সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জে ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ ওঠেছে মহানগর মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনার বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠেছে- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এমপি একেএম শামীম ওসমানের ছবিও ওই কার্যালয়ে ভাংচুর করা হয়েছে।
১৬ জুন মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফ হাসান অর্নব। তিনি অভিযোগ করেন কাউন্সিলর দিনার নেতৃত্বে বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসী বাহিনী এই হামলা চালায়। তিনি রাতে মিডিয়া কর্মীদের কাছে এই অভিযোগ করেন এবং কার্যালয় ভাংচুরের চিত্র দেখান।
অন্যদিকে জানাগেছে, আপন খালার সঙ্গে একটি বাড়ি নিয়ে বিবাদের জের ধরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে যান কাউন্সিলর দিনা। এ বিষয়ে বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেন দিনার খালা। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনার পর রাতে ছাত্রলীগের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয় বলেও অভিযোগ করা হয়।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও বিএনপির মহানগর মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আয়শা আক্তার দিনার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন তারই আপন খালা রাশিদা বেগম। ১৬ জুন মঙ্গলবার বিকেলে ৮নং ওয়ার্ডের তাঁতখানা এলাকায় তিনি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন- আগের দিন সোমবার রাতে রাশিদা বেগম ও তার ছেলে রুবেলকে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে মারধর করেছেন কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
একই সঙ্গে রুবেল ও রাশিদা বেগমকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলে তাদের উপরেও হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। ওই হামলায় গুরুত্বর আহত হয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি যিনি রুবেলের বন্ধু রাকিবুল হাসান রাকিব। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান রাশিদা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে রাশিদা বেগম লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি আব্দুল গফুরের স্ত্রী রাশিদা বেগম। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আমার বাড়ি বৌ-বাজার। আমি অতি সাধারণভাবে জীবন যাপন করি। আমার কোন রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। আমার আয়ের উৎস শুধু বাড়িভাড়া। আমার বাড়িটি এখনও নির্মাণাধীন। তাই আমি আমার বাড়িতে বিগত অনেক বছর যাবত অবস্থান করতে পারিনা। তার কারনে (কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা ও তার ভাই দিপু আমার আপন বোনের ছেলে) আমাকে নানাভাবে ভয় ভীতি দেখায়। আমার এখন অন্য বাড়িতে অবস্থান করার মত পরিস্থিতি নাই। তাই আমি আমার নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে সিদ্ধান্ত নেই।
তিনি আরও বলেন, আরো ৪/৫ মাস আগেই আমার বাড়ির ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করি। তখন থেকে কাউন্সিলর দিনা ও তার ভাই দিপু আমাকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছিল। এরপর মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে মানবিক দিক চিন্তা করে কোন প্রকার চাপ দেইনি। এখন দেশের পরিস্থিতিতে মোটামুটি স্বাভাবিক হওয়ায় আমার খুব বিশেষ প্রয়োজনে আমার বাড়িতে আসা অপরিহার্য্য হয়ে পড়েছে। তাই আমি আমার ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছাড়ার জন্য আরও দেড় মাসের সময় দিয়ে অনুরোধ করি এবং বাড়ি ভাড়া বাবদ ১৫ হাজার মওকুফ করে দেই। তখন কাউন্সিলর দিনা ও তার ভাই দিপুর ইন্ধনে ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছাড়তে নারাজ।
