সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার রাজনৈতিক কূটকৌশলের কাছে ধরাশয়ী হয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব হারানোর পর এবার জনগণের মাঝ থেকেও মুছে যাওয়ার সম্ভাবনায় পড়েছেন সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট দুই নেতা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হোচট খেয়েছেন তারা। তাদের সঙ্গে আরও বেশকজন আলোচিত নেতা একজোট হলেও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব তারা ফিরে আনতে পারেননি। এদিকে করোনা মহামারিতে জনগণের মাঝে তাদের অনুপস্থিতি সামনের রাজনীতিতে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে যাচ্ছেন বলেও স্থানীয়দের দাবি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর বিরোধীতা ও বাধার পর কেন্দ্রীয়ভাবে জেলা আওয়ামীলীগের দেয়া কমিটিকেই বহাল রাখেন। এরপর কিছুদিন পরই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হানা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে শুরু থেকেই গরীব অসহায় দুস্থ দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারের মাঝে মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ সহ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাঠে নামেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান মাসুম। একই সঙ্গে তিনি পিরোজপুুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
পরিস্থিতি যখন আরো বেগতিক হয়ে ওঠে তখন তিনি অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও ঈদ সামগ্রী বিতরণের রীতিমত ঝড় বইয়ে দেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের পেছন থেকে কাজ করা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরুকে প্রথম অবস্থায় জনগণের মাঝে দেখা না গেলেও পরবর্তীতে তিনি নিয়মিত খাদ্য সামগ্রী বিতরণে রয়েছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নিয়মিত এখন খাদ্য সামগ্রী ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ চলছে।
স্থানীয় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন- কায়সার হাসনাত ও মাহফুজুর রহমান কালামকে পাস কাটিয়ে যখন উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান মাসুমকে দিয়ে গঠিত হয় তখন রাজনীতিতের প্রথম হোচট খেয়েছেন কায়সার ও কালাম। পরবর্তীতে কমিটিতে অবৈধ দাবি করে বাতিল দাবিও যখন সেই কমিটিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বহাল ঘোষণা করেন তখন দ্বিতীয়বার রাজনীতিতে হোচট খেয়েছেন।
এবার খাদ্য সামগ্রী বিতরণে যখন বিরু ও মাসুদুর রহমান মাসুম একবারেই প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণের হিড়িক ফেলেছেন সেই তুলনায় তখন সোনারগাঁয়ে যৎসামান্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে মিউয়ে গেছেন কায়সার হাসনাত ও কালাম। তাদের অনুপস্থিতিতে সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে জায়গায় করে নিচ্ছেন বিরু ও মাসুম। ফলে সোনারগাঁয়ে এক সময়কার কায়সার কালামের দাপট প্রভাব দিনকে দিন শূন্যের দিকে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি- করোনা মহামারিতে শুধু কায়সার ও কালামই নয় জনগণের মাঝে পুরোদস্তর জননেতা হয়ে ওঠতে পারেনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এইচএম মাসুদ দুলালের মত নেতারাও। যার ফলে ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল সোনারগাঁয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণে এসে বলেছেন, যোগ্য লোকদের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানাগেছে, গত মার্চে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের এক বিশেষ যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও মাসুমের কমিটিই বহাল থাকবে। দলের ঢাকা বিভাগের অধীন সব সাংগঠনিক জেলা ও মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং সংসদ সদস্যদের নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওই সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আহবায়ক ও ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহবায়ক করে যে ৮সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে সে কমিটিই বহাল রাখা হয়েছে। ওই সভায় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ জুলাই সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আহবায়ক ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম যুগ্ম আহবায়ক করে ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ। এ আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে জেলা ও থানার আওয়ামী লীগের ৪০ জন নেতা বিরোধিতা করে কেন্দ্রে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া কেন্দ্রীয় নেতারা বর্তমান আহবায়ক কমিটিকে বৈধ ঘোষণা করে সকল কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়।
এখানে উল্লেখ্যযে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে করোনার মহামারিতে জনসেবায় বেশি আলোচিত হয়েছেন চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। তার নির্বাচনী পিরোজপুর ইউনিয়নেই তিনি ২৭ হাজার পরিবারের মাঝে কয়েক দফা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দের ত্রাণ সামগ্রীর সঙ্গে তিনি ভর্তুকি দিয়েও মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। একই সঙ্গে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সোনারগাঁও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছেন ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর মাসুম। তিনি তার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড ছাড়াও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় ১৩ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। ঈদকে সামনে রেখে আরো ৬ হাজার পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ শেষ করেছেন। তৃতীয় দফায় তিনি আরও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে আসছেন যা চলবে।
এখানে আরও উল্লেখ্যযে, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ সহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা সহ অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। নিয়মিত তিনি শত শত পরিবারের মাঝে পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। এছাড়াও পুুুরো উপজেলার ৭০ জন হিজড়া সম্প্রদায়ের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান করেন এবং ২৫০ জন প্রতিবন্ধীর মাঝেও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
সোনারগাঁও থানা পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পিপিই প্রদান করেছেন। বেদে সম্প্রদায় ও ভিক্ষুকদের মাঝেও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাঝেও উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। ইতিমধ্যে পুরো উপজেলায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে তার। এখন নিয়মিত পৌরসভা ও অন্যান্য ইউনিয়ন এলাকায় তিনি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। এবার তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পাশেও দাঁড়ালেন।