সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে কাগজপত্রে জামেলাকৃত জমিজমা নিয়ে নিজেই জামেলা সৃষ্টি করছেন চেয়ারম্যান হা-মীম শিকদার শিপলু। একটি অসহায় পরিবারকে নিঃস্ব করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ওঠার পর তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার সহ স্থানীয়রা।
আব্দুল মান্নান নামের একজনকে নিঃস্ব করে তুলেছেন বলে এমন অভিযোগে স্থানীয় মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা দাবি করে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি হলেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হা-মীম শিকদার শিপলু।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান শিপলু দাবি করেন, আমি সরল মনে আমার নিজ ইউনিয়নের বাসিন্দা ভেবে তাদেরকে ক্ষমা করে দেই এবং টাকা দিতে রাজি হই কিন্তু সামনে নির্বাচন আমাকে হেনস্তা করার জন্য কিছু কুচক্রি মহল আমার অর্জিত সম্মানহানির জন্য বিভিন্ন ধরণের পায়তারা করছে এবং বিভিন্নভাবে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কৌশল অবলম্বন করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সম্মানহানির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো দাবি করেন, ২০১৭ সালে তিনি এবং তার বন্ধু আশরাফুল আলম মাকসুদ স্থানীয় বাসিন্দা তাজউদ্দিনের মাধ্যমে মোঃ মান্নানের নিকট হতে ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন ২৫ লক্ষ টাকায়। পরে তা যথাযথভাবে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। কিন্তু সেই একই জমি পূর্বেও মো. মান্নান তার আপন ভাতিজার নিকটে বিক্রি করে চেয়ারম্যানের সম্মানহানির জন্য ফন্দি কষে। একই জমি যখন দুইবার বিক্রি করার ব্যাপার চেয়ারম্যান জানতে পারেন এবং মোঃ মান্নান সহ তার ভাতিজাকে ডেকে বিষয়টির সমাধান করতে চাইলে তারা মোটা অংকের টাকা দাবি করেন।
অন্যদিকে গত ১৭ জুলাই স্থানীয় সোনারগাঁও নিউজ নামের একটি অনলাইনে প্রকাশিত হয় যে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হা-মীম শিকদার শিপলুর প্রতারণায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এক অসহায় পরিবার। ওই পরিবারের কাছে জমি ক্রয় করে পুণরায় ফেরতের নামে পুরো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান শিপলুর বিরুদ্ধে। টাকা ও জমি চাইতে গেলেই মিথ্যা মামলার হুমকিতে ওই পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। চেয়ারম্যানের হাত থেকে রক্ষা পেলে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
জানা যায়, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বাহ্মণবাওগা মৌজায় তালতলা বাস স্ট্যান্ডের পাশে মহজমপুর কাজিপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের ৬ শতাংশ জমি ছিল। ওই জমি আব্দুল মান্নান বিক্রির জন্য মত প্রকাশ করলে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার মাধ্যমে জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ওই জমিটি ২৫ লাখ টাকায় ২০১৭ সালের ২৮আগষ্ট জমিটি সাব কাবলা মূলে আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে বৈদ্যেরবাজার সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে কিনে নেন চেয়ারম্যান হা-মীম শিকদার শিপলু ও তার বন্ধু আশরাফুল ভূঁইয়া মাকসুদ। জমি কিনে নেওয়ার সপ্তাহ খানের পর ওই জমিতে সমস্যা রয়েছে অজুহাতে জমি ফেরত নিতে জমির মালিক আব্দুল মান্নানকে চাপ প্রয়োগ করেন চেয়ারম্যান শিপলু। অসহায় গরিব হওয়ার কারনে চেয়ারম্যানের হুমকিতে টাকা ফেরত দিয়ে জমি পুণরায় তার করে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন আব্দুল মান্নান।
পরবর্তীতে চেয়ারম্যান শিপলুর কয়েক দফায় মান্নানের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। আব্দুল মান্নান ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর যুবলীগ নেতা তাইজদ্দিন সঙ্গে গিয়ে ঢাকা ব্যাংক ভুলতা শাখায় ১৮ লাখ টাকা চেয়ারম্যান শিপলুর ব্যাক্তিগত হিসাব নাম্বার ২৩৪১০০৪৪৪ তে জমা করেন। এছাড়াও নগদ ৫ লাখ টাকা শিপলুর কর্মী আজিজুলের হাতে দেন আব্দুল মান্নান ও তার ছেলে জয়নাল আবেদীন।
এদিকে জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জমি ক্রয়ের টাকা ফেরত পেলেও জমি ফেরত দেওয়ার নাম করে তিনি আর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে যাননি। টাকা ফেরত পাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর চেয়ারম্যান শিপলু মান্নানের কাছ থেকে ক্রয় করা জমি সোনারগাঁ উপজেলা ভূমি অফিস থেকে খারিজ করে তার নিজের নামে করে নেন। টাকা ফেরত দেওয়ার পর চেয়ারম্যান শিপলুর কাছে একাধিকবার টাকা ও জমি ফেরত চেয়ে হত্যা, মারধর ও মিথ্যা মামলার হুমকি পেয়েছেন ভূক্তভোগী পরিবার। এ নিয়ে চেয়ারম্যান শিপলুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা জমির মালিক আব্দুল মান্নানকে ফেরত দেওয়ার জন্য রাজি হন। এটাকার মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিতে গড়িমসি করছেন চেয়ারম্যান শিপলু। এতে করে পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিপলু এক সময় রিক্সায় চড়ে যাতায়ত করতো। মাটি সন্ত্রাস আর মানুষের জমি দখল করে এখন সে গাড়ি বাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তার সুষ্টু বিচার দাবী করছি।
ভূক্তভোগী আব্দুল মান্নান বলেন, চেয়ারম্যানের প্রতারণার কারনে আমার পরিবারের শেষ সম্বলটা হারিয়েছি। সরল মনে বিশ্বাস করে আমি টাকাগুলো ফেরত দিয়ে জমি ও টাকা দুটাই হারিয়েছি। তার কারনে আমাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
মান্নানের ছেলে জয়নাল আবেদীন বলেন, আমাদের শেষ অবলম্বন ছিল ওই জমিটি। ভেবেছিলাম ওই জমি বিক্রি করে ব্যবসায়ে টাকা খাটিয়ে সংসারের হাল ধরবো। চেয়ারম্যান শিপলুর প্রতারণার শিকার হয়ে আমাদের অসহায় জিবন যাপন করতে হচ্ছে। এটাকা ফেরত চাইতে গেলে মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানীর শিকার হতে হবে বলে জানিয়েছেন শিপলু।
অভিযুক্ত জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামীম শিকদার শিপলু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মান্নান আমার সাথে প্রতারণা করে জমি বিক্রি করেছেন। আমার কাছে বিক্রির আগে তার ভাতিজার কাছে বিক্রি করায় জমি মাত্র ১ শতাংশ ৪০ পয়েন্ট টিকে। তাই আমার টাকা ফেরত নিয়েছি। জমি রেজিষ্ট্রিতে আমার ৫ লাখ টাকার খরচ হওয়ায় ওই হিসেবে তাদের টাকা পরিশোধ হয়ে যায়। টাকা ফেরত পেয়েও জমি খারিজ করা ও জমি ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা এড়িয়ে যান।