তিনি বলেন, ১৫ জুন সোমবার রাতে সাড়ে ৯টায় আমার ছেলে ভাড়াটিয়াকে বারবার অনুরোধ করা অবস্থায় কাউন্সিলর দিনা ও তার ভাই দিপু ২০/৩০ জন লোকজন নিয়ে উপস্থিত হয়ে বলে আমার ছেলেকে কুকুরের মত পিটাবে এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তখন আমার ছেলে আমাকে জানায়। আমি তখন দিনার সঙ্গে কথা বলার জন্য তার কাছে যাই। তখন আমার কথা শুরু করার আগেই দিনা মারধর শুরু করে। তখন সেখানে উপস্থিত লোকজন দিনার হাত থেকে রক্ষা করে আমাকে বের করে দেয়।
‘বের হয়ে গেলে দিনার ভাই দিপু রাস্তায় আমাকে মারধর শুরু করে। তখন আমার ছেলের বন্ধু অনিক ও রাকিব আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। তখন দিনা নির্দেশ দেয় আমার সাথে যারা আছে তাদের সকলকে মারধর করতে। তখন দিনার গুন্ডাবাহিনা সকলকে মারধর শুরু করে।’
তিনি বলেন, সেখান থেকে তারপর আমার জীবনের নিরাপত্তার জন্য থানায় জিডি করি। এখন দিনা ও তার ভাই দিপু গুন্ডাবাহিনী দিয়ে হুমকি ধমকি দিচ্ছে আমাদের চিরতরে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিবে। দিনা আমার ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি সাধারণ একজন মানুষ। আমি দিনা কাউন্সিলরের সাথে কখনই পারবোনা। আমাকে আপনারা বাঁচান। আমি এমপি একেএম শামীম ওসমান সাহেবের কাছে ও প্রশাসনের কাছে আমার জীবন রক্ষার জন্য ভিক্ষা চাই।’ এ সময় একই বর্ণনা দেন রাশিদা বেগমের ছেলে রুবেলও।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক তামিম ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব, আনারুল হক, ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ হাসান, সহ-সভাপতি ওয়াসিম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য মোহাম্মদ রাজিব, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাহাবুব আলম, ৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আক্তার হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রিপন, যুবলীগ নেতা নূর হাসান বাবু, মহানগর ছাত্রলীগের উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সীমান্ত, ৮নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অহিদ আলম, যুবলীগ নেতা পুষন ও সোহাগ প্রমূখ।
এখানে উল্লেখ্যযে, এর আগে মঙ্গলবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে করে কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা অভিযোগ করেন- তার খালা রাশিদা বেগম ও খালাতো ভাই রুবেলের সঙ্গে বিরোধের মাঝে ছাত্রলীগের নামধারী নেতাকর্মীরা তার কার্যালয়ে এসে তার উপর হামলা চালিয়েছে এবং কার্যালয় ভাংচুর করেছেন। এ বিষয়ে তিনি থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতা তামিম ইসলাম বলেন, তাদের পারিবারিক ঘটনায় কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি করোনা পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তার দল বিএনপিতে তার অবস্থান পোক্ত করতে ছাত্রলীগকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। আজকে সকালে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগের নামধারী নেতাকর্মী বলেছেন। সেই সঙ্গে অকথ্য অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দাবি করেন- একজন মানুষকে বা একজন নারীকে যখন রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নৈতিকতার কারনেই ওই মানুষটিকে বাঁচাতে এগিয়ে যাবে স্বাভাবিক। তাছাড়া বিষয়টি এলাকার। কাউকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হলে যে কেউ এগিয়ে আসতেই পারে। তাই বলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ তোলা সেটা সঠিক নয়। উনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রত্যাহার করার দাবি জানাই। নতুবা ছাত্রলীগ এর কঠোর জবাব দিতে বাধ্য হবে।
ছাত্রলীগের এ নেতা আরো বলেন, করোনা মহামারিতে দলমতের বাহিয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে দেশের জনগণ যখন এক হয়েছে, তখন এই কাউন্সিলর দিনা প্রধানমন্ত্রীর উপহার চাল অর্ধেক করে প্যাকেট করে নিজ নামে বিতরণ করছে। সে বিএনপির মহিলা দলের নেতা হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে যাচ্ছে। আবারো বলতে চাই কাউন্সিলর দিনা ছাত্রলীগকে নিয়ে যে মিথ্যা কথা বলেছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।