আড়াইহাজারের কালাপাহাড়িয়ায় বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মেঘনা তীর বেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল এলাকা কালাপাহাড়িয়ায় ৭ জুন রবিবার পুলিশের একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

জেলা পুলিশের এএসপি (সি-সার্কেল) মাহিন ফরাজির নেতৃত্বে অংশ নেন আড়াইহাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম ও কালাপাহাড়িয়ায় পুলিশের তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ শহীদুল আলম।

এ সময় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য এই অভিযানে অংশ নেন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কদমীরচর সহ কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা সহ বিভিন্ন মামলায় পাঁচটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরা হলো কালাপাহাড়িয়া এলাকার লাল মিয়ার ছেলে শাহীন (২৩) ও একই এলাকার সুরুজ মিয়ার ছেলে খলিল (৪০)। এ সময় কাগজপত্র বিহীন দুইটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পুলিশের অভিযানের আগেই এলাকা থেকে অনেকেই ছঁটকে পড়ে।

জেলা পুলিশের এএসপি রুপগঞ্জ ও আড়াইহাজার (সি-সার্কেল) মাহিন ফরাজি বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে কিছু ব্যক্তি আধিপত্য বিস্তার ও বালু মহালকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা করে থাকেন। তাদের দমনে ও বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, মাদক ও বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে এবং পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে।’

কদমীরচর এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশার মিয়ার নামে এক বৃদ্ধা বলেন, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নটি একটা সময় অনেক শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু সম্প্রতিকালে কিছু লোক বালুমহাল, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কারণে হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ছেন। এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়াচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ৪০ বছরের মধ্যে পুলিশের এমন অভিযান আমি দেখিনি। এই অভিযানের ফলে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে। তবে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের স্বার্থে ও জনগণের নিরাপত্তায় পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে আমাদের কাছে ছাড় পাবে না। অপরাধী সে যেই হোক না কেন। তাকে আমরা আইনের আওতায় আনব।’

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মে বুধবার বিকালে তাস খেলা ও বাগান থেকে আম পাড়ায় বাঁধা দেয়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আয়ুব আলী (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র মারা যায়। সে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইজারকান্দী পূর্বপাড়া এলাকার মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে এবং স্থানীয় কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পাশাপাশি স্থানীয় আলোর সেতু পাঠাগার দেখাশোনার দায়িত্বেও ছিলো। মৃতের পরিবারের অভিযোগ কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন তাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। এতে তার মৃত হয়। এ ঘটনায় ২৮ মে বৃহম্পতিবার দুপুরে মৃতের মা আয়েশা বেগম বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। সাদ্দাম হোসেকে প্রধান আসামি করে মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ্য করাসহ অজ্ঞাত আরো ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নং- ১৪(৫)২০২০ইং। বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলা হামলা পাল্টা-হামলায় দুইগ্রুপের বেশ কিছু বসত বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন গং ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হক সাব গংয়ের মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, ইজারকান্দি কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় বিকালে আলোর সেতু পাঠাগারের পাশে কিছু লোক তাস খেলার আসর বসায়। পাশাপাশি পাশেরই একটি বাগান থেকে আম পাড়ে। এনিয়ে প্রতিবাদ করলে পাঠাগারের দায়িত্বে থাকা আয়ুবের সঙ্গে প্রথমে তাদের কথা-কাটাকাটি হয়। বিষয়টি রাতে মীমাংশার কথা ছিলো। এক পর্যায়ে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনগং ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হক সাব গংয়েরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়েন। সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়। সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আয়ুব আলী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ সময় বেশ কিছু বসত ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। মৃতের বড় ভাই নবী হোসেন বলেন, ‘আয়ুব আলী স্থানীয় আলোর সেতু পাঠাগারে চাকরি করতো। পাশাপাশি কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। কিছু লোক পাঠাগারের পাশে তাস খেলার আসর বসায়। পাশাপাশি পাশের একটি বাগান থেকে আম পাড়লে তাতে বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সাদ্দাম হোসেনসহ আরো কয়েকজন মিলে আমার সামনে ভাই আয়ুবের মাথায় পিস্তুল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে।