সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
সাত খুন মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমাম কালামের সঙ্গে যোগসূত্রের বিষয়ে গোমর ফাঁস করে দিয়েছে খোদ সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ।
২১ জুলাই মঙ্গলবার উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কালাম ও নূর হোসেন সম্পর্কে জানানো হয়- ২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে বাংলাদেশে আলোচিত সেভেন মার্ডারের কারিগর বর্তমানে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নুর হোসেনকে সোনারগাঁ এনে ৩০টি গাড়ি বহর নিয়ে বিভিন্ন অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত করে বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ও দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেড করা, মারধর করা ও অনেককে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। সেদিনের বিভীষিকা আজও সোনারগাঁয়ের দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের মনে হলে শিউরে উঠেন।
এদিকে ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের অনুমোদিত যা কেন্দ্রীয়ভাবে স্বীকৃত সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি থাকার পরেও নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে দলের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কালাম লাইভে এসে নানা বিভ্রান্তিমুলক বক্তব্য দিয়েছেন বলে এবার তার সমুচিত জবাব দিয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগ।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি- মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে যখন উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে উপজেলার প্রতিটি এলাকায় গরীব অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী, ঈদ সামগ্রী, ইমাম মোয়াজ্জিন সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আস্থা অর্জন করেছে বর্তমান কমিটি, তখন মাহফুজুর রহমান কালামকে দু’একবার দেখা গেলেও তেমন একটা গরীব মানুষের মাঝে দেখা যায়নি। ব্যাপক প্রসংশা কুড়িয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। সেই সঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটির প্রতিটি নেতা যার যার অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আওয়ামীলীগের পাশাপাশি স্থানীয় মহাজোটের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাও আওয়ামীলীগ সহ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। সেক্ষেত্রে মহামারিতে সকলে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করছেন। এমন বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখেছেন মাহফুজুর রহমান কালাম। এমপি উপজেলা আওয়ামীলীগকে মাস্ক প্রদান করেছেন।
সেই বিষয়টি নিয়ে মাহফুজুর রহমান কালামের বক্তব্যের বিষয়ে পাল্টা বক্তব্য দিয়ে নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ। কালামের সমালোচনামুলক বক্তব্যের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ ২১ জুলাই মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ১৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগকে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিতরণে জন্য সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত কেএন-৯৫ মাস্ক প্রদান করেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগ দাবি করে- এর প্রেক্ষিতে ১৫ জুলাই সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম তার বক্তব্যে আওয়ামীলীগকে হেয়প্রতিপন্ন ও তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য রাখেন যা দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
কালামকে উদ্দেশ্যে করে বিবৃতিতে বলা হয়- জনাব কালাম, আপনার কাছ থেকে এ ধরণের দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্য নেতাকর্মীরা আশা করেন নাই। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এ বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের মানুষ যখন দিশেহারা তখন দলীয় নেতাকর্মীরা আপনাকে খুঁজে পায় নাই, কোথায় ছিলেন? মানুষের পাশে দাঁড়াননি। রাজনীতি কি শুধু নিজের ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়া বা নিজের আখের গুছিয়ে অট্টালিকা তৈরি করা? আপনার বক্তব্যর জবাব দিতে আমাদের রুচিতে বাধে তবুও নেতাকর্মীদের চাপে কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি।
কালামকে আরও বলা হয়- আপনি দীর্ঘদিন এমপির চাটুকারিতা করেছেন নিজের সার্থে। ২০১৮ এর ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপির সাথে বিভিন্ন সভা সমাবেশে “লাঙ্গলই নৌকা” বলে বক্তব্য রেখেছেন। ২০১৯ এ উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে বর্তমান সংসদের সমর্থনে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মত পরাজিত হয়েছেন। তখন আপনি আওয়ামীলীগকে জাতীয়পার্টির কোন টিমে পরিনত করেছিলেন। অপরদিকে তৎকালীন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভােকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়ার নেতৃত্বে উপজেলার আওয়ামীলীগ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সহ সকল সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী নৌকা প্রতীকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কারনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। যার প্রেক্ষিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে আপনাকে উপজেলা আওয়মীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। আর এজন্য দলের পদ হারিয়ে আপনার গাঁয়ে এত জ্বালা। নারায়ণগও জেলা আওয়ামীলীগের সভায় সোনারগাঁ উপজেলাধীন জেলা কমিটিতে থাকা সকল সদস্যের দাবীর প্রেক্ষিতে জেলা কমিটির অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মানিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে বিধি মোতাবেক সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। যাহা কেন্দ্র দ্বারা স্বীকৃত। ২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে বাংলাদেশে আলোচিত সেভেন মার্ডারের কারিগর বর্তমানে ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত আসামী নুর হোসেনকে সোনারগাঁ এনে ৩০টি গাড়ীর বহর নিয়ে বিভিন্ন অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত করে বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ও দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেড করা, মারধর করা ও অনেককে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। সেদিনের বিভিষিকা আজ ও সোনারগাঁ এর দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের মনে হলে শিউরে উঠেন। সেদিন আপনার এই সন্ত্রাসের কারনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী পরাজিত হয় বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী। প্রকৃত পক্ষে মাননীয় সাংসদের দেওয়া মাস্ক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে কয়েদীদের তৈরি মাস্ক সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ প্রতিটি ১৫ টাকা করে কিনে এক সাথে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর আওয়ামীলীগের নিকট বিতরণ করা হয়।
আওয়ামীলীগ আরও দাবি করেছে- জাতীয়পার্টিতে যোগদানকারী আওয়ামীলীগের কেউ নয়। সোনারগাঁও উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত কোনও আওয়ামী নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন নাই এবং ভবিষ্যতেও অন্য কোনো দলে যোগদান করার প্রশ্নই ওঠে না। উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ব্যাখ্যা দেওয়ার কোন সুযোগ নাই।
‘আমরা উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মাহফুজুর রহমান কালামের ফেজবুক লাইভে দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ ধরণের অসৌজন্যমূলক ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য এবং আওয়ামীলীগকে জনসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করা থেকে বিরত থাকবেন বলে আশা করি।’