মাজহারুল ইসলাম রোকন:
মহামারি করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারনে গত ২৫ মার্চ থেকে দেশের সকল সরকারি বেসরকারি সহ সকল আয়ের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। প্রায় আড়াই মাস সব ধরণের আয় উপার্জনের পথ ছিল বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে করোনা সংক্রমন থেকে বাঁচার লড়াই অন্যদিকে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন গরীব অসহায় দুস্থ দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারগুলো। আরও বেশি সমস্যায় পড়ে যান যেসব পরিবারগুলোতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং যারা পুরোপুরি লকডাউনে পড়ে যান। সার্বিক পরিস্থিতি হয়ে ওঠে কঠোর থেকে কঠোরতর।
এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মানুষের জন্য রীতিমত জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছেন তিন জন ব্যক্তি। যাদেরকে কেউ কেউ বলছেন করোনা যোদ্ধা। কেউ কেউ বলছেন মানবতার ফেরিওয়ালা। তিন জন ব্যক্তির তিন দিক থেকে তাদের ভুমিকা নিজেদের অবস্থানের চেয়েও ছিল বেশি। নিজের দায়িত্বের বাহিরে গিয়েও মানবতা দেখিয়েছেন। কাজ করেছেন সংক্রমণ ঠেকাতে। কাজ করেছেন অসহায় মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে। কাজ করেছেন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য। করোনা আক্রান্ত পরিবারগুলোর মাঝে ছুটে চলেছেন তারা।
তাদের এমন সব কর্মকান্ড এখনও পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। সেই তিন ব্যক্তি হলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। এই তিন ব্যক্তির প্রশংসনীয় ভুমিকার কারনে করোনা মহামারির ইতিহাসে সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে তাদের নাম থাকবে স্বর্ণাক্ষরে লেখা। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের সূত্রে, করোনা রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছেন এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি এ্যাম্বুলেন্সের ফোন নম্বরও দিয়েছেন যাতে করে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য যাতায়াতে সুবিধা হয়। একই সঙ্গে তিনি খাদ্য সামগ্রী বিতরণের জন্য হট লাইন চালু করেছেন যে হট লাইনের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলেই তার টিমের সদস্যরা খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিচ্ছেন।
এর আগে নিজ হাতে রাতের আঁধারে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন এমপি খোকা। যারা রিক্সা ভ্যান অটো নিয়ে কাজের সন্ধানে বের হতো তাদেরকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছেন তিনি। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই তিনি সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেছেন এবং জনে জনে গিয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
আবার করোনার উপসর্গ ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন যখন তাদের পরিবারের লোকজন এগিয়ে আসছেনা তখন এমপি খোকার স্বেচ্ছাসেবক টিম ওইসব লাশ দাফন করে চলেছেন। ইতিমধ্যে এক ডজন লাশ দাফন করেছে এই টিম। এই টিমের সদস্যরা ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী বিতরণেও কাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে যখন প্রান্তিক কৃষকের ধান পাকতে শুরু করেছে তখন শ্রমিক সংকটে থাকা কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানলে যুব সমাজ, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ও ছাত্র সমাজের নেতাকর্মীরা অসহায় কৃষকের ধান কেটে দিতে মাঠে নেমে যায়।
এদিকে বিশ্বব্যাপী মহামারি সংক্রমণ রোগ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুল ইসলাম। করোনায় আক্রান্তদের শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে গিয়ে ওই রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং নির্দিষ্ট এলাকা লকডাউন করেন। লকডাউনে থাকা পরিবারগুলো ও করোনায় আক্রান্ত পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি নিজ হাতে। আবার করোনা উপসর্গ নিয়ে কিংবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা লাশ দাফনও করেছেন তিনি।
সেই সঙ্গে গরীব অসহায় দুস্থ দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে গিয়ে নিজ হাতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। স্থানীয় এমপির সঙ্গেও রাতের আঁধারে এসব পরিবারগুলোর মাঝে চাল ডালের বস্তা হাতে করে নিয়ে গিয়ে বিতরণ করেছেন তিনি। করোনায় প্রাথমিক পর্যায়ে যখন বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব রটানো শুরু হয় তখন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে সেই গুজব রটানো বন্ধ করেছেন তিনি।
আবার করোনায় এক শ্রেণির মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয় তখন করোনার ঝুঁকি নিয়ে তিনি হাটে বাজারে গিয়ে হ্যান্ড মাইক নিয়ে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেন এবং দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের কঠোর নির্দেশনা দেন। এসব বিষয়ে বেশকটি ভ্রাম্যমান আদালত জেল ও জরিমানাও করেছেন।
এসব কারনে সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান বেড়ে যায়। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় সাইদুল ইসলামের নামটি ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের কাছে প্রিয়পাত্র হিসেবে আভির্ভুত হয়েছেন এই সরকারি কর্মকর্তা। একই সঙ্গে যে কোন সমস্যায় তিনি সোনারগাঁয়ের যে কোন মানুষের দেয়া তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
