান) ডিএনডি প্রকল্প অন্যতম। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে পর পর দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়ে তৃতীয়বারের মতো সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন দাপুটে রাজনীতিক আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান।