সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হাল ধরেছিলেন জেলা বিএনপির। নেতৃত্ব পাওয়ার পর তৎকালীন জেলা বিএনপির সেক্রেটারি কাজী মনিরুজ্জামান মনির রাজনীতি থেকে নীরব থাকলেও জেলা জুড়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তৈমূর আলম খন্দকার। রাজপথে আন্দোলন করছেন সামনে থেকেই। যার দূরণ বেশকবার পুুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রাজপথে। তেমনি একটি ঘটনা ২০১১ সালের ৬ জুন। যার একটি ঘটনার ৯ বছর পার হয়েছে ইতিমধ্যে। সেদিন এই প্রতিবেদকও প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন ছিলেন। নিউজ কভারেজ করতে সেখানে ছিলেন এই প্রতিবেদক।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ২০১১ সালের ৬ জুন বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি বানিজ্যিক এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তৈমূর আলম খন্দকার। আগের দিন তৎকালীন জেলা যুবদলের সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ও বর্তমান মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ সহ বেশকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিন বিকেলে সমাবেশ শেষে মিছিল করতে গেলে ২নং রেলগেটের সামনে পুুলিশ বক্সের কাছাকাছি আসলে সদর মডেল থানা পুুলিশের তৎকালীন সেকেন্ড অফিসার এসআই আতিয়ার রহমানের হাতে থাকা একটি লাঠির আঘাতের শিকার হন তৈমূর আলম খন্দকার।
আগের দিন ৫জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা হরতাল পালন করতে গেলে তৎকালীন জেলা যুবদলের সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও মহানগর যুবদলের তৎকালীন সেক্রেটারি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ সহ ৯জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ৬জুন বিকেলে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে চারদলীয় জোট আয়োজিত প্রতিবাদ সভা শেষে শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় মিছিল করতে গেলে পুুলিশের বেদম নির্যাতনের শিকার হন নেতাকর্মীরা।
বিকেল ৫টার সময় চারদলীয় জোট এক প্রতিবাদ সভাও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, সহ-সভাপতি বর্তমানে প্রয়াত বদরুজ্জামান খান খসরু, শহর জামায়াত আমির ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসেন, শহর বিএনপির সভাপতি প্রয়াত জাহাঙ্গীর আলম ও তৎকালীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পারভেজ আহমেদ সহ শীর্ষ পর্যায়ের অগনিত নেতাকর্মী। সেই সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিএনপির প্রয়াত নেতা বিল্লাল হোসেন।
সভায় প্রধান অতিথি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, হরতাল জনগণের মৌলিক অধিকার। দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামের পরে এই হরতাল, এই দাবি আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে দেশের আইন দেশের বিচার বিভাগ এর স্বীকৃতি দিয়েেেছ। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই হরতালকে তার দাবি আদায়ের মাধ্যম হিসেবে মনে করে। সে হিসেবে এদেশের ক্রান্তিলগ্নে যখন গণতন্ত্র বহুদলীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় গণতন্ত্র একদলীয় শাসন বাকশাল করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা করেছেন শেখ হাসিনা। তখনই আমাদের দেশনেত্রী এদেশের গণমানুষের নেত্রী এই হরতালের ডাক দিয়েছেন যাতে এই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সারা দিয়েছেন। বন্ধুগণ এই হরতালে দেখেছেন পুলিশ আমাদের উপর কি পরিমান নির্যাতন করেছেন। আমরা বলতে চাই আমরা নির্যাতনের শিকার এবং ভবিষতে যদি আমরা নির্যাতনের শিকার হই কিন্ত বিনা হিসেবে ছেড়ে দিবনা। আমরা রাজপথে আছি আমরা রাজপথে থাকব ইনশাহআল¬াহ।
তিনি আরও বলেছিলেন, আমি বলতে চাই চারদলীয় ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্ভে আমাদের মামুন ও খোরশেদ, রিটন দে, রানা মুজিব, শাহিন, সাইদুর, আল আমিন খান সহ সকল নেতৃবৃন্দকে যদি মুক্তি না দেওয়া হয় তাহলে আমাদের এই টানা কর্মসূচি চলতে থাকবে। আগামীকালও এখানে কর্মসুচি। পরশুও হবে। এর পরদিন ৯ তারিখে মহিলা দলের, ১০ তারিখে শ্রমিকদের, আগামীকাল ৮ তারিখে যুবদল মহানগর যুবদল।
এই কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে তৈমূর আলম তখন বলেন, এরপরেও যদি নেতাকর্মীদের মুক্তি দেওয়া না হয় তাহলে তারপর লাগাতার কর্মসূচি দিব। আমরা কেন্দ্রের কর্মসুচির দিকে চেয়ে থাকবনা। আমাদের নেতাদের রাজপথ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এই নেতাদের জেলে রেখে আমরা বাড়িতে থাকবোনা। আমাদের অবস্থান রাজপথেই থাকবে ইনশাহআল্লাহ।
এরপর তৈমূর আলম খন্দকার স্থানীয় একটি পত্রিকা হাতে নিয়ে বলেছিলেন, আমি আমার বক্তব্য শেষ করার পূর্বে আমি নারায়ণগঞ্জের একটি পত্রিকায় সকালবার্তা পত্রিকার একটি নিউজের দিকে আপনাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই- সেখানে লিখেছে ‘শশুর ক্ষমতাশীন এমপি তাই ওসি আক্তার বেপরোয়া’। এই ওসি সাহেবকে বলতে চাই আপনার বাড়ি হয় গোপালগঞ্জে না হয় সুনামগঞ্জে। কোথাও না কোথাও আপনার পাওয়ার (শক্তি) রয়েছে যার জন্য আপনি এত ক্ষমতা দেখান। আপনার চেয়ে অনেক বড় ক্ষমতাশালীরা এদেশ থেকে চলে গেছে। এ পত্রিকায় বলেছে যে আপনি আমাদের এক নেতার উপর চড়াও হয়েছেন। তার গায়ে হাত তুলেছেন। যদি এর সত্যতা পাই তাহলে আপনার এ বিষয়ে কথা হবে আলোচনা হবে এসপি অথবা আইজির টেবিলে। আপনার হাত কত লম্বা, একজন ওসির হাত কত লম্বা হতে পারে তাই দেখব ইনশাহআল্লাহ।’
তৈমূর আলম খন্দকারের এমন বক্তব্যের সময় বিপুল সংখ্যক পুুলিশ নিয়ে ২নং রেলগেটের সামনে অবস্থান নেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুুলিশের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন।
অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বক্তব্য শেষ করে সমাবেশের সভাপতি প্রয়াত নেতা জাহাঙ্গীর আলম সমাপ্তি ঘোষণার পরেই মিছিল বের করা হয়। মিছিল নিয়ে মাত্র ৫০ গজ দুরে আসলেই পুলিশ উপর্যুপি নেতাকর্মীদের উপর লাঠি চার্জ শুরু করে। এরি মাঝে নেতাকর্মীরা তৈমূর আলমকে ফেলেই দৌড়ে পালিয়ে যায়। একজন কনেস্টবল প্রয়াত এএম বদরুজ্জামান খসরুর পায়ের নিচে লাঠি চার্জ করলে আড়াইহাজারের নেতাকর্মীরা তাকে চারপাশে ঘিরে উদ্ধার নিয়ে সরিয়ে নেন।
এমন পরিস্থিতিতে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে ঘিরে ধরেছেন বিপুল সংখ্যক পুুলিশ। তৈমূর আলম খন্দকারের উপর বেশকটি লাঠিচার্জ করা হয়। ওই সময় তাৎক্ষনিক একজন কনেস্টবল তার পায়ের নিচে লাঠি চার্জ করেন। এরপর সদর থানার সেকেন্ড অফিসার আতিয়ার রহমান মাথা বরাবর তৈমূর আলমকে লাঠি দিয়ে দুহাতে আঘাত করলে সেই আঘাতটি তৈমূর আলম তার হাতে ঠেকানোর চেষ্টা করেন। তিনি ঘুরে গেলেই পিঠে লাঠি চার্জ করেন আতিয়ার রহমান। এমন সময় মহানগর যুবদল নেতা আক্তার হোসেন খোকন শাহ তৈমূর আলম খন্দকার ঝাপটে ধরেন। তার উপর বেশকটি লাঠি চার্জ করে পুুলিশ। দুজনের উপরই লাঠি চার্জ কোথায় কার আঘাত লেগেছে সেটা মুহুর্তের মধ্যেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই খোকন শাহকে চেঙ্গদোলা করে নিয়ে যায় কয়েকজন যুবদল কর্মী। তবে গুলশান সিনেমা হলের সামনেও পুলিশ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মর্গান গার্লস স্কুলের গলিতেও সংঘর্ষ ঘটে।
তবে সেই সমাবেশের তিন জন বিএনপি ইতিমধ্যে পরলোক গমন করেছেন। যারা হলেন ওই সমাবেশের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বিল্লাল হোসেন ও তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি এএম বদরুজ্জামান খান খসরু।