সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের উদ্যোগে ও বন্দর উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের পূণর্বিন্যাস করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারনে জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহিত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মার্চ বুধবার দুপুরে বন্দর উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত আকারে কিভাবে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানটি পালন করা যায় এ ব্যাপারে বন্দরের স্থানীয় সকল জনপ্রনিধিদের সাথে আলোচনা করে বিস্তারিত কর্মসূচি পরবর্তী আরেকটি সভায় তা জানানো হবে। বুধবার রাতের মধ্যেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আকারে প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
সভায় করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কোন প্রকার গুজবে কান না দিয়ে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে এবং সরকারীভাবে প্রচারিত নির্দেশনা মেনে চলতে সকলের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে।
বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শুক্লা সরকার এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি একেএম সেলিম ওসমান বলেন, বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। স্বাধীনতার পর ২১টি বছর বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এখনো ৭১’র পরাজিত শক্তি রাজাকার আলবদর ও তাদের দোসরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে ছিলাম আমরা হয়তো এক সময় জীবিত থাকবো না। কিন্তু আমার আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তৈরি করে যাবো। আমাদের ভবিষ্যতই প্রজন্মই বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের থাকতে দিবেনা। আর এই কাজটি আমাদের এই মুজিববর্ষেই করতে হবে। প্রতিবছর আমার জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবস পালন করি। কিন্তু এবারেরটি হলো মুজিববর্ষ। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন উপলক্ষ্যে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সারা বছর জুড়েই বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের কথা, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জিবনের কথা প্রতি মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারবো। আমরা সেই ভাবেই প্রস্তুত হচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এক সময় আমরা মোটা ভাত ও মোটা কাপড়ের জন্য বঙ্গবন্ধুর আহবানে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে ছিলাম। এখন বাংলাদেশ থেকে আরএমজি সেক্টরের মাধ্যমে পোশাক রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ এখন আর না খেয়ে মরে না। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পা রেখেছি। তাই এই মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দেশে যাতে করে কোন মানুষ গৃহহীন না থাকে। এই মুজিব বর্ষে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধি এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে আগামী ১৭মার্চ জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবস থেকে আমরা এটা শুরু করবো।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সকলকে সচেতন থাকার আহবান রেখে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে চীন থেকে পরে সেটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এটি বিশ্ব অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ভাইরাসের কারনে অনেক দেশে আমদানী রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের বড় অর্থনৈতিক খাত গার্মেন্টস সেক্টর, ফরেন রেমিডেন্স এবং ওষুধ শিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। হয়তো এটা আরো ব্যাপক আকার ধারন করতে পারে। হয়তো আমরা রোগে আক্রান্ত হবো না। কিন্তু যেহেতু বিশ্বের ১০৩টি দেশে আমদানী রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেহেতু বিশ্ব বাজারে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে এবং তার প্রভাব বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টরেও পড়তে পারে। তবে আমার বিশ্বাস আমরা যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনা মেনে চলতে পারি তাহলে আমরা তেমন কোন ক্ষতির সম্মুখিন হতো না। তাই আপনাাদের সকলের প্রতি অনুরোধ আপনারা কেউ কোন প্রকার গুজবে কান দিবেন না। সরকারী ভাবে প্রচারিত সর্তকতা অবলম্বন করুন এবং জ্বর ঠান্ডা কাশি হলে দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহন করুন। এতো আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এমএ রশিদ, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা বেগম শান্তা, বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল কাদির বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ.ক.ম নুরুল আমিন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমএ সালাম, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান সহ বন্দর থানা এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলীর সদস্যরা।
উল্লেখ্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারী বিকেলে বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন সুরুজ্জামান টাউয়ারের রাত্রি কমিউনিটি সেন্টারে আমরা উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ বন্দর থানা এলাকার ৭৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা সহ ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ১৭মার্চ বন্দর সমরক্ষেত্র মাঠে আনুমানিক ২০ হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে মুজিবর্ষের অনুষ্ঠান উদযাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।
যার পরিপ্রেক্ষিতে ৫মার্চ উক্ত নেতৃবৃন্দরা উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার কাছে নিজ উদ্যোগে তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচী জমা দিয়ে প্রস্তুতি গ্রহন করা হচ্ছিলো। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানের পূর্নবিন্যাস করা হলে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসামনের উদ্যোগ ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোও পূণর্বিন্যাস করা হয়েছে।