সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
দেশে দিন দিন বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ। রাজধানীর নিকটবর্তী এই জেলাকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ইতিমধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর কেন্দ্রস্থল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তা সত্বেও কভিড-১৯ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা মানছে না নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ।
ঘর থেকে বের না হতে সরকারি কোন আদেশ, নিষেধ, অনুরোধ গায়ে-ই মাখছেনা নগরবাসী। তাই, করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সচল রাখার লক্ষে কভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অনতিবিলম্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারফিউ জারির নির্দেশ দিতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোড়ালো আবেদন জানিয়ে গণমাধ্যমের মাধ্যমে দাবি জানিয়েছেন সংগঠন ‘স্লোগান’।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, একজন মানুষের সদিচ্ছাই পারে অপর মানুষের জীবন বাঁচাতে। একজন মানুষই পারে গুরুতর বিশৃঙ্খলা থেকে সমাজকে রক্ষা করতে। একজন মানুষই পারে সত্যের পক্ষে আওয়াজ তুলতে। আমরাই পারি দূরত্ব বজায় রাখতে। আমরাই পারি জীবন বাঁচাতে। আমরাই পারি গণহত্যা প্রতিহত করতে। আজ বাংলাদেশে করোনা বির্পযয়ের মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট আবেদন, অনতিবিলম্বে নারায়ণগঞ্জে কারকিউ জারি করা হোক।
আবেদনে বলা হয়- প্রধানমন্ত্রী, আপনি জাতির পিতার কন্যা। যে মানুষটি তার জীবন-যৌবন সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়েছেন এই জাতির জন্য। তার রক্ত আপনার শরীরে প্রবাহমান। আপনি মানবতার অবতার, আল্লাহর পরে আপনিই পারেন এই
যুদ্ধে অংশগ্রহণে প্রতিটি নাগরিককে অনুপ্রাণিত করতো।
আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বেই এই দেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা এটাও জানি যে এদেশের প্রতিটি মানুষের জীবন আপনার কাছে অমূল্য। প্রতিটি মানুষকে বাঁচাতে আপনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আপনার সেই অক্লান্ত পরিশ্রম আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারিনা।
প্রতিকার যেখানে সম্ভব নয় সেখানে প্রতিরোধই একমাত্র সম্বল। করোনা ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই প্রতিরোধ ছাড়া আমাদের আর কোনো রাস্তা খোলা নেই। আর এই প্রতিরোধ তখনই সম্ভব হবে যখন প্রতিটি মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাবে।
মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সচল রাখার লক্ষে আপনি বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন।
কিন্তু আমাদের কভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ না করতে পারলে, ব্যবসা বাণিজ্য সচল রাখা সম্ভব না। অতএব সংক্রমণ প্রতিরোধ না করে এই প্রণোদনা কার্যকর করাও সম্ভব না। অর্থাৎ এই লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকবে এবং অর্থনীতিও দিনকে দিন বিপর্যস্ত হতে থাকবে।
সরকারীভাবে, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমেও ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। তারপরেও এই লকডাউন কার্যকর করা যাচ্ছে না। কেউ কেউ সাতদিনের খাবার পেয়েও আবার বাসা থেকে বের হচ্ছে আরো খাবার সংগ্রহের আশায়। বর্তমানে কর্মহীন হয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সাতদিনের/ দশদিনের খাবার শেষ হলে আবার খাবার পাওয়ার আশায় বের হবে এটাই স্বাভাবিক এবং এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে, সংক্রমণ ও বাড়তে থাকবে। ত্রাণের জন্য সরকারী ও বেসরকারিভাবে বরাদ্দকৃত টাকাও দিনকে দিন কমতে থাকবে।
আর বর্তমানে যে পরিমান রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। উন্নত রাষ্ট্রের মতো প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিবিদ না থাকায় এখুনি আমাদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে এবং আমাদের মতো মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের জন্য এটা স্বাভাবিক। যখন সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়ে আক্রান্তের সংখ্যাটা দশগুণ হবে, তখন আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, আমরা যদি ১ থেকে ২১দিন নিজেদের সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারি তাহলে পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল নারায়ণগঞ্জ। এখানে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের বসবাস।
তাই জাতীয় পর্যায়ে ফান্ড গঠন করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা একত্রিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে শিল্পমালিকদের, কারণ প্রতিরোধ না করা গেলে দেশের অর্থনীতি তথা সকল শিল্পে ধস নামবে, যা থেকে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানই রক্ষা পাবেনা। এছাড়া সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন কর্তন করা যেতে পারে।
