সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিকে সারাদেশের মডেল হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, আমি বিএনপির রাজনীতিকে রাজনীতিকরণ করতে চাই। নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে রাজনীতির মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যেখানে কোন তদবিরে কারো পদ বা কমিটি হবেনা। কারো কোন তদবির চলবে না। আমার নিজেরও কোন পছন্দ থাকবে না। যে ওয়ার্ডে কমিটি হবে সেই ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের পছন্দে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। যে ইউনিয়নে কিংবা থানা পৌরসভায় কমিটি হবে সেখানকার নেতাদের পছন্দে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। কারো তদবিরে কিংবা বিশেষ সুবিধায় কমিটি হবে না। কাউকে হাতে ধরে নেতা বানাবো না। যার যার যোগ্যতায় এবং কর্মীদের ভালবাসায় পাড়লে নেতা হোন।
তিনি বর্তমানে বিএনপির সাংগঠনিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এখন নারায়ণগঞ্জে নমিনেশন ও কমিটি ছাড়া কোন রাজনীতি নাই। সেখানেও দুই নম্বরী হয়। তদবিরে পদ পাইয়া বাকি পদগুলো বিক্রি শুরু হয়। আমি পুলিশের মাইর খাইছি, গুলি খাইছি, তবুও রাজপথ ছাড়িনি, কোন মিটিং মিছিলের ব্যানার ছেড়ে যাইনি। অথচ এখন নাকি চাষাড়ার বালুর মাঠের চিপায় দুই মিনিটের সমাবেশ করা হয় যা মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। আমি এসব সমালোচনা করতে চাইনা।
২৩ আগস্ট রবিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর ১৩নং ওয়ার্ডের মাসদাইরে তৈমূর আলম খন্দকারের নিজ বাসভবন মজলুম মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাত ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ওই সময় তিনি এসব কথা বলেন।
এরপর তৈমূর আলম খন্দকার নেতাকর্মীদের জানান, আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতিটি ইউনিয়নের নেতারা বৃক্ষরোপণ করবেন। একইদিন মজলুম মিলনায়তনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
তবে তিনি এও জানান যদি কেন্দ্রীয় বিএনপি র্যালী করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির দশ হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি র্যালী করবেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ভবনের সামনে থেকে তিনি দশ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে চাষাড়া পর্যন্ত র্যালী করে আসবেন বলেও জানান। এসব কর্মসূচিগুলোতে অবশ্যই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এবং প্রতিটি নেতাকর্মীকে অবশ্যই মাস্ক পড়ে আসার কথা জানান তিনি।
এর আগে নেতাকর্মীরা তাদের বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্বকেই নারায়ণগঞ্জে বিএনপির যোগ্য নেতৃত্ব বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন- সামনের আন্দোলন সংগ্রামে তৈমূর আলম খন্দকারের নির্দেশনায় ও নেতৃত্বে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়বেন নেতাকর্মীরা। এ কারনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকেই দায়িত্ব দেয়ার জন্য জোর দাবি জানান ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তবে বিএনপির নেতাকর্মীদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা আমাকে বলেছেন নারায়ণগঞ্জে বিএনপির দায়িত্ব নিতে। কিন্তু আমি তাদেরকে বলেছি যে, কেউ একবার বিএ পাশ করলে আবার বিএ পাশ করার তার দরকার পড়েনা। আমি তো একবার দায়িত্বে ছিলাম, আবার কেন একই দায়িত্ব নিব? তবে আমি নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
সভার সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম বলেন, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে অতীতে ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতাকর্মী ছাড়াও কোন সমাবেশ সফল হতে পারেনি। আপনি তৈমূর আলম খন্দকার জেলা বিএনপির দায়িত্ব পেলে আপনার প্রতিটি সমাবেশে ফতুল্লা থানার ৫টি ইউনিয়ন থেকে ৫ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে আমরা যোগদান করবো। আপনি দায়িত্ব নিয়ে আসেন আমরা আপনার সঙ্গে আপনার নেতৃত্বে রাজনীতি করবো।
এতে প্রধান অতিথি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও সভার সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন- মহানগর বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলীউদ্দীন খন্দকার শিপন, সেক্রেটারি মইনুল হাসান রতন, বক্তাবলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকবর আলী সুমন, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আল আমিন সিদ্দিকী, এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মোতাহার হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, জেলা মহিলা দলের সেক্রেটারি রহিমা শরীফ মায়া, জেলা শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দীন, জেলা মৎস্যজীবী দলের সাবেক আহ্বায়ক গিয়াসউদ্দীন প্রধান, ফতুল্লা থানা শ্রমিকদলের সেক্রেটারি তুষার আহম্মেদ মিঠু, মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান, জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, বন্দর থানা মহিলা দলের সভাপতি নাজমা বেগম, ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা লোকমান হোসেন, বাবুল আহমেদ, নূর হোসেন ও পরিবহন শ্রমিকদল নেতা জামাল সর্দার প্রমূখ।
সভার শুরুতে নেতাকর্মীরা তৈমূর আলম খন্দকারকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যোগ্য নেতৃত্ব দাবি করে বক্তব্য রাখেন এবং সেই সঙ্গে হামলা মামলা জেল জুলুমের সময় তৈমূর আলম খন্দকারকেই পাশে পাওয়া যায় বলেও নেতাকর্মীরা জানান।
নেতাকর্মীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, তৈমূর আলম খন্দকারের হাতে নেতৃত্ব দেয়া হলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি শক্তিশালী হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অগ্রণী ভুমিকা দল রাখতে পারবে। সাংগঠনিকভাবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি শক্তিশালী হবে। যারা ঢিলা পাঞ্জাবী পড়েন এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিস্যূ দিয়ে হাত মুছেন এমন লোকদের হাতে বিএনপির নেতৃত্ব মানায় না। আজকে শিডিউল ছাড়া তৈমূর আলম খন্দকারের ফোনের মাধ্যমে এই মতবিনিময় সভায় ফতুল্লা থানা বিএনপির রাজপথে অধিকাংশ নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে গেছেন। এতেই প্রমানিত হয় তৈমূর আলম খন্দকার কতটা যোগ্য।
বেশকজন নেতা বলেন, তৈমূর আলম খন্দকার টাকা দিয়ে কমিটি কিংবা পদ আনার নেতা নন। যারা অযোগ্য বাটপার তারাই টাকার বিনিময়ে কমিটি এনে পদ বিক্রি করে ব্যবসা করে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে আবার টাকাওয়ালাদের দলে এনে বিএনপিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এমন দুঃসময়ে তৈমূর আলম খন্দকারের মত নেতৃত্ব প্রয়োজন।