সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃতি খুনি আব্দুল মাজেদকে সোনারগাঁয়ে দাফন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এএইচএম মাসুদ দুলাল।
মাজেদকে সোনারগাঁয়ে দাফন ও তার লাশ উত্তোলন করে অন্যত্র নিয়ে দাফন করার আহ্বান জানিয়ে ১২ এপ্রিল রবিবার সকালে সাংবাদিকদের ব্র্রিফ করেন। পরে তিনি মাজেদের লাশ উত্তোলন করার জন্য সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্থক্ষেপ কামনা করেন।
এএইচএম মাসুদ দুলাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের জন্মজেলা, মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে যে জেলার ভূমিকা ছিল অগ্রগামী সেই জেলাতেই এবার দাফন করা হয়েছে তারই খুনিদের একজনের লাশ। আর এতে করে সোনারগাঁবাসী নতুন করে এক লজ্জায় ভাসতে শুরু করেছে। এ কলঙ্ক মোচনের জন্য অবিলম্বে সোনারগাঁ থেকে এ হত্যাকারীর লাশ অপসারণ চাই।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেলের হত্যাকারী আব্দুল মাজেদের কাছে মৃত্যুর আগে শেখ রাসেল পানি চেয়েছিল। ওইদিন সে তাকে পানি খেতে না দিয়ে তিরস্কার করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
অন্যদিকে জানাগেছে, ১২ এপ্রিল রবিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলাধীন শম্ভুপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর শশুর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে আবদুল মাজেদের নিকটাত্মীয়দের উপস্থিতিতে লাশ দাফন করা হয়। বিষয়টি রবিবার সকালে জানাজানি হলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সোনারগাঁয়ের মানুষ। তারা দ্রুত এই খুনির লাশ সেখান থেকে সরিয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন, নতুবা এই লাশ তুলে মেঘনা নদীতে ফেলে দিতে বাধ্য হবে সোনারগাঁয়ের মানুুষ।
সকালে ঘটনা জানাজানি হলে এ নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। স্থানীয় আওয়ামীলীগ, মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের লোকজন খুনি মাজেদের লাশ এখান থেকে উত্তোলন করে অন্যত্র দাফনের দাবি জানিয়েছেন। লাশ দাফনের খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং জুতা ঝাঁড়– হাতে প্রতিবাদ জানায়। এক পর্যায়ে তারা খুনি মাজেদের কবর খুড়তে শুরু করলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা থেকে বিরত থাকেন। এ সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা খুনি মাজেদের কবরে জুতা ও ঝাড়– পেটা করেন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাসেল মাহামুদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সোনারগাঁ উপজেলা শাখার সভাপতি শেখ এনামুল হক বিদ্যুৎ, সোনারগাঁ থানা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহের নেগার সোনিয়া, শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোতালেব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল ইসলাম বিজয় প্রমূখ।
এ ছাড়াও ঘটনাস্থলে গিয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, সেক্রেটারি আলী হায়দার, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান রাশেদ ও সেক্রেটারি রাসেল মাহামুদ সহ অন্যান্যরা।
শনিবার রাতে মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার লাশ গ্রামের বাড়ি ভোলায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোলার জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের চাপে লাশ ভোলা না নিয়ে সোনারগাঁ নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভোর রাতে অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে মাজেদের শ্বশুর বাড়ি সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ সময় খুনি মাজেদের চাচা শশুর আলী আক্কাস ও শ্যালক শহিদুজ্জামানসহ পরিবারের নিকট আত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি জানোয়ার মাজেদের লাশ সোনারগাঁয়ের মাটিতে দাফন হতে পারে না। বরিশালের পাপ বরিশালে পাঠানো হোক। অন্যথায়, স্বাধীনতার স্বপক্ষের সোনারগাঁয়ের বিপ্লবী জনতা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে সোনারগাঁয়ে দাফন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি মিডিয়াতে বলেন, খুনি মাজেদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সারাবাংলার জাতিকে হত্যা করে কলঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জাতির সাথে বেঈমানি করেছে। সেই বেঈমানের কবর এদেশে হতে পারে না।
আওয়ামীলীগের এই নেতা বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর সহচর হিসেবে সোনারগাঁয়ে তার দাফন মেনে দিতে পারি না। আমি সোনারগাঁয়ের সন্তান, স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে এ দেশ ও দেশের মাটিকে রক্ষা করতে যুদ্ধ করেছি। কোন খুনিকে এ মাটিতে কবর দেয়ার জন্য যুদ্ধ করেনি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাবো সোনারগাঁয়ের পবিত্র মাটিতে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন দেশ প্রেমিককে খুন করা খুনির দাফন সোনারগাঁয়ে হতে পারেনা। প্রশাসন রাতের আধারে আমাদের না জানিয়ে তার লাশ দাফন করেছে। আমরা যদি জানতাম তাহলে কখনই খুনি মাজেদকে সোনারগাঁয়ের মাটিতে দাফন করতে দিতাম না। এখন আমি ও আমার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানাবো খুনি মাজেদের লাশ সোনারগাঁ থেকে উত্তোলন করে অন্যত্র দাফন করার হোক।
এ ছাড়াও রাতের বেলা লাশ দাফনের পর সকালে প্রশ্ন রেখে উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও পিরোজপুুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম মিডিয়াতে বলেছেন, আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই-খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার মৃতদেহ কেন রাতের আঁধারে আমাদের সোনারগাঁও উপজেলায় দাফন করা হলো?
তিনি বলেন, যেহেতু এই খুনির শ^শুরের গ্রামের বাড়ি আমাদের সোনারগাঁ এলাকায় সেহেতু তার মরদেহ সোনারগাঁয়ে গোপনে দাফনের ফলে জাতির পিতার আর্দশের সৈনিকেরা তা মেনে নিতে পারছে না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সোনারগাঁ উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, সহ সকল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়ে এই লাশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার দাবি তুলেছেন।
তিনি বলেন, আমি নিজেও এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি বিনীতভাবে, সরকারকে অনুরোধ করবো, এই খুনির লাশ, সোনারগাঁ থেকে অবিলম্বে অপসারণ করে, আমাদের এ কলঙ্ক থেকে মুক্ত করুন। প্রয়োজন হলে মেঘনা নদীতে ফেলে দিন, তবুও আমাদের সোনারগাঁয়েরঁ মাটি অপবিত্র করবেন না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে সোনারগাঁয়ে দাফনের মাধ্যমে সোনারগাঁয়ের মাটিকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। খুনি মাজেদ যেহেতু সোনারগাঁয়ের সন্তান নয়, সোনারগা এ কুলাঙ্গারকে জন্ম দেয়নি সুতরাং তার কবর সোনারগাঁয়ে হতে পারে না। জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সবিনয় প্রার্থনা এ খুনির লাশ যাতে সোনারগাঁ থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হোক।