সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভারের কারনে সকল শ্রেণি পেশার ব্যক্তিদের সকল আয়ের পথ বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যারা অসচ্ছল রয়েচেন তারাও বেশ বেকায়দায় জীবন যাপন করছেন। এসব নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ।
তিনি মহানগর বিএনপির যেসব নেতাকর্মী কষ্টে দিনাতিপাত করছেন এমন সব নেতাকর্মীদের বিতরণের জন্য এক লাখ টাকা মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামালের হাতে তুলে দেন। যা এটিএম কামাল ও মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু গোপনীয়তার মাধ্যমে বিতরণ করেছেন। যা স্থানীয় অনলাইন জাগো নারায়ণগঞ্জে প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। ওই অনলাইনটিতে নেতাকর্মীদের বরাদ দিয়ে বলা হয়েছে এটিএম কামাল ও টিপু নেতাকর্মীদের লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
জানাগেছে, গত ৩০ এপ্রিল ওই অনলাইনটিতে ‘কর্মহীন কর্মীদের সহায়তার টাকা খেয়ে ফেললো বিএনপির কামাল ও টিপু’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। ওই সংবাদে বলা হয় নজরুল ইসলাম আজাদের দেয়া ১ এক লাখ টাকা তারা খেয়ে ফেলেছেন। যদিও এই রিপোর্টের বিষয়ে ওই অনলাইনে বিবৃতি দিয়েছিলেন আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তিনি দাবি করেছেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী দুরাবস্থায় আছেন। সবার মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি এও দাবি করেছেন এটিএম কামাল যেভাবে তাকে যে তালিকা দিয়েছেন সেভাবে তিনি বিতরণ করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন ওই রিপোর্ট সত্য নয়।
এদিকে এমন বিষয়টি নিয়ে যখন নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি সাখাওয়াত ইসলাম রানা তার ফেসবুকে এটিএম কামাল ও টিপুকে নিয়ে সংবাদটি শেয়ার করায় আরো বেশি সমালোচনা শুরু হয়। যেখানে মহানগর যুবদল নেতা সরকার আলমও বিরুপ মন্তব্য করেন। বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা এটিএম কামাল ও টিপুুকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। তার কয়েকদিন পর ১ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাজ দিয়ে দাবি করেছেন তিনি ফটোসেশন নয় গোপনীয়তার মাধ্যমে সুষম বন্টনের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা বিতরণ করেছেন।
তিনি সেখানে মহানগর বিএনপির বেশকজন নেতাকর্মীরা নাম বলেছেন যারা নাকি ওই অর্থ বিতরণের বিষয়ে সহযোগীতা করেছেন। এটিএম কামাল যখন মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদও তার অর্থ বিতরণেও সহযোগীতা করেছেন বলেও দাবি করেছেন। ফলে প্রশ্ন ওঠেছে তাহলে সাহেদ আহমেদ কতজন ছাত্রদল নেতাকর্মীর মাঝে এই অর্থ বিতরণ করলো। আর যে এটিএম কামাল একটি কাগজ বিতরণও করলেও ছবি তুলে বিশাল আকারে নিউজ লিখে প্রেস রিলিজ পাঠান, সেই এটিএম কামাল নাকি ফটোসেশন বাদে গোপনে অর্থ বিতরণ করেছেন তখন সেটা বিরাট প্রশ্ন।
