গরীবের পাশে কায়সার, এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশি বাকিরা কোথায়?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসন থেকে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন ১৬ জন নেতা। নির্বাচনের আগে কেউ বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা, কেউ সাধারণ মানুষকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি, কেউ চায়ের দোকানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দিয়েছেন আড্ডা, কেউ গণসংযোগ করতে গিয়ে গরীব মানুষের ঘরে গিয়েছেন কিছু টাকাও তুলে দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন শেষে তারপর আর তাদের ছায়াও সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা নাই। এমনি এখন পরিস্থিতি যখন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের না খেয়ে মরার দশা। কারন করোনাভাইরাসের পাদুর্ভাবের কারনে সরকার সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। এতে সকল আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে কেবল দেখা গেল আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে। কিন্তু যারা জনপ্রতিনিধি হতে জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন বলে ধুয়া তুলেছিলেন সেইসব মনোনয়ন প্রত্যাশি নেতারা এখন কোথায়?

স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, সম্প্রতি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত উপজেলার মোগড়াপাড়া এলাকায় গরীব দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। সেই সঙ্গে তার অনুগামী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবুও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক ও স্যানিটাইজার সহ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তবে সবচেয়ে হতাশ করেছেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। যিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে গত নির্বাচনে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এখনও গরীব মানুষের পাশে দাড়াননি।

এদিকে সোনারগাঁয়ে বেশ আলোচিত ও প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামকেও সোনারগাঁয়ে গরীব দুঃস্থ মানুষের পাশে দাড়াতে দেখা যায়নি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন। কিন্তু তিনিও জনগণের পাশে নেই।

একইভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুও গত নির্বাচনে এই আসন থেকে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন। তিনি নির্বাচনের বছর খানিক আগে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতি সপ্তাহে বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা দিতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও পরামর্শ দিতে দেখা যাচ্ছেনা বিরুকে। অথচ তিনি একজন চিকিৎসক। খাদ্য সামগ্রী বিতরণ তো দুরের কথা তার ছায়াও সোনারগাঁয়ে দেখা যাচ্ছেনা।

এদের ছাড়াও এই আসন থেকে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, তার সহধর্মিনী জেলা মহিলা লীগের সভাপতি প্রফেসর শিরিন বেগম, জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য অ্যাডভোকেট নূর জাহান বেগম, অর্থনীতিবিদ ড. আনোয়ারুল কবির, লন্ডন প্রবাসি ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল, কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিনা আক্তার এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন সাহা।

যদিও খোকন সাহা সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে কখনই ছিলেন না। নির্বাচনের আগে ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলামকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করছিলেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাশে থাকবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি মহামারিতে নাই গরীব মানুষের মাঝেও। অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া জনগণের পাশে দাড়াবেন এমনটা সোনারগাঁয়ের মানুষ প্রত্যাশাও করেন না। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন কর্মসূচিতে এবং জনসেবামুলক কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন ড. সেলিনা আক্তার। তার দেখাও নাই বর্তমানে। যারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে চান সেইসব এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকা নেতাদের দেখা নাই সাধারণ গরীব অসহায় মানুষের পাশে। নির্বাচনের আগে এসব নেতাদের একেকজনের কর্মকান্ড দেখে মনে হয়েছিল তাদের মত জনদরদি নেতা আর কেউ নাই। কিন্তু নির্বাচনে যখন মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন এবং এমপি হতে পারেননি তারপর থেকে সোনারগাঁয়ে তাদের ছায়াও দেখা যায়নি। বর্তমানে করুণ এই পরিস্থিতিতেও তাদের অনুপুস্থিতি স্থানীয় মানুষের মাঝে তাদের ভেতরের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। স্থানীয়রা বলছেন তারা কি আসলেই জনগণের সেবক হতে এসেছিলেন নাকি শোষণের আশা নিয়ে এমপি হতে চেয়েছিলেন?