বিএনপিতে পদ-পদবীর লোভে বগলবন্দি কর্মীদের মুখে ভাইয়ের শ্লোগান!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের সংখ্যা কমেই গেছে। এখানকার রাজনীতিতে সবাই এখন ‘ভাই’র কর্মী। দলীয় শ্লোগানের চেয়ে নারায়ণগঞ্জে যার যার পছন্দের ভাইয়ের পক্ষে শ্লোগান তুলতে তুলতে মুখে লালা তুলে ফেলার অবস্থা। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের চেয়ে এখানকার কর্মীরা তাদের ভাইয়ের জন্মদিন পালনের মহাৎসবের ঝড় তুলে যাচ্ছে অহরহ। কেউ কেউ কর্মীদের বগলবন্দি করতে নিজেকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিচ্ছেন। কেউ কেউ কথায় কথায় বলেন লন্ডনে একটু আগেই কথা হলো। কেউ কেউ মালেশিয়া গিয়ে ঘুরে আসলেও নারায়ণগঞ্জে এসে বলেন গত সপ্তাহে লন্ডন থেকে আসলাম। আবার কেউ কেউ নিজেকে খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দেন। কেউ কেউ প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন।

এরি মাঝে সোনারগাঁয়ের এক নেতা নিয়মিত দাবি করেন তার বন্ধু দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মধ্যমসারির নেতারা এখন ধরেছে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহম্মেদকেও। নারায়ণগঞ্জে রিজভীকে নিয়ে এসেও নিজের শক্ত অবস্থান বুঝানোর চেষ্টা করছেন কিছু নেতা। এসব মুলদলের নেতাদের সঙ্গে অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা আবার লাফালাফি করছেন তারেক রহমানের কথিত পিএস এপিএস পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের নিয়ে। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে চরম ভন্ডামীর সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মোটকথা নারায়ণগঞ্জের বেশির ভাগ নেতারা কথায় কথায় তারেক রহমানের নাম ভাঙ্গান। যুবদল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলে বেড়ান তাদের সংগঠনের সিদ্ধান্ত আসছে লন্ডন থেকে। দলের প্রতিষ্ঠাতার নাম যতবার না নেয় তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি লন্ডন শব্দটি নেতাদের মুখে শোনা যায়।

এসবের মাঝে রয়েছে রাজপথের কর্মীদের চরম হতাশায় ফেলে দেয়ার কৌশল। নিজেদের বলয় পোক্ত করতে অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে বসানোর লোভ প্রলোভন দেখিয়ে কর্মীদের বগলবন্দি করছেন নেতারা। বছরের পর বছর ভাই মার্কা নেতারা পদের লোভ দেখিয়ে তাদের পেছনে ঘুরাচ্ছেন। এসব কর্মীরাও পদের লোভে ভাই মার্কা নেতাদের পেছনে যতদিন ঘুরঘুর করে ততদিন দলের জন্য কাজ করলে এমনিতেই পদে বসতে পারতেন। কিন্তু এ জেলায় রাজপথের ত্যাগের বিনিময়ে কমিটির নেতৃত্ব পাওয়া যায় সেই বিশ^াস ওঠে গেছে। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে কমিটিতে দু’একজন বাদে বাকিরা কেউই দলের মাঝে অবদানের বিনিময়ে পদ পায় না। বেশির ভাগ পদ মিলে যায় আধারে বিশেষ সুবিধায়। সেই বিশ^াস এখন কর্মীদের মাঝে।

এসব কারনে রাজপথে ভুমিকা রাখার চেয়ে কর্মীরা তাদের ভাইয়ের পক্ষে শ্লোগান দেন এবং পদের আশা করেন। লবিং গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে পদ ভাগিয়ে আনতে চান। আবার কেউ কেউ রাজপথে আন্দোলন করে জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করেও যখন যোগ্যতম পদে বসতে না পারেন তখন তিনিও হতাশা হয়ে পিছিয়ে যায়। কেন্দ্র থেকে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা দিলেও এসব কর্মীদের ভাইখ্যাত নেতারা কর্মসূচিতে উপস্থিত না হলে কর্মীদেরও কর্মসূচিতে দেখা যায়না।

অতীতে এমনও দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির একন নেতা হাজিরা দিতে এসেছেন, সেই দিন কয়েকশত নেতাকর্মীরা সেই নেতার হাজিরার দিন আদালতপাড়ায় এসেছেন এবং ফটোসেশনও করেছেন। কিন্তু একই দিন বিকেলে যখন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি হলো সেখানে ওইসব কর্মীদের কাউকেই দেখা যায়নি। ফলে বেগম খালেদা জিয়ার চেয়েও এখানকার ভাই খ্যাত নেতারা কর্মীদের কাছে বেশি বড়। দলীয় কোন মিটিং মিছিল কিংবা শোডাউনের প্রস্তুতি হলে সেখানে জিয়াউর রহমান, বেগম খারেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামের চেয়ে স্থানীয় নেতাদের নামে শ্লোগানটাই বেশি দেখা যায়। কোন কর্মসূচির ব্যানার ফ্যাস্টুনে স্থানীয় নেতাদের ছবির মাঝে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমানের ছবি দূর্বিণ দিয়েও খুঁজে পাওয়া দায়।

এসবের মাঝে এখন নতুন করে আলোচনায় করোনা মহামারিতে জনগণের মাঝে শীর্ষ নেতাদের কার কি ভুমিকা। নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে কেবল মহামারিতে জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্য সামগগ্রী বিতরণ করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এ ছাড়াও আর কাউকেই জোড়ালো দেখা গেল না। সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে রূপগঞ্জে তৈমূর আলমের পক্ষে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন তার নেতাকর্মীরা। এখন চলছে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি। ফতুল্লায় বিএনপির কোন নেতা আছে কিনা তাদের ছায়াও দেখা গেল না জনগণের মাঝে। সোনারগাঁয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নান ছাড়া বাকিদের দেখা মিলেনি। আড়াইহাজারে জনগণের মাঝে দাড়িয়েছেন মাহমুদুর রহমান সুমন। বাকিদের মধ্যে দুএকজনকে ফটোসেশন করতে দেখা গেলেও কার্যত জনগণের মাঝে ছিলেন না।