সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে অতিরিক্ত মুল্যে মাস্ক বিক্রির অভিযোগে বিভিন্ন ফার্মেসীতে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানে ৮টি ফার্মেসীকে ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অপর একটি ফার্মেসীর কর্মচারীকে কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
১০মার্চ মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মেহেদী হাসান ফারুক, আব্দুল মতিন খান, নাছরিন আক্তার যৌথভাবে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে কালিরবাজারের নুরুল মেডিকেল কর্ণার, রাজু মেডিকেল কর্ণার, হাসান ফার্মেসী, হক ফার্মেসীসহ ৮টি ফার্মেসীকে মোট ১ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া অতিরিক্ত মূল্যে মাস্ক বিক্রি করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নুরুল মেডিকেল কর্ণারের কর্মচারী বিশ্বজিৎ দাসকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন আদালত।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মেহেদী হাসান ফারুক বলেন, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনের নির্দেশে আমরা ৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়েছি। করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে ফার্মেসীগুলো মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মূল্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে সাধারণ মানুষদের মনে একটি আতংক সৃষ্টি হয়েছে সেটি দূর করতেই এই অভিযান। অভিযানে ৮ ফার্মেসীকে মোট ১ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত মূল্যে মাস্ক বিক্রি করার অপরাধে ১ জনকে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল মাস্কসহ বিভিন্ন হ্যান্ড সেনেটাইজারের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই আজ বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন এসব সামগ্রীর মূল্য নির্ধারণ করে একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। মূলত আজ আমরা এসব সামগ্রীর সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে একটি তালিকা সকল ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। পরবর্তীতে কেউ যদি এগুলো নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আরো শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালীবাজার ওষুধ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, সাধারণ মানুষের যেনো ভোগান্তি না হয় তাই আজকে সরকারের পক্ষ থেকে এখানকার ওষুধের দোকানগুলোতে যে অভিযান পরিচালনা হয়েছে এটা ভালো সিদ্ধান্ত। আমি চাই এই মূহুর্তে যেনো নারায়ণগঞ্জে কোথাও অধিক মূল্যে মাস্ক বিক্রি না হয়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দুই জনের সংস্পর্শে আসায় চারজন ও একজন চীনা নাগরিককে কোয়ারেন্টাইনে (পর্যবেক্ষণে) রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। তাদের নিজ বাড়িতেই বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে। তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয় বলেও জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যারা দেশে ফেরেন তাদের ১৪ দিন স্বাভাবিক পর্যবেক্ষনে রাখা হয়। সে হিসেবে চীনা এক নাগরিককে রাখা হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত দুইজনের পরিবারের চারজনকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা কিন্তু এখনো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয়। কোয়ারেন্টাইন মানে হচ্ছে, সন্দেহভাজনদের ১৪দিন বদ্ধ ঘরে পর্যবেক্ষণে রাখা।
অন্যদিকে আগের দিন সোমবার নারায়ণগঞ্জে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দুইজন রোগী শনাক্তের পর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে জেলা মাল্টিসেক্টরাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনকে সভাপতি এবং জেলা সিভিল সার্জনকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি করা হয়েছে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জে কোয়ান্টারাইনের জন্য প্রতিটি সরকারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পাঁচ শয্যা বিশিষ্ট কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া করোনা আক্রান্ত কিংবা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের চিকিৎসা প্রদানে শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকায় নির্মিত চীফ জুডিশিয়াল কোর্ট (সিজেএম) ভবনে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে বেশি নতুন এই রোগ নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ৩ জন করোনা ভাইরাসে রোগী শনাক্তের পরপরই গোটা দেশেই হঠাৎ মাস্ক বিক্রি ও দাম বেড়ে যায়। তাছাড়া মাস্কের সংকটও দেখা দেয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজমান করোনা ভাইরাস আতঙ্ককে পুঁজি করে বিভিন্ন ওষুধের দোকানে সার্জিক্যাল মাস্ক, হেক্সিসল এবং হ্যান্ড-স্যানিটাইজারের মতো সামগ্রী অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। মাত্র ২০-৩০ টাকার মাস্ক বিভিন্ন ফার্মেসীতে ও ভাসমান বিক্রেতারা ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া যায়।