১ মে এটিএম কামাল তার ফেসবুকে লিখেছেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলার আমার সহকর্মী সকল পরিবারেরই আমি সদস্য। রাতে একজন ফোন করে বললো দিপু ভাই (বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু) আমাকে কোন টাকা পাঠিয়েছে কিনা। আমি বললাম এখনো হাতে আসেনি তবে আজাদ ভাই (কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ) এক লাখ টাকা পাঠিয়েছে যা ইতিমধ্যে দল ও দলের বাইরে অনেক অসহায় পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। আমার নির্দেশ অনুযায়ী কোন ফটোশেসন ছাড়া এ দায়িত্ব পলন করার জন্য মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে ধন্যবাদ জানাই।
এটিএম কামাল আরও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আরো ধন্যবাদ জানাই জেলা মহিলা দল নেত্রী রহিমা শরীফ মায়া, মহানগর ছাত্রদল সভাপতি শাহেদ আহম্মেদ, মহানগর বিএনপি নেতা আওলাদ ভাই, মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, গলাচিপার হারুন শেখ, শ্রমিক দলের মনির মল্লিক, মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান জিয়া সহ বিভিন্ন অংগসংগঠনের নেতা বাদল, আক্তার হোসেন সবুজ, শিব্বির আহম্মেদ, শিপলু, ইমন, ইব্রাহীম আহম্মেদ বাবু, ডলি আক্তার, রশীদ, হীরা, রাব্বী সহ সকলকে যারা এ কাজে সহযোগিতা করেছেন। সর্বোপরি আজাদ ভাই ও তাঁর ছোট ভাই রাকিবকে কৃতজ্ঞতা ও সংগ্রামী অভিনন্দন। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন।’ তবে এটিএম কামাল ১ লাখ টাকা কতজন নেতাকর্মীর মাঝে বিতরণ করেছেন সেটা পরিষ্কার করেননি এবং যাদের নাম তিনি বলেছেন তারা নাকি তাকে সহযোগীতা করেছেন বিতরণে। কিন্তু যাদের নাম তিনি বলেছেন তাদের বেশির ভাগই দূর্দশা গ্রস্থ নেতাকর্মীরা।
এটিএম কামালের এমন বক্তব্য মিডিয়াতে প্রকাশিত হলে ২ মে সাহেদ আহমেদের নাম জড়ানোর বিষয়টি পরিষ্কার করেন। তিনি তিন নেতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, করোনায় আক্রান্ত ছাত্রদল নেতার পরিবারের জন্য এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের নিজ ওয়ার্ডের আরো ২/১জনের জন্য ৫হাজার টাকা উপহার দেয়ায়। যেখানে অন্যরা কোন কল অব্দি দেননি। তবে আমরা জানতাম এটিএম কামাল ভাই দিয়েছেন, আর পরে শুনি আজাদ ভাইয়ের পক্ষ থেকে উনি দিয়েছেন! আর পরে আরো শুনি নেতাকর্মীদের জন্য এক লাখ টাকা আজাদ ভাই দিয়েছেন, আর এটা নিয়া নোংরামো হচ্ছে। কিন্তু নোংরামো করলে মহানগর বিএনপিকে নিয়া ছাত্রদল করতে পারে, কারণ নেতাকর্মীদের জন্য হলে ছাত্রদলের অন্তত ৩৯-৪০টা ছেলে ১ হাজার করে হলেও পাওনা ছিল, যারা কিছুটা সমস্যায়। কিন্তু যখন শুনলাম এটা শুধু নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ তখন এ বিষয়ে আর কোন কথা নেই।
সাহেদ আরও লিখেছেন, আজ অব্দি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাদের মাঝে এটাই ছিল ছাত্রদলের কোন নেতার প্রতি মানবিকতা। বিএনপি বড় দল অনেক নেতাকর্মী আছেন আর সামান্য এই টাকা নিয়া যেই ধরণের বিভ্রান্তিকর চরিত্রহনন এর নিউজ হচ্ছে সেটা দুঃখজনক। ছাত্রদল নিজেরাই নিজেদের জন্য যথেষ্ট আর আজাদ ভাইকে আবারো ধন্যবাদ জানাই কারণ তিনি নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা হয়েও নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের গরীবদেরকে ত্রাণ সহযোগিতায় ও কমবেশি পাশে ছিলেন এবং সবার খোজ খবর রাখার চেষ্টা করছেন, সব সময়ের ন্যায়। কিন্তু ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের জন্য কখনো কারো কাছে কিছু আশা করেনা, আর করবেও না।’