সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান তার নির্বাচনী এলাকার অসহায় দিনমজুর মানুষের জন্য কোটি টাকা অনুদান ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে এসব এলাকায় রয়েছে সরকারি বরাদ্ধ। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের সবার আগে খাদ্যের সংকট দেখা দিল এই এলাকাতেই! তাহলে সরকারি অর্থের বরাদ্ধ ও শামীম ওসমানের অনুুদানের অর্থের খাদ্য সামগ্রী কোথায়? এমনটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যখন ৮ এপ্রিল বুধবার ফতুল্লার দুটি ইউনিয়নের মানুষ খাদ্য না পেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিসিক শিল্পনগরী এলাকায়। ফতুল্লায় রয়েছেন বহু শিল্পপতি। শামীম ওসমানের মত এমপি। অথচ নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকায় খাদ্য সংকট নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন কাশিপুর এলাকায় হাজারো মানুষ খাদ্য সহায়তার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের অভিযোগ, কাশিপুর ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী গত ১৫ দিনে কোনো খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেননি। তাদের অভুক্ত দিন গুজার করার অবস্থা হয়েছে।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার প্রতিরোধে সরকার সাধারণ ছুটি দুই দফায় বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করেছে। এর মধ্যে কয়েক দিনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৬ জনের মৃত্যু হওয়ায় ৮ এপ্রিল আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জকে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করে দিয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এছাড়া গত শুক্রবার ৮নং ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা মারা যাওয়ার পর ওই এলাকায় তিনশ পরিবারকে কোয়ারেন্টিনের আওতায় রাখা হয়েছে। আর কাশিপুরের এই ওয়ার্ডেই নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
সব ধরণের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এই ওয়ার্ডের শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছ্নে। অনেকের ঘরেই এখন চাল নেই। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানরা গত ১৫ দিনেও এখানে কোনো সরকারি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেনি। এ কারণে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে তারা ঘরে ফেরেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর খাদ্য সামগ্রী দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছেন। কিন্তু খাদ্য সামগ্রী নিতে গেলে তারা বলেন, সরকার খাবার দিয়েছে ২০০ মানুষের জন্য। আসছেন আপনারা এক হাজার মানুষ। এতো মানুষের খাবার কোথা থেকে দিব?
উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার জন্য ৭৫ টন চাল ও ৯ লাখ নগদ টাকা ৭ হাজার ৫’শ পরিবারের জন্য বরাদ্দ আসে। এরপর ২’শ টন চাল ও ২ লাখ টাকা নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার জন্য আসে।
অন্যদিকে একই দিন করোনা ভাইরাসে কর্মহীন মানুষ খাদ্য সংকটে পরেছে ফতুল্লা ইউয়িন এলাকার হতদরিদ্র মানুষ। কোন কাজ না থাকায় অনাহারে-অর্ধহারে দিন কাটাতে থাকে। ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ৮ এপ্রিল বুধবার দুপুরে ২নং ও ৩নং ওয়ার্ডের অসহায় মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। পরবর্তীতে তারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপনের বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বিক্ষোভকারী প্রায় ১ঘন্টা চেয়ারম্যানের বাড়ি ঘেরাও করে রাখে।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া হামিদা খাতুন নামে এক বৃদ্ধা অভিযোগ করেন, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে আমরা নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছি। কোন কাজ করতে পারছি না। এদিকে আমাদের ঘরের খাবার শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কোন খোঁজ রাখছেন না। তাই আমরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।
রেলস্টেশনের বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন, কয়েকদিন আগে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্টেশনের কিছু মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। কিন্তু এরপর থেকে আর কোন খবর নেই। শুনেছি তাদের পরিচিত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে। সরকারের ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি ঠিক না। তা হলে আমরা গরীব মানুষ খোথায় গিয়ে দাঁড়াবো, কার কাছে খাদ্য চাইবো? সারহারা সিটি এলাকার সালেহা বলেন, আমরা ঘরে বসে থেকে খাদ্য পাইনা, কিন্তু যারা ঘর ছেড়ে রাস্তায় ঘুরে তারা ঠিকই ত্রাণ পাচ্ছে।
বিক্ষোভ অংশ নেয়া আব্দুস সালাম বলেন, করোনার ভাইরাসের কারণে আমার কাজ বন্ধ। আমি পরিবার নিয়ে খাদ্য সংকটে রয়েছি। কিন্তু স্থানীয় মেম্বার কিংবা চেয়ারম্যান আমাদের কোন খোঁজ রাখছে না। আর এ কারণেই আজ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামলাম।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ তখন দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের আয়ের উপার্জন বন্ধ। নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে তার নির্বাচনী এলাকার অসহায় মানুষের জন্য কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করেছেন এমপি একেএম শামীম ওসমান।
২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অনুদানের ঘোষণা দেন শামীম ওসমান। সেই সাথে ১ মাসের বাড়ি ভাড়া মওকুফ করতে নারায়ণগঞ্জে বাড়িওয়ালাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সম্ভব হলে বাড়িওয়ালাদের এক মাসের ট্যাক্স মওকুফের জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকেও অনুরোধ জানান তিনি।
শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমাদের সমাজে দুই শ্রেণির অসহায় লোক রয়েছে। এক শ্রেণি হচ্ছে হতদরিদ্র যারা হাত পেতে সাহায্য চাইতে পারে। আরেকটা শ্রেণি আছে যাদের ঘরে খাবার না থাকলেও তারা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনা। এই দুই শ্রেণির সাহায্যে আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করছি। ফতুল্লা এবং সিদ্ধিরগঞ্জের ৫টি ওয়ার্ডে তালিকা করে এই অনুদানের টাকা বিতরণ করা হবে। আমি ও আমার পরিবার ইতিমধ্যেই অসহায়দের সাহায্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এতোদিন কাজ হয়েছে গোঁপনে। তবে এ ধরণের কাজগুলো প্রচার হলে অন্যরাও উৎসাহিত হবে। কারন ১৬/১৭ কোটি মানুষকে সহায়তা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না। তাই বিত্তবান সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।