সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষ অবদান রাখায় সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলামকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সংবর্ধনায় মোবারক হোসেন স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। ২২ জুন সোমবার সকালে সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ও মোবারক হোসেনের স্মৃতি সংসদের চেয়ারম্যান এরফান হোসেন দ্বীপসহ অন্যান্যরা।
বিশ্বব্যাপী মহামারি সংক্রমণ রোগ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুল ইসলাম। করোনায় আক্রান্তদের শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে গিয়ে ওই রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং নির্দিষ্ট এলাকা লকডাউন করেন। লকডাউনে থাকা পরিবারগুলো ও করোনায় আক্রান্ত পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি নিজ হাতে। আবার করোনা উপসর্গ নিয়ে কিংবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা লাশ দাফনও করেছেন তিনি।
সেই সঙ্গে গরীব অসহায় দুস্থ দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে গিয়ে নিজ হাতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। স্থানীয় এমপির সঙ্গেও রাতের আঁধারে এসব পরিবারগুলোর মাঝে চাল ডালের বস্তা হাতে করে নিয়ে গিয়ে বিতরণ করেছেন তিনি। করোনায় প্রাথমিক পর্যায়ে যখন বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব রটানো শুরু হয় তখন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে সেই গুজব রটানো বন্ধ করেছেন তিনি।
আবার করোনায় এক শ্রেণির মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয় তখন করোনার ঝুঁকি নিয়ে তিনি হাটে বাজারে গিয়ে হ্যান্ড মাইক নিয়ে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেন এবং দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের কঠোর নির্দেশনা দেন। এসব বিষয়ে বেশকটি ভ্রাম্যমান আদালত জেল ও জরিমানাও করেছেন।
এসব কারনে সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান বেড়ে যায়। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় সাইদুল ইসলামের নামটি ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের কাছে প্রিয়পাত্র হিসেবে আভির্ভুত হয়েছেন এই সরকারি কর্মকর্তা। একই সঙ্গে যে কোন সমস্যায় তিনি সোনারগাঁয়ের যে কোন মানুষের দেয়া তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
করোনা পরিস্থিতিতে যখন কৃষকের ধান পাকতে শুরু করলো তখন তিনি কৃষকের ধান কেটে দিতে ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতি আহ্বান রাখলেন যে- করোনা পরিস্থিতিতে প্রান্তিক কৃষকেরা শ্রমিক সংকটে পড়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের পাকা ধান কাটতে না পাড়লে সেই ধান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তিনি কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে আহ্বান জানান। তার এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন যুব ও ছাত্র সমাজের স্বেচ্ছাসেবী টিম। এতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোও। সেই সঙ্গে তিনি নিজেও কৃষকের ধান কেটে দিতে কাস্তে হাতে কৃষকের জমিতে নেমে পড়েন। এতে স্বেচ্ছাসেবী টিমের কর্মীরা আরও উৎসাহিত হয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে।
গত ৮ জুন সোমবার উপজেলার বারদী ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের কয়েক হাজার মানুষ মাইকে ঘোষণা দিয়ে টেটা জুইত্তা বল্লব সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন ওই সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে গিয়ে তিনি দুই গ্রুপকে শান্ত করেছেন। যা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এর আগে দুই গ্রুপের মাঝে ককটেল বিস্ফোরণের মত ঘটনাও ঘটে। পুুলিশ প্রায় ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে হিমশিম খাচ্ছিল তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে বক্তব্য দিয়ে তাদেরকে শান্ত করেন। তার এসব ভুমিকার কারনে কেউ কেউ দাবি করেছেন- একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অতীতে সাধারণ মানুষের কাছে কোন সোনারগাঁয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এতটা পৌছাতে পারেননি। সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের এমন ভুমিকায় তিনিই এখন সোনারগাঁয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে সকলের মধ্যমণি।
গত ৯ জুন মঙ্গলবার উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নে এক প্রান্তিক কৃষকের জমির ধান কাটতে তার স্বেচ্ছাসেবী টিম নিয়ে কাস্তে হাতে মাঠে নেমেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পুরো দেশের মত চলতি মৌসুমের আগাম ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ধান কাটা শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় কৃষকের লোকসান কমানোর জন্য গরীব কৃষকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাইদুল ইসলাম।
এদিকে ‘জনসেবার জন্য প্রশাসন’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে ‘উন্নত বাংলাদেশ’ গড়তে অবিরাম গতিতে তার উদ্যম উৎসাহে এগিয়ে চলছে সোনারগাঁও উপজেলা প্রশাসন।
বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং বন্ধসহ ভুমি খেকোদের কবল থেকে নদী-কৃষি জমির মাটি রক্ষায় নিয়মিত মোবাইল কোট পরিচালনা করেন। বাজার মনিটরিং এর মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য উবর্ধগতি রোধ, খাদ্যের গুণগত মান উন্নয়নসহ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।