সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে কিশোর গ্যাং এর দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ রক্ষার্থে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপিয়ে পরে নিহত দুই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের পর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহত স্কুল ছাত্র জিসানের বাবা কাজিম আহাম্মেদ বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ্য করে অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামী করে বন্দর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে এজাহারভুক্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তারা হলো আলভি (২০), মোক্তার হোসেন (৫৭), আহম্মদ আলী (৪৫), কাশেম (২৮), আনোয়ার হোসেন (৪৫), শিপলু (২৩)।
পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করে।
নিহতরা হলো মিনহাজুল ইসলাম মিহাদ (১৮) বন্দরের কদমরসুল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্র। সে স্থানীয় নাজিমউদ্দিন খানের ছেলে। অপরজন হলো বন্দরের বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র জিসান (১৫)। সে সাংবাদিক কাজিমউদ্দিনের ছেলে।
বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন ভূঁইয়া মামলার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর ফাঁড়ীর পরিদর্শক মাসুদ রানা। মামলার এজাহারভুক্ত ১৩ আসামীর মধ্যে ৬ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যহত রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ইস্পাহানী ঘাট এলাকায় সোমবার ১০ আগষ্ট বিকেলে একরামপুর ইস্পাহানী এলাকার সামাদ সরদারের ছেলে বড় শামীম গ্রুপের সাথে একই এলাকার রবিউল মিয়ার ছেলে অন্তর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় একপক্ষের ধাওয়ায় আত্মরক্ষার্থে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দেয় মিহাদ ও জিসান।
এদিকে মিহাদ ও জিসান নদী থেকে উঠে গেছে এমনটি ভেবে স্থানীয় লোকজন তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি। তবে রাতে তারা বাড়িতে ফিরে না যাওয়ায় স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করলে জানতে পারে সংঘর্ষ ও ধাওয়ার ঘটনায় তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল। এসময় তাদের খোঁজে শীতলক্ষ্যার তীরে বাড়তে শুরু করে জনসমাগম। রাত সাড়ে ১০টায় স্থানীয় জেলেদের সহযোগিতায় বন্দর থানা পুলিশ শীতলক্ষা নদী থেকে ওই দুই শিক্ষার্থী লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী কাজিম আহাম্মেদ জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আমার স্কুল পড়–ুয়া ছেলে জিসানকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য শীতলক্ষা নদীতে ফেলে দেয় বন্দর ৩৫নং উইসন রোড এলাকার আলফাজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে মোক্তার হোসেন, একই এলাকার মৃত সাবেদ আলী মিয়ার ছেলে আহাম্মদ আলী ও তার ছেলে কাশেম, একই এলাকার মহর আলী মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন, একই এলাকার নলু মিয়ার ছেলে শিপলু ও ঢাকা ডিএমপি বাড্ডা এলাকার গোলাম মাবুদ মিয়ার ছেলে আলভীসহ আরো অজ্ঞাত ৭/৮ জন সন্ত্রাসী। আমি আমার একমাত্র সন্তান হারিয়ে নিঃশ্ব হয়ে পরেছি। আমি আমার ছেলের হত্যাকারিদের দ্রুত বিচার দাবি জানাচ্ছে।
নিহত দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে জিসানের নামাজের জানাযা ১১ আগষ্ট মঙ্গলবার বাদ আসর নবীগঞ্জ বাগবাড়ী এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়। পরে ওই দিন বাদ মাগরিব নিহত কলেজ ছাত্র মিহাদ ও তার বন্ধু স্কুল ছাত্র জিসানের জানাযা বন্দর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হওযার পর বন্দর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে এক সাথে দুই বন্ধুর লাশ দাফন সম্পন্ন করে নিহতের আত্মীয় স্বজনরা।
উল্লেখ্য, রাতে তারা বাড়িতে ফিরে না যাওয়ায় স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করলে জানতে পারে সংঘর্ষ ও ধাওয়ার ঘটনায় তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল। এসময় তাদের খোঁজে শীতলক্ষ্যার তীরে বাড়তে শুরু করে জনসমাগম। রাত সাড়ে ১০টায় এলাকাবাসী সহযোগিতায় শীতলক্ষা নদী থেকে ওই দুইটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।