সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বৈশ্বিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় আমাদের প্রত্যেকে নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আসলে কেউই নিরাপদ নই। কোনো অঞ্চল, জাতি বা দেশের জন্য এখন আর সাংস্কৃতিক শ্রেণিবদ্ধতা কিংবা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেই। করোনাভাইরাস বিশ্ব ব্যবস্থাকেই বদলে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ব নেতাদের মন-মানসিকতায় কি তেমন পরিবর্তন আনতে পেরেছে? যা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি।হ্যাঁ, আমিও মনে করি বিশ্ব সভ্যতাকে বাঁচাতে এখন হিংসা-বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহের পথ পরিহার করে একতাবদ্ধ হওয়া জরুরি। প্রতিদিন করোনায় নতুন করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৩৩ লাখ ২৫ হাজার মানুষ।
এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ। কোনো যুদ্ধ ছাড়াই এত মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশ্ব যে কত ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এ পরিসংখ্যানই তা বলে দিচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব আর কখনো এ ধরনের কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। করোনা বিশ্বকে যেভাবে ঝাঁকুনি দিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে কি বিশ্ব নেতৃত্ব শিক্ষা নিচ্ছেন? এর কোনো নিদর্শন দৃশ্যমান নয়। অনেক দেশ করোনা মোকাবিলায় সফলতা দেখিয়েছে। যেমন কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, ইউএই, সৌদি আরব। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে তুরস্ক মানবিক সাহায্যও করছে। ইতালি, ইউকে, স্পেনে, যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিস্তিন ও সার্বিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও পাঁচটি বলকান অঞ্চল ছাড়াও পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, ইয়েমেনে, মেক্সিকোয় বিভিন্ন ত্রাণ সহায়তা এবং মেডিকেল সরঞ্জাম দিয়ে এ সহায়তা করা হয়েছে। লকডাউনে লাখ লাখ শ্রমিকের আয় রোজগার বন্ধ থাকে, তাই অনাহার খুব বেশি দূরে থাকবে না।
তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেকার ও দরিদ্রদের জন্য প্রচুর ফেডারেল অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমআয়ের অনুদানের ব্যবস্থা করেছে। আমেরিকাতে এই জাতীয় সামাজিক প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপের গ্রহণ এবং স্বীকৃতি হিসেবে রাজনৈতিক বিরোধীদের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেসিসহ জনসাধারণের আলোচনার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রে অনেকটা সহায়ক হয়, বিশেষত যখন প্রেস মুক্ত থাকে, জনসাধারণের আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকে না এবং যখন সরকারি আদেশগুলো শ্রবণ ও পরামর্শ দ্বারা জানানো হয়, তখনই জাতীয় সমস্যা সমাধান ঐক্যবদ্ধভাবে করা সম্ভব হয়।
আবার আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং উন্নয়নশীল বিশ্বেরও প্রাচীনতম। ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসজুড়ে দুর্ভিক্ষ ছিল এক অবিরাম ঘটনা। ভারত প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ থমকে যায় দুর্ভিক্ষ। গণতন্ত্র দুর্ভিক্ষ রোধে সরকারকে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য উৎসাহ দেয়। করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) গত পাঁচ মাসে পৃথিবীজুড়ে লাখো জীবন কেড়ে নিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকায় মৃত্যুর সংখ্যা যত বেশি হোক না কেন একজনও বিনা চিকিৎসায় মারা যায়নি। হাসপাতালে ভর্তির জন্য সেসব দেশে বাংলাদেশের মতো দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না। কেউ মারা যাওয়ার আগে তাদের দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে হসপিটালে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছেন। সর্বোপরি যারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তাদের জন্য কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের যন্ত্র দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ বড় দুর্ভাগা। আজ হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা পাচ্ছে না তারা। করোনায় ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা পর্যন্ত আমরা দিতে পারছি না। করোনাভাইরাস সংকটে নাগরিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে এখনো পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আশার পথ দেখাবে মুক্ত সাংবাদিকতা আর আশা জাগাবে সরকার। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্মুখযোদ্ধা হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স, স্টাফ আর আমাদের সীমানায় করোনাকে আটকে দেওয়ার প্রচেষ্টায় যুদ্ধরত অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জানাই হাজারো সালাম। এই যোদ্ধাদের জন্য রইল অফুরন্ত শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অনেক দোয়া।
ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন, আল্লাহ যেন আমাদের রক্ষা করেন।
লেখক: মাহমুদুর রহমান সুমন
রাজনীতিক ও কলামিস্ট