রোগীকে চিকিৎসা দিতে অনীহায় মৃত্যু ফৌজদারি অপরাধ

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতাল গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে ওই রোগীর মৃত্যু হলে তা ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হবে বলে অভিমত দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে প্রদত্ত নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ রোগীসহ কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা নিয়ে পৃথক পাঁচটি রিটের শুনানি শেষে আজ সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।

আদেশে ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যাতে কোভিড ও নন-কোভিড সব রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা প্রদান করে, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

আদালত বলেছে, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যাতে মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে, সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

আদেশে আদালত বলেছেন, কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে অনীহা দেখালে এবং এতে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

আদেশে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কর্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজভাবে পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো হাসপাতালে আইসিইউতে কতজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কী অবস্থায় আছে, তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

আইসিইউ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং সেলে ভুক্তভোগীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন, সে জন্য পৃথকভাবে ‘আইসিইউ হটলাইন’ নামে পৃথক হটলাইন চালু এবং হটলাইন নম্বরগুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষ করে টেলিভিশন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে বলেছে আদালত।

নির্দেশনায় হাইকোর্ট সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান বা দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয়পত্র ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

সরকার ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় বর্তমান পর্যায়ে লকডাউনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া সংগত হবে না বলে মনে করেন আদালত।

অভিমতে আদালত বলেছেন, দেশে বিদ্যমান সামগ্রিক পরিস্থিতি অর্থাৎ বর্তমানে দেশে বিরাজমান করোনা পরিস্থিতি একটি ‘দুর্যোগ’ বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকার ২০১২ সালের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টের ১৪ ধারা অনুসারে ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ’–এর কার্যক্রমকে সক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। ওই কমিটি কার্যকর হলে কমিটির সুপারিশের আলোকে ওই আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক রিক্যুইজিশন করা যেতে পারে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালের ‘আইসিইউ বেড অধিগ্রহণ’ ও অনলাইনে ‘সেন্ট্রাল বেড ব্যুরো’ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেপুটি রেজিস্ট্রার শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন ৬ জুন হাইকোর্টে একটি রিট করেন। আদালতে এই রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান।

ঢাকা শহরকে লকডাউন ঘোষণা ও চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত হাই ফ্রো-নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা সংগ্রহের নির্দেশনা চেয়ে ১১ জুন আইনজীবী মো. মাহবুবুল ইসলাম অপর রিটটি করেন। এই রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

এর আগে সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ না করে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সাধারণ রোগীদের (নন–কোভিড) ফিরিয়ে দেওয়ার বৈধতা নিয়ে ১০ জুন আরেকটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী। তাঁরা হলেন, আইনজীবী এ এম জামিউল হক, মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মদ মেহেদী হাসান ও এ কে এম এহসানুর রহমান। এই রিটের পক্ষে আবেদনকারীরা নিজে শুনানিতে অংশ নেন।

আর করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকারি নির্দেশনার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ না নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ১০ জুন অপর রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। এই রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক।

এ ছাড়া মহামারি করোনাভাইরাসের সময় হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের নির্দেশনা চেয়ে একই দিন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন আরেকটি রিট করেন। এ রিটের পক্ষের নিজেই শুনানি করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল অমিত তালুকদার, সঙ্গে ছিলেন সহাকারী অ্যার্টনি জেনারেল অবন্তী নূরুল।

সূত্র: ঢাকাটাইমস