শামীম ওসমানের অনুদান: মহামারিতে জনগণের পাশে নাই সাবেক এমপি, যারা এমপি হতে চান!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমান তার নির্বাচনী এলাকার অসহায় মানুষের জন্য ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অনুদান ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এই আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন আহম্মেদ ফেসবুক লাইভে এসে জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়ে তার দায়িত্ব শেষ করেছেন। দেখা নেই সাবেক এমপি সারাহ বেগম কবরীর। একই সঙ্গে আওয়ামীলীগ বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনের এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশি নেতারাও নেই জনগণের পাশে। গরীব অসহায় মানুষের বিপদে শামীম ওসমান ছাড়া বাকিদের দেখা যাচ্ছেনা জনগণের মাঝে।

মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি বেসরকারি সহ সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের নিম্ম আয়ের মানুষের আয়ের সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে। দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের জীবিকা নির্বাহের কোন সুযোগই নেই। এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান এমপি একেএম শামীম ওসমান তার নির্বাচনী এলাকার অসহায় মানুষের জন্য ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অনুদান ঘোষণা করেছেন যা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। সেই সঙ্গে তার একমাত্র ছেলে একেএম অয়ন ওসমান করোনা ভাইরাসের শুরু থেকেই মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেছেন। জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমেও এক হাজার এসব দ্রব্য বিতরণ করেছেন অয়ন ওসমান। একই সঙ্গে তার পক্ষ থেকে নিয়মিত ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও সদরের বিভিন্ন এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একইভাবে শামীম ওসমানের সহধর্মিনী সালমা ওসমান লিপি ও তার পক্ষ থেকে গরীব অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে নিয়মিত।

এদিকে ৩ এপ্রিল শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জবাসী সহ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ফেসবুক লাইভে এসে বক্তব্য রেখেছেন এ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। তবে তিনি অনুদান দিচ্ছেন বা দিবেন এমন কোন কথা বলেননি। তিনি বলেছেন বিপদে লোক দেখানো সহযোগীতা নেয় মন থেকে আড়ালে থেকেই মানুষের পাশে দাড়ানো যায়। তবে বিএনপির এই সাবেক এমপি তার নির্বাচনী এলাকার কোথাও প্রকাশ্যে কোন গরীব অসহায় মানুষের হাতে সহায়তা তুলে দেননি। ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। তবে নির্বাচন নাগাদ তাকে রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় দেখা যায়। বিএনপির রাজনীতি করলেও দলের আন্দোলন সংগ্রামে তার কোন ভুমিকা নাই। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদে রয়েছেন।

একইভাবে শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। যিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীন শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হোন। পরাজিত হওয়ার পর তিনি নিয়মিত দাবি করেছিলেন তাকে পরাজিত করানো হয়েছে। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি। গত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি জেলা ও থানার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদে রয়েছেন। শিল্পপতি এই বিএনপি নেতাকে করোনাভাইরাসের সময়ে গরীব অসহায় মানুষের পাশে এসে দাড়াতে দেখা গেল না।

এ ছাড়াও এ আসনের সাবেক এমপি সারাহ বেগম কবরীকে সেই ২০১৪ সালের পর থেকে ফতুল্লাবাসীর মাঝে দেখা যায়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ফতুল্লায় তিনি ব্যাপক বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু ফতুল্লাবাসীর জন্য তিনি কি কি উন্নয়ন করে গেছেন সেই প্রশ্নের উত্তর বিরাট ফ্যারাক। এখন মহামারিতেও ফতুল্লাবাসীর জন্য তার কোন দরদ দেখা যাচ্ছেনা। গত নির্বাচনে তিনি ঢাকা থেকে দলের মনোনয়ন ক্রয় করেছিলেন। যদিও কেউ কেউ তখন জানিয়েছিলেন তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকেও মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন।

শিল্পপতি সফর আলী ভূঁইয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক পদে এখনও বহাল রয়েছেন। যদিও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন সেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই। তবে তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রথমে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের ২১ দিন আগে আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান করেন গিয়াসউদ্দীন। তখন সফর আলীর মনোনয়ন বাতিল করে গিয়াসউদ্দীনকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। গিয়াস সেই নির্বাচনে শামীম ওসমানের সঙ্গে বিজয়ী হোন। সেই সফর আলী ভুঁইয়াকে জনগণের মাঝে দেখা যাচ্ছেনা মহামারিতেও।

এ ছাড়াও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ ও কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদা হাসনাত। যার মধ্যে পলাশকে ইতিমধ্যে ছোট পরিসরে খাদ্য সামগ্রী বিতরণে দেখা গেলেও নাহিদা হাসনাতকে মহামারিতে জনগণের পাশে দেখা যাচ্ছেনা। এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে নিয়মিত কাজ করা কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির নেতা সালাউদ্দীন খোকা মোল্লাকেও জনগণের পাশে দেখা যাচ্ছেনা মহামারিতে। অথচ তারা এ আসনের এমপি হয়ে জনগণের সেবা করবেন বলে নানা প্রতিশ্রুতি দিতেন।

একইভাবে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি জেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ, সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল হাই রাজু, সাবেক সহ-সভাপতি পারভেজ আহমেদকেও জনগণের পাশে দেখা যাচ্ছেনা। অথচ তারা গত নির্বাচনেও মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এ আসন থেকে মনোননয়ন প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন শাহিনা আক্তার মুক্তি। তিনি সাবেক এমপি কমান্ডার সিরাজুল ইসলামের কন্যা। মুক্তিকেও জনগণের পাশে দাড়াতে দেখা যাচ্ছেনা।