সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
৯০’দশকের সহিংস রাজনীতির চিত্র তুলে ধরে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, ‘২০০১ সালের আগে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র ছিল তার চেয়ে বেশি অস্ত্র একা আমার নিজের কাছেই ছিল। আজকে আমার গাড়িতে অস্ত্র আছে কি না তা আমি নিজেও জানি না।’
১ মার্চ রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে জেলা পুলিশের আয়োজনে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২০’ এর আলোচনা সভায় শামীম ওসমান তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম।
অতীত সহিংস রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, আমার রাজনৈতিক দর্শন আগে ছিল একরকম। নিজের জন্য করতাম। জিন্দাবাদ শুনতে ভালো লাগতো। ২০০১ সালের পরে আমার এই চিন্তা পরিবর্তন হয়েছে।
‘আমি ইদানীং একটু ওয়াজে যাই। অনেকেই এ নিয়ে টিটকারী মারে। বাট আমি কোরআন শরীফটা পড়ি। ২২ বছর ধরে তাহাজ্জুতটা ছাড়ি নাই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের প্রসংশা করে শামীম ওসমান বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি সংসদ সদস্য হিসেবে নয়, জনগণ হিসেবেই তাদের প্রত্যেকটি কথায় টের পাই, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে চান।
তিনি বলেন, এসপি সাহেবকে দেখালাম, গতকালকে একটা লিস্ট করেছিলাম। সেখানে দেখলাম, ৭৫ এর পর থেকে ৫০ জনের উপরে মারা গেল। একটা হত্যার বিচারও পাই নাই। ২০০০ সালে বোম ব্লাস্ট হলো, আমরা মারা গেলাম, বিচার পাই নাই।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে এমপি শামীম ওসমান বলেন, ‘কালকে বাঁচবো কিনা জানি না। আপনারা পুলিশ। সম্মানিত একটা পেশা এটা। পৃথিবীতে অত্যন্ত সম্মানজনক একটি পেশা এটি। এই দেশেও হবে। হয়ে আসছে। ২০১৩-১৪ সালে আপনাদের ওপর যে কি নৃশংস হামলা হয়েছে এটাতো আমাদের চোখেই দেখা। জনগণ যদি এগিয়ে না আসে তবে পুলিশের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। সারা দেশে যখন আগুন সন্ত্রাস চলছে তখন এই নারায়ণগঞ্জে একটা কিছুও কেউ করতে পারে নাই। এই ক্রেডিট নারায়ণগঞ্জের মানুষের এবং পুলিশের যৌথভাবে।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি তুলে ধরে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘সে সময় সদর থানার ওসি ছিল মঞ্জুর কাদের। তার ওপর একটি বাড়ি থেকে এসে হামলা চালানো হলো। ওই বাড়ি থেকে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা এসে ওর উপর হামলা করলো। তখন চাষাড়ার সকল হকারকে আমরা পলিটিক্যাল মটিভেশন করেছিলাম। এর জন্য হকারদের প্রতি আলাদা একটা টান আছে। তারা লাঠি নিয়ে পাহারা দিত। যে মুহূর্তে পুলিশের উপর অ্যাটাক হয়েছিলো এই টোটাল হকাররা লাঠি নিয়ে তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলেছিল। এ কারণেই ওরা কিন্তু নারায়ণগঞ্জে কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে নাই।’
‘প্রশাসনের মধ্যে দলবাজিটা আমি পছন্দ করি না। আমি মনে করে আওয়ামী লীগ করতে কোনো কোয়ালিটি হতে পারে না। আপনি যোগ্যতা সম্পন্ন এটাই আপনার কোয়ালিটি। আমি রাজনীতিবীদ। কিন্তু চোর, এমন রাজনীতিবীদ থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। এরা দেশকে খেয়ে ফেলে।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন- নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, আতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-অঞ্চল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, জেলা পুলিশ কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি ডা. শাহ নেওয়াজ, র্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, সদর থানা পুুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ফারুক, বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, সোনারগাঁ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান প্রমুখ।