সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন শীর্ষ নেতারা। কিন্তু মহানগর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির শীর্ষ ৫ নেতার মাঝে চরম অনৈক্য দেখা দিয়েছে। এক সময় সভাপতি ও সেক্রেটারির মাঝে ঐক্য দেখা গেলেও বর্তমানে সেই সম্পর্কেও চির ধরেছে। ফলে কমিটি গঠনে শত চেষ্টা করেও এগুতে পারছেনা মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ। যে কারনে পদ প্রত্যাশি হতাশাগ্রস্থ নেতাকর্মীরা বলছেন- মহানগর ছাত্রদলের সুপার ফাইভের ভেজালের কারনে হচ্ছেনা কমিটি!
তবে মহানগর ছাত্রদলের একজন সহ-সভাপতি প্রকাশ না করার শর্তে মিডিয়া কর্মীদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, মিডিয়াতেও আসছে সুপার ফাইভ, আবার কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সুপার ফাইভ, কর্মীরাও নাচানাচি করছে সুপার ফাইভ নিয়ে, আপনারা সাংবাদিকেরাও তাই। কিন্তু মিডিয়াতে প্রশ্ন রাখতে চাই সুপার ফাইভের মধ্যে দুজন নেতাকে গত দুই বছরে ছাত্রদলের কোন কর্মকান্ডে দেখা গেছে কিনা? মহানগর ছাত্রদলের রাজনীতিতে সভাপতি ও সেক্রেটারির ভুমিকা ছাড়া বাকি একজনকে মাঝে সাজে দেখা গেলেও বাকি দুজনকে মহানগর ছাত্রদলের কর্মকান্ডে সক্রিয় কি ছিলেন? ছিলেন না। এখন নিস্ক্রিয়দের হাতে সক্রিয় নেতাকর্মীদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে বিষয়টি মানতে পারিনা।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সূত্রে, মহানগর ছাত্রদলের আওতাধীন বন্দর, সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সহ বিভিন্ন কলেজ বিশ^বিদ্যালয় শাখা কমিটিগুলো গঠনের জন্য করোনা পরিস্থিতির পূর্বে সুপার ফাইভের নেতাদের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছিল। সেই সঙ্গে বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নেও কমিটি গঠন করবে মহানগর। সম্প্রতি বৈঠকের আহ্বান জানালেও পাঁচ নেতা এক টেবিলে বসতে পারেননি। কেউ কেউ জানিয়েছেন করোনা পরিস্থিতিতেও তারা বৈঠক করেছেন। কিন্তু কমিটি গঠনের বিষয়ে তারা একমত হতে পারেননি। এ নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন সভাপতি সাহেদ আহম্মেদ। আর সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবু সহ বাকিরা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন মহানগরীর বাহিরের কোন নেতার অঙ্গুলী ইশারায়। আবার মহানগরীর ভিতরকার থেকে কোন কোন নেতা মতবিরোধ সৃষ্টির পেছনে কাজ করছেন। ফলে কমিটি গঠনের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও সফল হয়ে ওঠতে পারেনি।
কেউ কেউ জানিয়েছেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি রাফিউদ্দীন রিয়াদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আমিন প্রধান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মাগফুর ইসলাম পাপন এক হয়ে সেক্রেটারি বাবুকে নিয়ে সভাপতি বিরোধী জোট করেছেন। তারা রাজনৈতিক কৌশলতগত কারনে সভাপতিকে বেশ চাপে রেখেছেন। তাদের মাঝে ইগো কাজ করছে। যে কারনে কেউ কারো মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা। যার ফলে কমিটি গঠন হয়ে ওঠছে না এবং কমিটি না হওয়ার কারনে আবারো হতাশায় পড়েছেন পদ প্রত্যাশি নেতারা।
অন্যদিকে বেশকটি সূত্রে জানাগেছে, ছাত্রদলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নির্দেশিত শর্তগুলো মানতে পারছেনা নেতারা। কেউ কেউ আড়াল করে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলেও এসএসসি কার কত সাল এবং কার কতটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতা সেটা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন মহানগর ছাত্রদলের এই কমিটি বিভিন্ন ইউনিট কমিটিগুলো গঠনের পরপরই কেন্দ্র থেকে ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে। মহানগর ছাত্রদলের কার্যত সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে সেটা দেখাতে পারেনি। রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও দুএকটি বড় শোডাউন ছাড়া আর কিছু দেখাতে পারেনি। আংশিক কমিটি গঠনের পর থেকে বিরোধ বিভক্তি সহ নিয়ে বিতর্কই আলোচনায় ছিল মহানগর ছাত্রদল।
আরও জানাগেছে, গত ১৮ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কার্যনির্বাহী সভায় সারাদেশে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় মেনে কমিটি গঠন করতে হবে তার নির্ধারণ করা হয়। যথাঃ-
বিভিন্ন ইউনিট কমিটির ক্রাইটেরিয়া বা পদ প্রার্থিতার বৈশিষ্ট্যঃ
★ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাংগঠনিক জেলা ও জেলা সমমান শাখার (জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়) পদ প্রত্যাশী প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে এবং বয়সসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রার্থীর এসএসসি পাশের সন কোনভাবেই ২০০৩ সালের পূর্বে হতে পারবেনা।
★ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাংগঠনিক উপজেলা ও উপজেলা সমমান শাখার (উপজেলা, থানা, পৌর ও কলেজ) পদ প্রত্যাশী প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে এবং বয়সসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রার্থীর এসএসসি পাশের সন কোনভাবেই ২০০৫ সালের পূর্বে হতে পারবেনা।
★বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদ প্রার্থিতার ক্ষেত্রে প্রার্থীকে অবিবাহিত হওয়ার সাথে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ছাত্রত্ব থাকা বাধ্যতামূলক।
★ ঢাকা মহানগরে অবস্থিত সাংগঠনিক জেলা সমমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ প্রত্যাশীদের এসএসসি পাশের সাল ২০০৫ এর পূর্বে হতে পারবে না।
★ ঢাকা মহানগরে অবস্থিত উপজেলা সমমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ প্রত্যাশীদের এসএসসি পাশের সাল ২০০৭- এর পূর্বে হতে পারবে না।
★ উন্মুক্ত ও কারিগরির সার্টিফিকেট (বয়স সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে) গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
★ আহ্বায়ক কমিটিতে কেবল আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব সাইনিং পাওয়ারের অধিকারি হবেন।
★ জেলা কমিটির সুপার ফাইভ ব্যতিত অন্যরা উপজেলার আহ্বায়ক কমিটিতে প্রার্থী হতে পারবেন।
★ আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ জেলা, জেলা সমমান ৯০ (নব্বই) দিন ও উপজেলা, উপজেলা সমমান ৬০ (ষাট) দিন এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ৩০ (ত্রিশ) দিন ধার্য করা হলো।
★ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সংখ্যা জেলা, জেলা সমমান ৩১জন, উপজেলা, উপজেলা সমমান ২১জন ও ইউনিয়ন-ওয়ার্ড ১১ জন নির্ধারণ করা হয়েছে।
★ ছাত্রী নেত্রীদের বৈবাহিক অবস্থা শিথিলযোগ্য।
★জেলা, জেলা সমমান, উপজেলা, উপজেলা সমমান ছাত্রদলের কমিটিতে কোন পদে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন এসএসসি উত্তীর্ণ হতে হবে।