সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আম বাগান থেকে একটি আম পেড়ে খাওয়া নিয়ে দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় একজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহত আইয়ুব আলী (১৮) স্কুল ছাত্র গুলিবিদ্ধ মৃত্যুবরণ করেন।
নিহত আইয়ুব আলী উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইজারকান্দী পূর্বপাড়া এলাকার জয়নালের ছেলে। আইয়ুব আলী স্থানীয় রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
২৭ মে বুধবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলা হামলা পাল্টা- হামলায় দুই গ্রুপের বেশ কিছু বসত বাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে আড়াইহাজার থানা পুলিশ, খাগকান্দা নৌ-ফাঁড়ির ও কালাপাহাড়িয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এ সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে গিয়ে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে জানাগেছে, আম বাগান মালিক ইউছুফ আলী ও স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটেছে। এতে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব দুই গ্রুপের পক্ষ নেন।
স্থানীয়রা জানান, ইজারকান্দি কবরস্থান এলাকায় মুছা আহমেদের মালিকানাধীন একটি লাইব্রেরী রয়েছে। এর কিছু অদূরেই ইউছুফের মালিকানাধীন একটি আম বাগান। শাহজাহান কাউকে না বলে বাগান থেকে আম পেড়ে খায়। এ নিয়ে বাগানের কর্মচারি আইয়ুব আলীর সঙ্গে প্রথমে তার কথা-কাটাকাটি হয়।
আরও জানাগেছে, এ ঘটনায় বুধবার বিকেল ৩টার দিকে আইয়ুব আলীকে মারধর করা হয়। উক্ত খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আমচোর শাহজাহানের পক্ষে ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব ইউছুফের পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। উভয় গ্রুপের প্রায় তিন শতাধিক লোক তাতে অংশ নেন। এ সময় সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, জালাল উদ্দিন ও তার ভাইয়ের ১০টি লুট করা হয়েছে। এ সময় ২৬টি বসতঘর ভাংচুর করা হয়েছে। বসত ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন সাধু, জাকির, লিটন, সাদ্দাম হোসেন, করিম, খোকন, রউফ মিয়া ও তাজু। এ সময় রাসেল, জালাল, খোকন, আলী নুর, ছাদ্দামের ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলাকারী খোকনের পোল্ট্রি খামারে ঢুকে প্রায় ১ হাজার মুরগী লুট করে নিয়েছে।
তবে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন মিডিয়াতে বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা। আমি করোর পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়নি। সংঘর্ষে আমার কোনো ভুমিকা নেই। আমি এর আগেও বিভিন্ন ঘটনায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার নাম জড়ানোর চেষ্টা করছেন।
তিনি দাবি করেন- ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস ছাত্তার ও তার লোকজন ইউছুফের পক্ষ নিয়ে আমার বাড়ি ঘরসহ অনেকের বসত ঘর ভাংচুর করেছেন।
তবে এ ব্যাপারে মাহাবুব গংয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। এতে তাদের কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে কালাপাহাড়িয়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনর্চাজ শহিদুল আলম বলেন, সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আইয়ুব আলী নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি ইজারকান্দি পূর্বপাড়া এলাকার জয়নালের ছেলে। এ সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে গিয়ে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে।
আড়াইহাজার থানার ওসি নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। পরবর্তীতে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।