সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
‘ফুটপাত হাটার জন্য তৈরি, ফুটপাত দিয়ে হাটার অধিকার আমার জনগণের অধিকার’ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর এ উক্তিকে ভুতের মুখে রাম নাম বলে আখ্যায়িত করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান টিপু।
তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নিজেই ফুটপাত দখল করে আলী আহম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের ভবন নির্মাণ করেছেন। যে মেয়র নিজেই ফুটপাতের অবৈধ দখলদার তার মুখে এমন কথা শোভা পায় না। এমন কি ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদেরও তার কোন নৈতিক অধিকার নেই।
আবু হাসান টিপু আরও বলেছেন, ‘ভাই-বোন অভিনীত নারায়ণগঞ্জ নাট্যের’ প্রতি জনগণের এখন আর কোন আগ্রহ নেই, তাই এই নাটকে অভিনয় করে সস্তা মারহাবা কুরানোরও অবকাশ নেই।
তিনি বলেন, স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে ৫০ লক্ষ মানুষের এই নারায়ণগঞ্জে ইতোপূর্বে মাত্র ৮৭১ জন হকারকে ‘পূণর্বাসন’ করে হকার উচ্ছেদ কল্পে তিনি যে দম্ভোক্তি করছেন তা অবিবেচনা প্রসুত। কেননা দেশে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি লোক বেকার তার উপরে প্রতিদিন শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে হাজার হাজার মানুষ এই বিশাল জনগোষ্ঠির জন্য সরকারী উদ্যোগে কোন কর্মসংস্থান নেই। এমতাবস্থায় জীবিকার প্রয়োজনেই তারা সহজলভ্য পথ খুঁজে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এ কারণেই প্রতি দিন বাড়ছে হকারের সংখ্যা।
৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান টিপু এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের প্রায় নব্বই ভাগ মানুষই দরিদ্র। এই মানুষগুলোর নিত্য প্রয়োজনীয় প্রণ্যর চাহিদা মিটাচ্ছে হকাররা। নুন আনতে পান্তা ফুরানো অসহায় দরিদ্র মানুষ গুলোর সারা জীবনের সখ আহলাদ মিটানোর, বিলাসী পণ্য কেনার একমাত্র যায়গা হলো এই ফুটপাত। আর এই হতভাগ্য মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ষাট ভাগেরও বেশী। নারায়ণগঞ্জ নাট্যের ভাই কিংবা বোন অথবা তাদের সাথে সংশ্লিষ্টদের মতো এরা নিশ্চয় ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর শপিং করতে যাওয়ার সামর্থ্য রাখেন না। যারা হকার উচ্ছেদ করে মারহাবা কুড়াতে ব্যস্ত তারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন যদি হকারই না থাকে তবে আমার দেশের অর্ধেকের বেশী দরিদ্রসীমার মধ্যে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে কোন বাজারে যাবেন? এই লাখো লাখো মানুষ কি শহরের চকচকে বিপনী বিতানে যাওয়ার সাহস রাখেন?
আবু হাসান টিপু আরও বলেছেন, কর্তা ব্যাক্তিরা শুধু কয়েক হাজার হকারকেই বড় করে দেখছেন, এদের উচ্ছেদই সকল সমস্যার সমাধান মনে করছেন কিন্তু একটু ভাবছেন না, দেশের যে জনগোষ্ঠীর মানুষের চাহিদা এরা পূরণ করে সেই মানুষগুলো যাবে কোথায়? কে দিবে এর উত্তর? লুটেরা ধনিক শ্রেণীর এই পুঁজিবাদী ভন্ড সমাজের এটা গতানুগতিক নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিইবা হতে পারে। নব্য ধনিকরা রঙ্গিন চশমায় যখন তাকান তখন সব কিছুকেই রঙ্গিন দেখতে চান, নিচ তলার খেটে খাওয়া নুন আনতে পান্তা ফুরানো মানুষগুলোকে মনে করে সমাজের উচ্ছিষ্ট। যাদের দিয়ে সমাজ-রাষ্ট্র; যারা গোটা দুনিটাকেই বাঁচিয়ে রাখছে, যারা এই বিশে^র হারাহারি অংশিদার-মালিক; সেই তাদেরই অস্তিত্ত্ব¡ স্বীকার করতে যেন জাত চলে যায়।
তিনি বলেছেন, ফুটপাত দখল মুক্ত করে ফুটপাত দিয়ে জনগণের হাটার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখতে এবং নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির সার্থেই প্রয়োজন কিন্তু তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই কয়েক হাজার হকারকে বেকার করে দেয়ার অমানবিক সিদ্ধান্ত কোনভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য মোক্তার হোসেন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়- গত ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় প্রবাসীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বাসভুমি নামে একটি ফেসবুক পেজের লাইভ আয়োজনে যুক্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী উল্লেখিত মন্তব্যটি করেছিলেন।