করোনা পরিস্থিতিতে যখন কৃষকের ধান পাকতে শুরু করলো তখন তিনি কৃষকের ধান কেটে দিতে ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতি আহ্বান রাখলেন যে- করোনা পরিস্থিতিতে প্রান্তিক কৃষকেরা শ্রমিক সংকটে পড়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের পাকা ধান কাটতে না পাড়লে সেই ধান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তিনি কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে আহ্বান জানান। তার এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন যুব ও ছাত্র সমাজের স্বেচ্ছাসেবী টিম। এতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোও। সেই সঙ্গে তিনি নিজেও কৃষকের ধান কেটে দিতে কাস্তে হাতে কৃষকের জমিতে নেমে পড়েন। এতে স্বেচ্ছাসেবী টিমের কর্মীরা আরও উৎসাহিত হয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ ৮ জুন সোমবার উপজেলার বারদী ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের কয়েক হাজার মানুষ মাইকে ঘোষণা দিয়ে টেটা জুইত্তা বল্লব সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন ওই সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে গিয়ে তিনি দুই গ্রুপকে শান্ত করেছেন। যা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এর আগে দুই গ্রুপের মাঝে ককটেল বিস্ফোরণের মত ঘটনাও ঘটে। পুুলিশ প্রায় ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে হিমশিম খাচ্ছিল তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে বক্তব্য দিয়ে তাদেরকে শান্ত করেন। তার এসব ভুমিকার কারনে কেউ কেউ দাবি করেছেন- একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অতীতে সাধারণ মানুষের কাছে কোন সোনারগাঁয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এতটা পৌছাতে পারেননি। সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের এমন ভুমিকায় তিনিই এখন সোনারগাঁয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে সকলের মধ্যমণি।
গত ৯ জুন মঙ্গলবার উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নে এক প্রান্তিক কৃষকের জমির ধান কাটতে তার স্বেচ্ছাসেবী টিম নিয়ে কাস্তে হাতে মাঠে নেমেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পুরো দেশের মত চলতি মৌসুমের আগাম ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ধান কাটা শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় কৃষকের লোকসান কমানোর জন্য গরীব কৃষকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাইদুল ইসলাম। তার উদ্যোগে মঙ্গলবার সকালে সনমান্দী ইউনিয়নের কৃষকের ধান কেটে দেন সনমান্দী ইউনিয়নের ছাত্রলীগ ও বঙ্গবন্ধু তথ্য প্রযুক্তি লীগের নেতাকর্মীরা। কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে করোনার মহামারিতে জনসেবায় বেশি আলোচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। তার নির্বাচনী পিরোজপুর ইউনিয়নেই তিনি ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবারের মাঝে কয়েক দফা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দের ত্রাণ সামগ্রীর সঙ্গে তিনি ভর্তুকি দিয়েও মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
একই সঙ্গে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সোনারগাঁও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছেন ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর মাসুম। তিনি তার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড ছাড়াও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় আরও ১৩ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষ্যে আরো ৬ হাজার পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তৃতীয় দফায় তিনি আরও কয়েক হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ করে আসছেন যা চলবে। তার এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ এখনও অব্যাহত রয়েছে।
এখানে আরও উল্লেখ্যযে, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ সহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা সহ অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। নিয়মিত তিনি শত শত পরিবারের মাঝে পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। এছাড়াও পুুুরো উপজেলার ৭০ জন হিজড়া সম্প্রদায়ের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান করেন এবং ২৫০ জন প্রতিবন্ধীর মাঝেও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
সোনারগাঁও থানা পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পিপিই প্রদান করেছেন। বেদে সম্প্রদায় ও ভিক্ষুকদের মাঝেও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাঝেও উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। ইতিমধ্যে পুরো উপজেলায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। নিয়মিত পৌরসভা ও অন্যান্য ইউনিয়ন এলাকায় তিনি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। এছাড়াও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। ৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধার বাসায় পুষ্টিকর খাদ্য নিয়ে বিতরণ করেছেন চেয়ারম্যান। এসব কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়মুলক কর্মকান্ডও চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তার ইউনিয়ন এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তার কাজের উদ্বোধন করেছেন তিনি।
লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক
সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম
ও
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস