সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের অটোরিক্সা চালক জামানকে হত্যার মুল রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব-১১। একই সঙ্গে হত্যাকান্ডে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। আসামিদের স্বীকারোক্তিতে বেড়িয়ে এসেছে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা। বন্ধুত্বের ছলে নিরিবিলি স্থানে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয় জামানকে। ১৪ জুন রবিবার বিকেলে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেঃকর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার।
তিনি জানান, গত ২৯ মার্চ মোঃ জামান (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজের ঘটনার প্রেক্ষিতে তার ছোট ভাই মোঃ জাকির হোসেন নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তখন থেকেই অনেক খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে ৩দিন পর ৩১ মার্চ সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন মাওরাদী এলাকায় হাত-পা বাঁধা ও দুই চোখ উপড়ে ফেলা অবস্থায় জামানের লাশ পাওয়া যায়।
অতঃপর নিহত জামানের ছোট ভাই মোঃ জাকির হোসেন বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব আরও জানায়, হত্যাকান্ডের পর থেকেই র্যাব-১১ এর একটি বিশেষ দল হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। মামলা পরবর্তী সময়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হলেও নিহত জামানের নৃসংশ্য হত্যাকান্ড সম্পর্কে ধোঁয়াশা কাটেনি। তাই র্যাব-১১ এর বিশেষ গোয়েন্দা দল এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।
দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস নিবিড় তদন্তের পর গত কয়েদিন যাবৎ বেশ কয়েকটি স্থানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে অবশেষে ১৩ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন নাগেরচর এলাকা হতে মূল অভিযুক্ত মোঃ সাইফুল ইসলামকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তারের পরবর্তীতে আসামীকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, এই নৃসংশ্য হত্যাকান্ডের সাথে সাইফুল জড়িত এবং তার পরিকল্পনায় ও কয়েকজন সহযোগীদের পরস্পর যোগসাজসে জামানকে হত্যা করেছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে। অতঃপর তার দেয়া তথ্য মতে ঘটনায় জড়িত অপর এক সহযোগী আসামী মোঃ বাদশা (৩০)’কে ঐদিন রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলার বগাদি বাজার হতে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, মোঃ সাইফুল ইসলামের বাড়ী নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানাধীন নাগেরচর এবং মোঃ বাদশার বাড়ী বগাদি এলাকায়। নিহত মোঃ জামান পেশায় ছিলেন একজন অটোরিক্সা চালক। গ্রেপ্তারকৃত মোঃ সাইফুল ইসলাম ও বাদশার সাথে ভিকটিম নিহত জামানের অটোরিক্সা নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধ ছিল।
তাছাড়া ঘটনার এক মাস পূর্বে পাওনা টাকা নিয়ে নিহত জামানের ভাই জাকির হোসেন সাইফুলকে রাস্তায় অপদস্থ ও অপব্যবহার করে। তার জের ধরে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে মোঃ সাইফুল ইসলাম, আক্তার ও বাদশাকে নিয়ে জামানকে খুন করার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন জামানকে সাথে নিয়ে সাইফুল, আক্তার ও বাদশাহ একসাথে বাজারে যায় এবং সাইফুল বাজারে গিয়ে আক্তারকে গামছা কিনার জন্য ৪৫ টাকা দেয়। আক্তার গামছা কিনে নিয়ে আসার পর তারা তিনজন জামানকে সাথে নিয়ে নাগেরচর চৌরাস্তায় চা খায়। চা খাওয়ার পর তারা সবাই চৌরাস্তা ব্রীজের কাছে যায়। ব্রীজে পৌছার পর মোঃ সাইফুল ইসলাম, আক্তার ও বাদশা দুষ্টামী করে জামানকে বলে তোর গলা ধরে মেরে ফেলবো।
একই সময়ে বাদশা মাফ চাওয়ার কৌশলে জামানের পা ধরে টান দিয়ে জামানকে মাটিতে ফেলে দেয়। তারপর মূল হত্যাকারী সাইফুল ইসলাম জামানের গলা চেপে ধরে। তখন আক্তার বলে গলা চেপে ধরলে শব্দ হবে তার পরিবর্তে আক্তার গামছা দিয়ে মুখে ও গলায় পেচিয়ে ধরার পর ছুরি দিয়ে গলায় খুচিয়ে খুচিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলে। অতঃপর তারা জামানের মৃত দেহ পাশের কলাবাগানের ভিতরে ফেলে দিয়ে নিজ নিজ বাড়ীতে চলে যায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদ্বয় র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ঘটনার লোমহষর্ক বর্ননা দিয়ে জবানবন্দী প্রদান করে।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া জবানবন্দি থেকে জানা যায় যে, তারাই ভিকটিম জামানকে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন মাওরাদী এলাকায় নিয়ে হাত-পা বেঁধে পাশবিক নির্যাতন করে এবং গামছা দ্বারা নাক-মুখ বেঁধে ছুরি দিয়ে গলায় খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে এবং তার লাশ কলাবাগানে ফেলে দিয়ে আসে।