তাই অনতিবিলম্বে ২১ দিনের খাবার সরবরাহ করে, কারফিউ জারি করা ছাড়া অন্য কোন পথ আমারা দেখতে পাচ্ছি না।
এই অবস্থায় যদি কারফিউ দেওয়া হয় তাহলে চিকিৎসা ও খাদ্য সেবা নিতে মানুষের চরম দূর্ভোগে পড়তে হবে। সেই দূর্ভোগ লাঘবে কিছু পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এর মধ্যে রূপগঞ্জে ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। আড়াইহাজারে ১০টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। সোনারগাঁ ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। বন্দর ও নারায়ণগঞ্জ মিলে ১২টি ইউনিয়ন ও ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি কর্পোরেশন গঠিত এবং ধারণা করা হয় বিভিন্ন জেলার কর্মজীবি মানুষের অবস্থানের ভিত্তিতে এতদ অঞ্চলে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের বসবাস।
যদি নারায়ণগঞ্জে ৬০ লক্ষ মানুষের বসবাস হয়। তাহলে ধরে নেই ২৮ লক্ষ মানুষ হত দরিদ্র, নিম্ন বিত্ত, নিম্ন মধ্য বিত্ত। তাদের এই ক্রান্তিলগ্নে সংসার চালানো কষ্ট সাধ্য। যদি ধরি, গড়ে একেকটি পরিবারে ৪ জন করে সদস্য তাহলে মোট পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ লক্ষ পরিবার।
৭ লক্ষ পরিবারের ২১ দিনের খসড়া খাবার বাজেট হচ্ছে।
চাল ২১ কেজি দ্ধ ৪৫= ৯৪৫/-
ডাল ১.৫ কেজি দ্ধ ৮৫= ১২৮/-
তেল ৩.৫ কেজি দ্ধ ১০০= ৩৫০/-
আটা ৩.৫ কেজি দ্ধ ৩০= ১০৫/-
ডিম ৮৪টা দ্ধ ৭ = ৫৮৮/-
লবণ ১ কেজি দ্ধ ৩৫= ৩৫/-
আলু ৭ কেজি দ্ধ ২০= ১৪০/-
পেয়াঁজ ৭ কেজি দ্ধ ৫০= ৩৫০/-
মরিচ ১ কেজি দ্ধ ৪০= ৪০/-
চিড়া ১ কেজি দ্ধ ৮০= ৮০/-
ছোলা ২কেজি দ্ধ ৯০= ১৮০
সর্বমোট = ২৯৪১/-
আনুমানিক (২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা)
তাহলে মোট অর্থের সম্ভাব্য পরিমান দাঁড়া দুইশত দশ কোটি টাকা এবং এই সব খাদ্যদ্রব্য বিতরণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ইউনিয়ন, ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করে, প্রয়োজনে গ্রাম ও মহল্লাভিত্তিক কমিটি করা যেতে পারে। ঔষধ, চিকিৎসা ও জরুরী সেবা দানের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডভিত্তিক কল সেন্টার চালু করার মাধ্যমে সেবা প্রদান করা যেতে পারে।
নারায়ণগঞ্জে মোট ৩৯টি ইউনিয়ন ও ৫টি পৌরসভা। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৯জন করে মেম্বার থাকেব তার মানে ৩৯৬টি ওয়ার্ড ও সিটি কর্পোরেশন-এর ২৭টি ওয়ার্ড মিলে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৪২৩টি। প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন মেম্বার সমন্বয়ে ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলরকে প্রধানর করে এবং ইউনিয়নে মেম্বারকে প্রধান করে ১১জনের স্বেচ্ছাসেবক দল অত্র এলাকায় সেবা প্রদান করবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উক্ত ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবকদের ফোন নাম্বার টাঙিয়ে দেয়া হবে। কোন ব্যক্তির চিকিৎসা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য সেবা প্রয়োজন হলে উক্ত নাম্বারগুলোতে প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করবে। তখন উক্ত প্রতিনিধি তার কাউন্সিলরকে বা ইউপি মেম্বারকে জানালে কাউন্সিলর বা ইউপি মেম্বার জেলা প্রশাসক বা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেই ক্ষেত্রে সেচ্ছাসেবকের মোট সংখ্যা হবে ৪৬৫৩ জন। যারা শুধু চিকিৎসা, ঔষধ, এ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত বিষয়াদি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সমন্বয় করবেন।
যেহেতু ২১ দিনের কারফিউ একটি ব্যয় সাধ্য প্রক্রিয়া তাই সরকারি তহবিল এবং বেসরকারি অনুদানের সমন্বয়ে ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে। নারায়ণগঞ্জ একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তাই অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ রক্ষার স্বার্থে অবশ্যই এগিয়ে আসবে।
নারায়ণগঞ্জ এর সংসদ সদস্যগণের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি আপনারা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্রুততম সময়ে উপস্থাপন এবং বাস্তবায়ন করে দেশ ও জাতীর স্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আমরা জানি সাহসিকতা এবং সহানুভূতি একটি মুদ্রার দু’টি দিক এবং প্রত্যেক যোদ্ধা, প্রত্যেক মানবিক ব্যক্তি, নাগরিক এই দুই সত্ত্বা নিয়েই তাদের জীবন পরিচালিত করে। আসলে করোনা যুদ্ধ জয়ের জন্য, শান্তি বজায় রাখার জন্য, জীবন বাঁচানোর জন্য আমাদের প্রত্যেকের সাহসী ও যোগ্য হতে হবে। ৭১-এ আমরা যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি, আমরা জানি ক্ষুধা ও প্রিয়জন হারানোর বেদনা।
আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে করোনাকে প্রতিহত করতে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে দিনের পর দিন অনাহারে, অর্ধাহারে থেকে নয় মাস শত্রুর মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছি। আজ আমরা কি পারি না, মাত্র একুশ দিন অবরুদ্ধ থেকে করোনার বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনতে?
জনস্বার্থে : স্লোগান- ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে, সোনার মানুষ হই’