সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট বর্জন করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। তবে এদিনেও এই কোর্ট নারায়ণগঞ্জে পরিচালিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ কোর্টে জরুরী কার্যক্রম করতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল কোর্টে প্রথম দিনে ১৬টি মামলার আবেদন করা হয়। যার মধ্যে ৬টি মামলার শুনানি হয়েছে এবং তিনটি মামলায় আসামিদের জামিন দিয়েছেন আদালত।
১৩ মে বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন এ তথ্য জানান।
আদালতে যে তিনটি মামলায় জামিন পেয়েছে তা হলো- ফতুল্লা থানার মাদক মামলায় জামিন পেয়েছে মো. আলাউদ্দিন। এই মামলার আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূইয়া।
ফতুল্লা থানার আরেকটি মাদক মামলায় জামিন পেয়েছে মো. সাইফুল। এই মামলার আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন এবং সদর থানার একটি মাদক মামলায় জামিন পেয়েছে ফারজানা বেগম। এই মামলার আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া।
এর আগে গত ১০ মে রবিবার নোটিশ উল্লেখ থাকে, উপর্যুক্ত বিষয় ও সুত্রের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অধ্যাদেশ ২০২০ (অধ্যাদেশ নং-০১,২০২০) এর নির্দেশনা মোতাবেক ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে জরুরী জামিন বিষয়সমূহ শুনানীর লক্ষ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, নারায়ণগঞ্জ এর vcdj.narayanganj@gmail.com ই-মেইল এ জামিন সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করা হবে। আবেদনের সময় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর নাম, ই-মেইল, ফোন নম্বর, আইডি নং ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে। আবেদন গ্রহণের পর সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে শুনানীর তারিখ ও ভার্চুয়াল কোটের লিঙ্ক ই-মেইল / SMS এর মাধ্যমে প্রেরণ করা হবে।
অন্যদিকে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট বর্জন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি। ১৩ মে বুধবার নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানাগেল। বুধবার জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান সমিতির সকল আইনজীবীদের মোবাইল ফোনে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দেন।
সমিতির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে খুদে বার্তায় সকল আইনজীবীদের জানান, ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও ইন্সট্রমেন্ট না থাকায় বিজ্ঞ সদস্যগণের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কার্যকরী কমিটির সভায় ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।’
এখানে আরও জানাগেছে, গত ১০ মে রবিবার অধস্তন আদালতে ভার্চ্যুয়ালি কার্যক্রম পরিচালনার পদ্ধতি সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
২১ দফা ‘বিশেষ প্র্যাকটিস নির্দেশনায়’ অধস্তন আদালতের জামিন শুনানির পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়। আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ এর ৫ ধারার ক্ষমতাবলে করোনায় নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আকবর আলী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ১০ মে রবিবার এই নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, অধস্তন আদালতে শুধু ভার্চ্যুয়ালি জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি হবে। যোগাযোগের জন্য প্রত্যেক আদালতের একটি ই-মেইল আইডি ও নিজস্ব ফোন নম্বর থাকবে, যা আইনজীবী সমিতিকে সরবরাহ করতে হবে। জামিন শুনানির জন্য দালিলিক কাগজাদি এবং ওকালতনামা আদালতের নির্ধারিত ই-মেইল আইডিতে ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে জামিনের আবেদন দাখিল করতে পারবেন।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি আদালত চলাকালে অনুষ্ঠিত হবে। শুনানি গ্রহণ, শুনানির তারিখ ও সময় অনলাইন প্লাটফর্মে ব্যবহৃত হবে ও কজলিস্টের পোর্টালে থাকবে, যা মোবাইল ও ই-মেইলের মাধ্যমে উভয়পক্ষের কৌশলীকে অবহিত করতে হবে।
গৃহীত আবেদনের ওপর একটি ভিডিও কনফারেন্সিং কেস নং (ভিসি কেস নং) ব্যবহৃত হবে এবং পরবর্তী সব প্রয়োজনে এই নম্বর ব্যবহৃত হবে। আবেদন গৃহীত হওয়ার পর আবেদনকারী অথবা তার আইনজীবী আদালতে ও প্রতিপক্ষের ই-মেইলে ২৪ ঘণ্টা আগে ইমেজ আকারে ১০ এমবির মধ্যে পাঠানো হবে।
আদালত কর্তৃক নির্ধারিত ভিডিও কনফারেন্সিং প্লাটফর্ম জুম, গুগল মিট বা মাইক্রোসফট টিম ব্যবহার করে উভয়পক্ষের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেবেন। শুনানির ১৫ মিনিট আগে আইনজীবী ও প্রয়োজনে তার সহায়ক আইনজীবী আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেবেন। ভিডিও কন্ট্রোলরুম থেকে ১৫ মিনিট ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে।
শুনানিকালে স্ক্রিন শেয়ার অপশন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট শেয়ার করতে হবে এবং মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংযুক্তি আকারে আদালতের ই-মেইলে পাঠাতে হবে, যার একটি কপি প্রতিপক্ষের আাইনজীবীকেও দিতে হবে। শুনানির ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে জানানো সম্ভব না হলে ই-মেইলে ও খুদে বার্তার মাধ্যমে উভয়পক্ষের আইনজীবীকে জানাতে হবে।
জামিন হলে বন্ড ও রিলিজ অর্ডার পূরণ করে স্ক্যানকপি আদালতের ই-মেইলে পাঠাতে হবে। বিচারক বেইল বন্ড ও রিলিজ অর্ডার এক কপি প্রিন্ট করে অফিসিয়াল ফাইলে সংগ্রহ করবেন। আর এক কপি জেল সুপারের অফিসিয়াল মেইলে পাঠাবেন। আদালতের আদেশে সংক্ষুব্ধ হলে যে কোনো পক্ষ ফটো সার্টিফাইং কপি সংগ্রহ করে উচ্চতর আদালতে যেতে পারবেন। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং কেউ শুনানির কোনো অংশ রেকর্ড করলে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুনানিকালে বিচারক ও আইনজীবীকে প্রচলিত কোর্ট ড্রেস পড়তে হবে, তবে গাউন না পরলেও চলবে। ভার্চ্যুয়াল শুনানিকালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকতে হবে। কেউ শুনানিকালে বিচ্ছিন্ন হলে তাকে পুনরায় সংযুক্ত করতে হবে। সব ধরনের কোলাহল পরিত্যাগ করতে হবে। অন্য সব মোবাইল ফোনের সাউন্ড মিউট রাখতে হবে। কারিগরি সমস্যার কারণে কোনো পক্ষের আইনজীবী যুক্ত হতে না পারলে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য পরবর্তীতে আবার তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
শুনানিকালে কোনো প্রতারণা, মিথ্যা বর্ণনা ও জাল সাক্ষ্য প্রমাণ দিলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি বা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যধারা গ্রহণ করা যাবে। নির্দেশনায় বর্ণিত হয়নি এমন বিষয় উদ্ভূত হলে আদালত প্রচলিত আইন অনুসারে আদালত পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। ভার্চ্যুয়ালি শুনানির ক্ষেত্রে আইনজীবীরা নির্দেশিকা অনুসরণ করবেন। এ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে mycourt.judiciary.org.bd এ রক্ষিত প্রচারিত ভিডিও টিউটোরিয়াল অনুসরণ করবেন। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক পরবর্তী সময়ে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
গত বছরের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ রেখে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য সুপ্রিম কোর্টের রুলস কমিটি পুনরায় গঠন এবং ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওইদিন প্রথমবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের ৮৮ জন বিচারপতি।
এ অবস্থায় গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
দুইদিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।